২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৫৬:০৯ পূর্বাহ্ন


ভুয়া ড্রাইভার লাইসেন্স, পাসপোর্ট, গ্রিনকার্ড ও পরিচয়পত্র বিক্রির অভিযোগ
বাংলাদেশি আইটি ব্যবসায়ী জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
বাংলাদেশি আইটি ব্যবসায়ী জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা সাইটগুলোতে এখন ভিজিট করলে দর্শকরা ‘সাইটটি ফেডারেল কর্তৃপক্ষের দ্বারা জব্দ করা হয়েছে’ বার্তা দেখেন


অভিনব কায়দায় অনলাইন মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভুয়া ড্রাইভার লাইসেন্স, ইউএস পাসপোর্ট, গ্রীন কার্ড এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড বিক্রির অভিযোগে ঢাকায় ২৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি আইটি ব্যবসায়ী জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব মন্টানাতে অভিযোগ দায়ের করেছে যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগ। অনলাইনে জালিয়াতি ও ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কঠোর অভিযানের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতারের পর জাহিদের জালিয়াতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচয় জালিয়াতি চক্রের বিস্তার ও সাইবার অপরাধের ঝুঁকি নতুন করে সামনে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব মন্টানা ১৮ ডিসেম্বর আদালতে ৯টি ধারার অভিযোগে জাহিদ হাসানকে অনলাইন মার্কেটপ্লেস পরিচালনার মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয়পত্র বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। ইউএস অ্যাটর্নি কার্ট আলমে এই তথ্য জানান। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র্র সরকারের পক্ষ থেকে পরিচয়পত্রের নকল বিক্রিতে ব্যবহৃত তিনটি অনলাইন ডোমেইন জব্দ করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, জাহিদ হাসানকে ছয়টি মিথ্যা পরিচয়পত্র হস্তান্তরের অভিযোগ, দুটি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ এবং একটি সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিথ্যা পরিচয়পত্র হস্তান্তর বা ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারের প্রতিটি ধারায় সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ড এবং আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড জালিয়াতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা ধার্য হতে পারে।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জাহিদ হাসান বাংলাদেশে অবস্থান করে “TechTreek” (টেকট্রিক) এবং “EGiftCardStoreBD” (ই-গিফটকার্ডস্টোরবিডি) নামে একাধিক অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। এ ওয়েবসাইটগুলোতে ভুয়া পরিচয়পত্রের ডিজিটাল কপি বিক্রি করা হতো, যার মধ্যে ছিল ইউএস পাসপোর্ট, ইউএস সামাজিক সিকিউরিটি কার্ড এবং মন্টানা ড্রাইভার লাইসেন্স। এ নকল পরিচয়পত্রগুলো মূলত ব্যাংক, অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল কারেন্সি প্ল্যাটফর্মে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত হতো।

প্রতিটি নকল ডকুমেন্টের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। মূলত ‘ডলার স্টোর’-এর পণ্যের মতো স্বল্পমূল্যের ছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, একটি ইউএস পাসপোর্টের ডিজিটাল টেমপ্লেটের দাম ছিল ১২ ডলার, ইউএস সামাজিক সিকিউরিটি কার্ড ৯ দশমিক ৩৭ ডলার এবং মন্টানা ড্রাইভার লাইসেন্স ১৪ দশমিক শূন্য ৫ ডলার। চার বছরের মধ্যে জাহিদ হাসান তার টেকট্রিক প্ল্যাটফর্ম থেকে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে ২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ উপার্জন করেন।

গত ১৩ মে বোজম্যান, মন্টানা থেকে একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন করার পর জাহিদ হাসান ওই ব্যক্তিকে ভুয়া ইউএস পাসপোর্ট, সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড এবং মন্টানা ড্রাইভার লাইসেন্সের ডিজিটাল টেমপ্লেট সরবরাহ বা সরবরাহের চেষ্টা করেন।

জাহিদ হাসানের অনলাইন ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত তিনটি ডোমেইনও জব্দ করা হয়েছে- www.techtreek.com, www.egiftcardstorebd.com, www.idtempl.com. এ সাইটগুলোতে এখন ভিজিট করলে দর্শকরা সাইটটি ফেডারেল কর্তৃপক্ষের দ্বারা জব্দ করা হয়েছে বার্তা দেখেন। মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি বেনজামিন হারগ্রোভ পরিচালনা করছেন। তদন্ত পরিচালনা করেছে এফবিআইয়ের বিলিংস ডিভিশন এবং সল্ট লেক সিটি সাইবার টাস্ক ফোর্স, যা এফবিআইয়ের আন্তর্জাতিক অপারেশন ডিভিশন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রাটেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে সমন্বিতভাবে করা হয়েছে।

শেয়ার করুন