২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৪৩:৩৭ পূর্বাহ্ন


স্বাধীন স্বনির্ভর জ্বালানি নীতি জরুরি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
স্বাধীন স্বনির্ভর জ্বালানি নীতি জরুরি


পলিসি প্রণয়নকারীরা স্বীকার করুক, নাই-বা করুন, সুধীজন জানেন বাংলাদেশের জ্বালানি নীতি বা কৌশল স্বাধীন চিন্তার ফসল নয়। বাংলাদেশ আজ মানববন্ধুর স্বনির্ভর জ্বালানি দর্শন থেকে বহুদূরে। অনেকেই বলবেন, বাংলাদেশের জ্বালানি কৌশল অনেকটাই প্রতিবেশী প্রভাবিত। না হলে কেন সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড গন্ডোয়ানা বেসিন থেকে কয়লা উঠিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও পাঁচটি আবিষ্কৃত উন্নতমানের কয়লা ক্ষেত্রের সম্পদ নিয়ে সিদ্ধান্তহীন বাংলাদেশ? 

কেন সাগরসীমায় গ্যাস-তেল প্রাপ্তির ওপর সম্ভাবনা নিয়ে বসে আছে? কেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস-তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকলেও অনুসন্ধান হচ্ছে না? কেন ভুটান, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ কাগুজে আলাপে সীমাবদ্ধ? বাংলাদেশকে কেন আদানি গ্রুপের আমদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে ঝাড়খন্ডে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একপেশে চুক্তির অধীনে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে? 

এগুলো প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করলেই জবাব মিলবে এক ধরনের জ্বালানি মাফিয়া সিন্ডিকেট চায় বাংলাদেশের জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণভাবে বিদেশনির্ভর। খাঁটি কথায় প্রতিবেশী দেশনির্ভর হয়ে যাক। 

বঙ্গবন্ধু কিন্তু স্বনির্ভর জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত গড়ে তোলার জন্য বিওজিএমসি (পরবর্তীতে বিওজিসি), বিএমডিসি, বিপিডিবি গড়ে তুলেছিলেন। এখন বিএমডিসি অস্তিত্বহীন, নামমাত্র আছে আমলা নিয়ন্ত্রিত দুর্বল পেট্রোবাংলা। বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর। বিশাল সাগরের গ্যাস অনুসন্ধান স্থবির। বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে, অচিরে শুরু হবে তরল জ্বালানি আমদানি। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সবেধন নীলমনি ইস্টার্ন রিফাইনারি ক্ষমতা বাড়েনি বা দ্বিতীয় রিফাইনারি স্থাপন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে যোজন যোজন দূরে বাংলাদেশ। সেদিন হয়তো দূরে নয় যে, অচিরেই হয়তো ভারত থেকে গ্যাস আমদানি করবে বাংলাদেশ। 

আমরা যখন ১৯৯০ বা ২০০০ দশকে জ্বালানি সেক্টরে কাজ করেছি অন্তত প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে ছিল। ভারত বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানিতে আগ্রহী ছিল। মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস আমদানি করতে চেয়েছিলো। ভারতের টাটা কোম্পানি বাংলাদেশে ইস্পাত কারখানা, বিদ্যুৎ, সারকারখানা করতে উদ্যোগী ছিল। ওরা বড়পুকুরিয়া বা ফুলবাড়ী কয়লাখনি চেয়েছিল। বলা বাহুল্য, কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি। বরং অনেকের মতে, ষড়যন্ত্র করে কয়লা উত্তোলন স্থগিত আছে বড়পুকুরিয়া ছাড়া সব কয়লাখনিতে। নিজেদের গ্যাসসম্পদ উন্নয়নে শামুক গতি। অথচ অতিপ্রয়োজনীয় জ্বালানি এখন আমদানিকৃত জ্বালানির মরীচিকার পেছনে ছুটছে বাংলাদেশ। 

ফলে সব দিক বিবেচনা করলে যেটা অতীব জরুরি সেটা হলো, অচিরেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু দর্শনের ভিত্তিতে স্বনির্ভর জ্বালানি নীতি প্রণয়ন না করলে কখনোই বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করবে না। এতে করে দুরূহ হয়ে যাবে ভিশন ২০৪১ অর্জন।

শেয়ার করুন