৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩৮:০৪ অপরাহ্ন


বিতর্কে জিতলেন কমলা হ্যারিস
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৯-২০২৪
বিতর্কে জিতলেন কমলা হ্যারিস বিতর্কে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প


মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৯টায় নির্বাচনী বিতর্কে কমলা ও ট্রাম্প মুখোমুখি হন। ফিলাডেলফিয়ার ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে ৯০ মিনিটের এই বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজক মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজ। বিতর্কের সঞ্চালক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে এই প্রথম কমলা ও ট্রাম্প মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন। ট্রাম্প অবশ্য আগে একবার জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন। বিতর্কে অর্থনীতি, অভিবাসন, গর্ভপাতসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয়ে কমলা ও ট্রাম্প পরস্পরকে আক্রমণ করেন। এমনকি তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারেরও অভিযোগ তোলেন। একজন আরেকজনকে মিথ্যাবাদী বলেন।

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে লড়তে চেয়েছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৮১ বছর বয়সী বাইডেন গত ২৭ জুন রাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হন বাইডেন। তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর ওপর চাপ বাড়ে। চাপের মুখে তিনি গত ২১ জুলাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে দলের নতুন প্রার্থী হিসেবে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানান তিনি।

গত ১৮ জুলাই মিলওয়াউকিতে রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করেন ট্রাম্প। আর গত ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে কমলা আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ। বিতর্ক শেষে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই বিতর্কে ধরাশায়ী হয়েছেন টাম্প এবং জয়ী হয়েছেন কমলা হ্যারিস।

কমলা জিতলে ২ বছরের মধ্যে ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকবে না : ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা হ্যারিস ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। একই সময়ে তিনি নিজের মতো করে আরব জনগণকেও ঘৃণা করেন।’ এ সময় ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কিভাবে তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করবেন এবং হামাসের হাতে জিম্মি থাকা বেসামরিক মানুষদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধই হতই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমলা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। যদি তিনি (কমলা) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আমার বিশ্বাস, এখন থেকে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’ জবাবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তিনি বলেন, ট্রাম্প ‘বিভাজন এবং বাস্তবতা থেকে সরিয়ে আনার’ চেষ্টা করছেন। কমলা আরও বলেন, ‘সামরিক নেতারা ট্রাম্পকে অসম্মানজনক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।’

ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে, তবে কীভাবে করছে তা গুরুত্বপূর্ণ: কমলা

উপস্থাপক কমলা হ্যারিসের কাছে জানতে চান, ফিলিস্তিনে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনা এবং কীভাবে তিনি এ অচলাবস্থা নিরসনে কাজ করবেন। কমলা হামাস–ইসরায়েল ইস্যুতে তাঁর আগের কিছু মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে এটি কীভাবে তা করছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত। এটা অবিলম্বে শেষ হওয়া উচিত।’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে কমলা বলেন, গাজা পুনর্গঠনের জন্য দুই রাষ্ট্রই সমাধান।

নারীরা গর্ভপাত চায় না: হ্যারিস

কমলা হ্যারিস বলেন, ‘এ দেশে এমন কোনোও রাজ্য নেই যেখানে একটি শিশুর জন্মের পরে হত্যা করা বৈধ।’ ট্রাম্পের অভিযোগের পরে মডারেটর প্রশ্ন ছুড়েন কিছু রাজ্য শিশুদের জন্মের পরে ‘মৃত্যুদন্ড’ দেওয়ার অনুমতি দেয়। এরপরই কমলা হ্যারিস এ কথা বলেন। হ্যারিস উল্লেখ করেন, ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে যে তিন বিচারপতিকে নিয়োগ করেছিলেন দুই বছর আগে তাঁরা নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ট্রাম্পের উদ্দেশে কমলা বলেন, ‘আপনি বলেন, মানুষ এটাই চেয়েছিল? কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, পার্কিং লটে গাড়িতে সন্তানসম্ভবা নারীদের রক্তপাত হয়েছে। কারণ, তাঁরা গর্ভপাত করার অনুমতি পাননি।’ নারীদের কথা উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে কমলা বলেন, ‘তারা এটা চায় না’।

