তানজিয়া জামান মিথিলা
মিস ইউনিভার্সের ঝলমলে মঞ্চ থেকে মাত্রই ফিরেছেন তানজিয়া জামান মিথিলা; বাংলাদেশকে যিনি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন বিশ্বের সামনে। মুকুট না জিতলেও সেরা ৩০, পিপলস চয়েজে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স এবং ক্লোজডোর ইন্টারভিউতে বিশ্বের ১২১ জন প্রতিযোগীর মধ্যে পঞ্চম হওয়া সব মিলিয়ে তার যাত্রা ছিল অসাধারণ। থাইল্যান্ডে ১৯ দিনের কঠিন ক্যাম্প শেষে তিনি ফিরে এসেছেন নতুন স্বপ্ন নিয়ে এবার নিয়মিত অভিনয়ে মন দেবেন। সেই পথচলার শুরুতে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তার অভিজ্ঞতা, অনুভূতি আর আগামীর পরিকল্পনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: মিথিলা, প্রথমেই অভিনন্দন। যদিও মুকুট জিততে পারেননি, তবুও বাংলাদেশকে দারুণভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এখন কেমন লাগছে?
মিথিলা: ধন্যবাদ। সত্যি বলতে, আমি খুব শান্তিতে আছি। মুকুট না পেলেও দর্শকের ভালোবাসা আমাকে ভরিয়ে দিয়েছে। পিপলস চয়েজে ভালো করেছি, সেরা ৩০ ঢুকেছি এগুলো আমার জন্য বিশাল পাওয়া। ক্লোজডোর ইন্টারভিউতে ১২১ দেশের মধ্যে পাঁচ নম্বরে ছিলাম এটা তো আমার নিজেরও বিশ্বাস করতে সময় লেগেছে। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমার কাছে আসল জয়।
প্রশ্ন: প্রতিযোগিতার পর দুদিন আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কোথায় ছিলেন?
মিথিলা: (হাসি) ঘুমাচ্ছিলাম! ১৯ দিন প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমে চলেছি। ইভেন্ট, রিহার্সাল, প্রস্তুতি সব মিলিয়ে শরীরটা বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই শেষ দুই দিন টানা ১৬ ঘণ্টা করে ঘুমিয়েছি। ফোনও দেখা হয়নি।
প্রশ্ন: ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ডে আপনার জামদানি শাড়ি আর শাপলা ফুল দারুণ প্রশংসা পেয়েছে। কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
মিথিলা: অবিশ্বাস্য! এত মানুষ আমার লুক দেখে মেসেজ করেছে। মঞ্চে হাঁটার সময় দেখেছি দর্শকের চোখ থমকে আছে। আমি ভেবেছিলাম, বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে যদি অন্তত কয়েকজনের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাহলেই সার্থক। কিন্তু সেটা যে এত ভালো প্রতিক্রিয়া পাবে, ভাবিনি।
প্রশ্ন: ক্লোজডোর ইন্টারভিউতে এত ভালো করলেন কীভাবে? ফাতিমাকেও তো পেছনে ফেলেছিলেন!
মিথিলা: আমি খুব প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। নিজের পরিচয়, দেশের গল্প, কাজ সবকিছু পরিষ্কারভাবে সাজানো ছিল। ওরা আমার আত্মবিশ্বাস আর স্বতঃস্ফূর্ততা পছন্দ করেছে। ফাতিমা অসাধারণ, তাই তাকে পেছনে ফেলতে পারা আমার কাছে তখনই বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: পুরো ক্যাম্প সবচেয়ে বেশি কী বদলে দিয়েছে আপনাকে?
মিথিলা: সময় ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা, যোগাযোগ দক্ষতা। আর নিজেকে উপস্থাপন করার যে কৌশল এটা একেবারেই নতুনভাবে শিখেছি। সিস্টারহুডটাও আমাকে অনেক বদলে দিয়েছে। এত দেশের মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব এটা সত্যিই অন্য রকম অভিজ্ঞতা। বলতে দ্বিধা নেই, মিস ইউনিভার্স আমাকে নতুন একজন মানুষ বানিয়েছে।
প্রশ্ন: পুরো আয়োজনজুড়ে তো ছিল নানা বিতর্ক বিচারকের পদত্যাগ, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন, এগুলো আপনাকে কতটা প্রভাবিত করেছে?
মিথিলা: প্রতিযোগীদের মধ্যে চাপ তো তৈরি হয়েছিলই। আলোচনা, গুঞ্জন সবই ছিল। কিন্তু আমি নিজের যাত্রায় ফোকাস করার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত এসব পেরিয়েই ফাতিমা জয়ী হয়েছে, এটাই তো মঞ্চের সৌন্দর্য।
প্রশ্ন: ফাতিমার সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল?
মিথিলা: খুবই ভালো। সে ভীষণ ভদ্র, পরিশ্রমী এবং সংবেদনশীল। ও যে অপমানিত হয়েছিল, সেটা আমাদের সবাইকে দুঃখ দিয়েছিল। কিন্তু সে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে-এটাই তো আসল বিজয়ীর পরিচয়।
প্রশ্ন: এবার আসি আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় শুনছি, নিয়মিত অভিনয়ে মন দিচ্ছেন?
মিথিলা: হ্যাঁ। আমি দেশে ফেরার আগেই ভেবে ফেলেছি এবার সিরিয়াসলি সিনেমায় কাজ করতে চাই। অনেক দিন ধরেই অফার পাচ্ছিলাম, কিন্তু ভুল প্রজেক্ট দিয়ে শুরু করতে চাইনি। আমার প্রথম বাংলা সিনেমা এটা আমার কাছে খুব আবেগের জায়গা। ভালো গল্প, ভালো দল এসব না হলে আমি হ্যাঁ বলব না।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত একটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করেছেন ‘রোহিঙ্গা’। সেই অভিজ্ঞতা কি সিনেমায় নিয়মিত হওয়ার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে?
মিথিলা: অবশ্যই। ‘রোহিঙ্গা’ আমাকে সিনেমার প্রতি গভীর টান তৈরি করেছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, চরিত্রে ডুবে থাকা এগুলো আমাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার বদলে আরও টেনে নিয়ে গেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য কিছু বলতে চান?
মিথিলা: ওরা না থাকলে আমি আজ এইভাবে কথা বলতে পারতাম না। মানুষ আমাকে এমনভাবে ভালোবেসেছে এটাই আমার আসল মুকুট। আগামী দিনে পর্দায় যখন আসব, তাদের গর্বিত করতে চাই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বড় পর্দায় আপনাকে কবে দেখব?
মিথিলা: (হাসি) খুব শিগগিরই। গল্প পছন্দ হলে ঘোষণা দিয়ে দেব। কারণ আমার গল্পটা তো এখনও শুরু হচ্ছে।