০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১০:৩৩:২২ অপরাহ্ন


দেশকে রুহিন হোসেন প্রিন্স
আসলে মানুষ মোটেই ভালো নেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
আসলে মানুষ মোটেই ভালো নেই রুহিন হোসেন প্রিন্স


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, আসলে মানুষ মোটেই ভালো নেই। সরকার সে নীতিতে অর্থনীতি পরিচালিত করছে, তা একটি ভুল নীতি। এবং মুক্তিযুদ্ধের ধারা বিরোধী। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

দেশ: দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যে চিত্র আপনারা তুলে ধরছেন তা কতটা বাস্তব? কতটা রাজনৈতিক। আপনি দেশের মানুষের মধ্যে কি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেরও বেনিফিট নেয়ার আনন্দ বা আগ্রহ দেখেন না? আপনি কি মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর আঘাত আসন্ন?

রুহিন হোসেন প্রিন্স : আপনি যে প্রশ্নটা করলেন তার বাস্তব অবস্থাটা দেখবেন গ্রামে-গঞ্জে গেলে। শহরে বসে এসব দেখবেন না। প্রথম কথা হচ্ছে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এটার জানার জন্য বেশি বুদ্ধির দরকার নেই। বাজারে গেলেই হবে..। মুদ্রাস্ফীতির হার দেখলেই বোঝা যাবে। কেননা একদিকে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এবং অযৌক্তিভাবেই বাড়ছে। তখনতো বলা যায় মানুষের অবস্থা ভালো নেই। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে জনগণের অবস্থা আসলেই ভালো নেই। আমি একটা কথা বারবার বলতে চাই যে সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে মানুষের মুখ হাসি আছে। 

দেশ: হ্যাঁ বলা হচ্ছে যে জনগণের তো ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে...

রুহিন হোসেন প্রিন্স: এব্যাপারে দু’টো বথা বলি। সরকারি তথ্যই বলছে আমাদের দেশের চার কোটি উপরে মানুষ দরিদ্র সীমার মধ্যে আছে। অনেক বেশি মানুষ অপুস্টিতে আছে। সুতরাং এটা তাদের বেঁচে থাকা বোঝায় না কিন্তু। দ্বিতীয় আমাদের দেশের গরিব মানুষ না খেয়ে থাকলেও তাদের জিজ্ঞাসা করুন তারা হেসেই হেসেই বলবে..‘ভালো আছি’। সুতরাং এমন ধরনের উত্তরের মধ্যে বোঝা যায় না যে তারা আসলে ভালো আছে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ কম খেয়ে কিভাবে বেঁচে থাকা যায় সেটি আবিষ্কার করেছে। জিজ্ঞেস করুন কিছু খেয়েছেন? বলবে হ্যাঁ পানি খেয়েছি। এটাকে কিন্তু খাওয়া বলে না। আসলে মানুষ মোটেই ভালো না। এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। সরকার সে নীতিতে অর্থনীতি পরিচালিত করছে, তা একটি ভুল পদ্ধতি। এবং এটা একটা মুক্তিযুদ্ধের ধারা বিরোধী। নয়া উদারনীতি অর্থনীতির নামে লুটপাটের অর্থনীতি চলছে। আমরা বলেছি উন্নয়ন হতে হবে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীর উন্নয়ন না। সামাজিক উন্নয়ন হতে হবে। পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন। কিন্তু তা-তো হচ্ছে না। আর সেজন্যই সঙ্কট। আরেকটি ইন্ডিকেটর..। আমাদের দেশের সরকারের ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এখন সবচেয়ে বড়ো আশঙ্কাজনক হচ্ছে এসব ঋণ আবার শোধ করতে বড়ো ধরনের ঋণ নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে খারাপ অবস্থাতো আর হতে পারে না। তাই বলবো অবস্থা ভালো হওয়ার কোনো আলামত আমরা দেখছি না। মানুষের ভালো থাকারও কোনো অবস্থা দেখছি না। 

দেশ: আপনি যে আশঙ্কার কথা বললেন বা করছেন তা-কি সরকারের আশেপাশে কেউ নেই বিষয়টি বোঝার। বড় বড় অর্থনীতিবিদরা কি বোঝে না? আপনারাই কি সব বোঝেন? 

রুহিন হোসেন প্রিন্স: তা বুঝলেও বা কি হবে? তাদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এমন হচ্ছে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া কিছুই হবে না। আমাদের অর্থনীীতবিদদের মধ্যে অনেক ভালো মানুষ আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উনারা প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যেই অর্থনৈতিক সঙ্কটের সমাধান করতে চান। আসলে তাদেরতো করার কিছুই নেই। রাষ্ট্র ও তার বাহাদুর কি সমাধান চায় তার মধ্যেই তা করতে হবে। আর পরিবর্তন না করে জণবান্ধন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তলতে হবে। ধরেন সরকারের পলিসি যদি থাকে মেঘা পলিসি..থাকে যদি প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি..যদি থাকে যারা লুটেরা তাদের সহায়তা করা..। তাহলে অর্থনীতিবিদরাতো সেভাবেই অঙ্ক কষে দেবে। কিন্তু ধরেন একটা প্রগতিশীল সরকার থাকে। তখন আমরা বলতাম অনুৎপাদন খাতে ব্যায় কমাও। গ্রামের জনগণের উন্নয়নের কাজটা তরান্বিত করো। আগে গরিবদের উন্নয়ন কি হবে তা চিন্তা কর। শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিভাবে হবে তার চিন্তা করো। তারপরে মেঘা প্রজেক্টে যাও। তাহলে এই অর্থনীতিবিদরাও এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেবে, সেভাবেই অর্থনীতিকে পরিাচালিত করবে। 

দেশ: আপনি কি মনে করে দেশের ভালো ভালো অর্থনীতিবিদরা চাপের মুখে আছে?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমি মনে করি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলো এই অর্থনীতিবিদ সৎভাবে অঙ্ক কষে দিলেও তার ফল ভালো হবে না। 

দেশ: আপনি যে আশঙ্কার কথা বলেন বা জনগণের ভোগান্তির কথা বলেন তাতো কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ জনগণতো ফুসে উঠছে না এসবের বিরুদ্ধে। 

রুহিন হোসেন প্রিন্স: দেখেন যখন একটা ভয়ের পরিবেশ থাকে..অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে..। আমরা বলে থাকি পুঁজিবাদি সমাজ দেশের মানুষকে ভয় আর লোভের মধ্যে নিয়ে আসে। তখন সে তার জীবনযুদ্ধে অতিষ্ঠ্য হয়ে যায। তখন একজন রিকশাওয়ালা ভাবে আমি একটু রিকশা প্যাডেলটা একটু বেশি ঘুরাই। অথবা ছোটো ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে একটু কাজ করিয়ে দু’টা পয়সা আয় করি। এছাড়াতো আমি পারবো না। আরেকটা বড়ো কারণ হচ্ছে রাজনীতির নামে যে দেউলিয়াপনা চোখের সামনে আসে তাদের উপরতো জনগণের ভরসা নেই। আর আমরা যারা নীতিনিষ্ট রাজনীতি করি তারা ওই ধরনের দৃশ্যমান শক্তি হয়ে উঠতে পারিনি যে, এসমস্ত মানুষ আমাদের উপর আস্থা অর্জন করবে। এই জন্য মানুষ কোনো ওয়ে পাচ্ছে না। এজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি বিকল্প শক্তি হিসাবে সামনে আসতে। তাহলে মানুষ পথ খুঁজে পাবে।

শেয়ার করুন