০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৬:৪১ অপরাহ্ন


নিউইয়র্কের ঘটনা ঝুঁকির মুখে ফেলে দিলো আ’লীগকে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২৫
নিউইয়র্কের ঘটনা ঝুঁকির মুখে ফেলে দিলো আ’লীগকে নিউইয়র্কে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের গায়ে ডিম নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টার আগমন সামনে রেখে নিউইয়র্কে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশ, পাল্টাপাল্টি শ্লোগান দেয়। এনিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এধরনের কর্মসূচি দিয়ে তার সুফল কতটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিতে পারবেন, তা নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারো কারো মতে, প্রধান উপদেষ্টার আগমন সামনে রেখে নিউইয়র্কে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশ, পাল্টাপাল্টি শ্লেগান কর্মসূচির নেতিবাচক দিকই বেশি। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের এধরনের কর্মসূচি থেকে জনপ্রিয় দাবিদার বিএনপি’র ওপর আঘাত মোকাবিলায় ব্যর্থতা অনেকে দলটির প্রকৃত সাংগঠনিক শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 

কি ঘটে গেলো

বিভিন্ন গণমাধ্যমর খবরে দেখা গেছে, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট জনএফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনালে অবতরণ করে। এ সময় ৮ নম্বর টার্মিনালের পার্কিং লটে প্রচুর সংখ্যক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা টার্মিনাল থেকে বর হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারে। এ ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পাশাপাশি অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ অভিযোগে মিজানুর রহমান চৌধুরী নামের একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় সময় ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া খবরে বলা হয় আরও বেশ কয়েকজনকে পুলিশ খুঁজছে। 

ঘটনার প্রতিবাদে কে কি বললেন

এর হামলার পর আখতার হোসেন বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা ভয় পাইনি, সেখানে কারও ভাঙা ডিমে আমাদের যায় আসে না।আমরা কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করিনি, করবো না। হাসিনার বিচার বাংলার মাটিতেই হবে, ইনশাআল্লাহ।'

যুক্তরাষ্ট্রে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব ও সিনিয়র সাংবাদিক মারুফ কামাল খান। পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েও বিদেশে আশ্রিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য আখতারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তাকে এ ধন্যবাদ জানান। মারুফ কামাল খান বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যাওয়া বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ওপর ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত আওয়ামী লীগের লোকেরা শারীরিকভাবে হামলার চেষ্টা করেছে। এনসিপির নেতা আখতার হোসেনের পিঠে পেছন থেকে ডিম ছুঁড়ে মেরেছে তারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে নেমে তারা গাড়ির দিকে যাবার পথে এসব ঘটনা ঘটে। লীগের লোকেরা তাদের দিকে তেড়ে যায় এবং গালাগালি করে। 

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি আখতারের ওপর হামলা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেন, হাসিনার পুলিশ লীগ, কোট-কাচারিও আখতারকে দমন করতে পারেনি। আর এসব উচ্ছিষ্ট, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত দালালরা বিদেশে বসে প্রতিবাদের প্রতীক আখতারকে দমন করতে পারবে?

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা দেশ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। বিদেশে পালিয়েও তাদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। নিজের ফেসবুক আইডিতে নিউইয়র্কে আখতার হোসেনের ওপর হামলার ভিডিও পোস্ট করে তার ক্যাপশনে তিনি এ কথা লিখেন।

যুক্তরাষ্ট্রে আখতার হোসেনের ওপর হামলা হয়েছে। এটি ব্যক্তি আখতার হোসেনের ওপর আক্রমণ নয়, তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে করা হয়েছে। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। তিনি লিখেছেন, ‘আজ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর আমাদের দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর হামলা হয়েছে। তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়েছে, গালিগালাজ করা হয়েছে। এটি ব্যক্তি আখতার হোসেনের ওপর আক্রমণ নয়, তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে করা হয়েছে। কারণ, তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন সেই দলকে, যে দল ফ্যাসিবাদের কাঠামো ভেঙে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় রীতিমত ক্ষোভে ফেটে পড়েন এনসিপির সাবেক নেত্রী নীলা ইস্রাফিল। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি কি করেছে? 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টার আগমন সামনে রেখে নিউইয়র্কে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশ, পাল্টাপাল্টি শ্লোগানর কর্মসূচি ও ডিম মারা এবং গ্রেফতাদেরর ঘটনা নিয়ে নানান হিসাব নিকাশ হচ্ছে। এখানে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা সেখানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বেশ নিরাপদে বিক্ষোভ সমাবেশ পাশ কাটিয়ে অবস্থান করেছেন। শোনা যায়, জামায়াত-শিবিরের একটি শক্তিশালী কর্মীবাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে নিরাপদে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু নিউইয়র্কেরর মাটিতে অনেক জনপ্রিয় নেতাকর্মীরা থাকলে কি করে গালমন্দ হজম করতে হয়েছে একজন স্বজ্জন রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নিউইয়র্কের মাটিতে আসলেই কি বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের অস্তিত্ব আছে? না-কি সেখানে তারা লোক দেখানো বিএনপি করে? তা না হলে হাজার হাজার কর্মী বাহিনী নিয়ে সেখানে কোনো তারা অবস্থান নিতে পারলো না? তাহলে কি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সেখানে নতুন নতুন কমিটি বাণিজ্যে ব্যস্ত। 

কী লাভ হবে আওয়ামী লীগের?

প্রধান উপদেষ্টার আগমন সামনে রেখে নিউইয়র্কে সমাবেশ, পাল্টাপাল্টি শ্লোগানের কর্মসূচি ও ডিম মারা এবং গ্রেফতারের ঘটনায় আওয়ামী লীগের কি লাভ হবে? বাংলাদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের মতে নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সমাবেশ, পাল্টাপাল্টি শ্লোগানর কর্মসূচি ও ডিম মারা এবং গ্রেফতাদেরর ঘটনা তাদের জন্য ক্ষতি করবে। দেশ থেকে কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে অবস্থানকারীদের এমন আয়েসী কর্মকান্ডে বাংলাদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্র্র্মীরাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। দেশে হয়তবা এখন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ধরপাকড় মামলা মোকাদ্দমার বেশি শিকার হবেন। এর পাশাপাশি তারা মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কেননা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সবাই জানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আসলে কে এবং তিনি কোন ধরনের সমর্থন পচ্ছেন আমেরিকা থেকে? আমেরিকা তাকে এখন পর্যন্ত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কি চোখে দেখে? ফলে আমেরিকার মাটিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এধরনের কর্মসূচি তারা ভালোভাবেই নেবে না তার আন্তর্জাতিক ইমেজের কারণে। আর একারণে দেথা গেছে মিজানুর রহমান চৌধুরী নামের একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করা হয়ে বেশ দ্রুত। অন্যদিকে বেশ কয়েকজনকে পুলিশ খুঁজছে। তাদের বাড়িতেও তল্লশি চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তা-ই আমেরিকার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অদূর ভবিষ্যতে বিষয়টি সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য যে সুখকর হবে না তা সহজেই বোধগম্য।

শেয়ার করুন