গর্ভপাত বিষয়ে ট্রাম্প যা বললেন

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি বিতর্কে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি উঠে এসেছে। দুই প্রার্থী একে অপরের দলের নীতিকে দোষারোপ করেছেন। উপস্থাপক গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সুষ্পস্ট করার আহ্বান জানান। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ডেমোক্রেটরা নয় মাসের গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অধিকার দিতে চায়।’ ট্রাম্প বলেন, গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে ডেমোক্রেটদের অবস্থান বেশ জোরালো। এমনকি কমলা হ্যারিসের রানিং মেট টিম ওয়ালজ নয় মাসের গর্ভাবস্থায়ও গর্ভপাতের অধিকার দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার অধিকার অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবেন ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য জন্মের পর নবজাতককে হত্যার অনুমতি দেয়।’ ট্রাম্পের এমন কথার পর উপস্থাপক বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন কোনো অঙ্গরাজ্য নেই যেখানে জন্মের পর কোনো শিশুকে হত্যা করা বৈধ।’

কমলা হারিসের তীব্র সমালোচনার জবাব দেন ট্রাম্প। তিনি অন্য দেশের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান। চীনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রশাসন দেশটির (চীনের) কাছ থেকে ‘বিলিয়ন’ শুল্ক এনেছিল। এমনকি ক্ষমতা ছাড়ার পরও শুল্ক এসেছে। এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে কথা বলেন।

প্রথম প্রশ্ন ছিল অর্থনীতি নিয়ে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আমেরিকানরা চার বছর আগের চেয়ে ভালো আছে? প্রথমে উত্তর দেন হ্যারিস। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে তিনি সবার জন্য সুযোগ তৈরি করতে চান। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি। তিনি নতুন পরিবারের জন্য (যারা নতুন পারিবারিক জীবন শুরু করেছেন) তাদের জন্য আবাসনের খরচ কমিয়ে আনতে চান। কর কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প ‘আগে যা করেছেন তা করার’ এবং ‘ধনকূবের এবং করপোরেশনগুলোর জন্য ট্যাক্স কাটছাঁট’ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যে করের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতিতে আমেরিকানরা ‘নিত্যদিনের পণ্যের’ উপর কর দিতে বাধ্য হবে। 

ট্রাম্পের প্রজেক্ট ২০২৫ বিপজ্জনক পরিকল্পনা’ 

কমলা হ্যারিস বলেন, ট্রাম্প আমাদের কর্মস্থানের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য রেখে গেছেন। আমরা (ডেমোক্র্যাটরা) যা করেছি তা হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের খারাপ অবস্থা পরিষ্কার করেছি। ‘প্রজেক্ট ২০২৫ এর কথাও উল্লেখ করেছেন। কমলা একে ‘বিপজ্জনক পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করেছেনবিতর্কের শুতে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কমলা বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময়ে আমাদের কর্মসংস্থানকে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন। বেকারত্বের হার ছিল মন্দার পর সবচেয়ে বাজে অবস্থায়। কমলা ভোটারদের বলেন, ‘আপনাদের জন্য ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, তিনি আপনার খোঁজ করার চেয়ে নিজেকে রক্ষা করতে বেশি আগ্রহী।’

বিতর্কে বাইডেনকে উদ্দেশ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা বলেন, ‘নির্বাচনে আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, আপনি লড়ছেন আমার বিরুদ্ধে।’ বিতর্কের একপর্যায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের জবাবে কমলা হ্যারিস বলেন, তাঁর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি এখন আর প্রেসিডেন্ট নেই-এতে আমাদের ন্যাটো (পশ্চিমা সামরিক জোট) মিত্ররা খুবই কৃতজ্ঞ।’

ডেমোক্যাট প্রার্থী কমলা বলেন, ‘অন্যথায় পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) কিয়েভে (ইউক্রেনের রাজধানী) বসে ইউরোপের বাকি অংশের ওপর নজর দিতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন একজন স্বৈরশাসক। তিনি সহজেই আপনাকে (ট্রাম্প) কবজা করে ফেলবেন।’

কমলা হ্যারিস ইমিগ্রেশন নিয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি ইমিগ্রেশনের সংস্কার করতে চান। কথা বলেছেন, আফগানিস্তান নিয়ে, ওবামা কেয়ার এবং আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে। বিতর্কে কমলা হ্যারিস ১ বার ফলস স্টেটমেন্ট দিয়েছেন অন্যদিকে ট্রাম্প ৩৩ বার ফলস স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তবে সবাই বলেছেন, এই বিতর্কে কমলা হ্যারিস জয়লাভ করেছেন। তার ফলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি উচ্ছ্বসিত।

শেয়ার করুন