বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে গোপন যোগাযোগের তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নাখোশ বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর হাই কমান্ড। এর পাশাপাশি দলটির এমন দ্বি-মূখী আচরণে তথ্য ফাঁস হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বেকায়দায় জামায়াতে ইসলামী। এসব খবর মিলেছে রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সূত্র থেকে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকদিন ধরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী’র মধ্যে মতভেদ চরমে উঠে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন দেখা দেয়। প্রথমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বারা সুন্দরভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের পরই যৌক্তিক সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকে বিএনপি। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতে বিএনপির সে জায়গা থেকে সরে আসে। দাবি জানাতে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপটি ঘোষণা করার। এমন দাবি জানাতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন দাবি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শক্ত কথা বলে ফেলেন, তাঁরা এখনো এক-এগারোর কথা ভুলে যাননি। তাই আবার যখন ওই চেহারাগুলো সামনে আসে, তখন যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়। এর পাশাপাশি ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানোর হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তাঁর মতে, এ কাজগুলো করা হচ্ছে আবার এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে, বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা থেকে। অর্থাৎ বিএনপি’র দাবি করে যাচ্ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্রুত ব্যবস্থা করা।বিএনপির মহাসচিবের সাফ কথা, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সংস্কারে আমরা বিশ্বাসী নই। নির্বাচিত সরকার গঠনেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তারাই প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। বিএনপির এমন দাবির মর্মার্থ বুঝে দলটির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বাম ও উদার গণতান্ত্রিক দলগুলিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন দাবি করতে থাকে। তারাও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপটি ঘোষণার বিএনপি’র দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়। এমনকি বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানায়। এদিকে বিএনপি’র পাশাপাশি অর্ধশতাধিক দলগুলি দ্রুত নির্বাচন দাবি করলেও বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সুর অন্যরকম হয়ে যায়। তারা আগে সংস্কার ও যতদিন লাগে ততদিন চালিয়ে যাওয়ার দাবি করে। এবং এরই পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন। জামায়াতের এমন দাবির বা পরামর্শে বিএনপি’র পাশাপাশি অন্য দলগুলি মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়।
জামায়াতকে নিয়ে সন্দেহ আরো অনেকে কারণে
যতদিন লাগে সংস্কার করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের ব্যাপারে জামায়াতের এমন দাবির ব্যাপারে পাশাপাশি আরো কয়েকটি কারণে দলটির প্রতি বিএনপি’র সন্দেহ গাঢ হতে খাকে। সেটি ছিল চট করে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলে ফেলা যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেয়া ও ভারতের সাথে সর্ম্পক স্থাপনে তাদের আগ্রহের বিষয়টি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিপীড়ন নির্যাতনের পাশাপাশি প্রক্যাশ্যে গুলি করে ছাত্রজনতাকে হত্যার দাগ না মুছতেই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমা করে দেয়ার ব্যাপারে ডা. শফিকুর রহমানের দাবি নিয়ে চলে নানান ধরণের গুঞ্জন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর ওপর যে নির্যাতন করেছে, এর জন্য তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছিলেন ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি রেস্টুরেন্টে সিনিয়র সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায়। এদিকে এমন বক্তব্যের ব্যাপারে জনমনের ক্ষোভ কমতে না কমতে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান আরেকটি বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের প্রশ্ন দেখা দেয়। সে-টি হলো জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে ভারতের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চাওয়া নিয়ে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চায় বলে জানান দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই সময় জামায়াতের আমির বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। এটি একটা ভুল ধারণা, এই ধারণা পরিবর্তন করা দরকার। ‘জামায়াতে ইসলামী’র এমন দ্বিমুখী আচরণে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ রহস্যের সৃষ্টি করেছে। কেননা যে ভারতকে বিএনপি’সহ খোদ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেক দলই মনে করে ভারত মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি বড়ো ধরণের ত্যাগ করলেও কখনই দেড় যুগ ধরে চলা বাংলাদেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামকে সমর্থন করেনি। এমন ধরনের অবস্থায় জামায়াতের মতো দল চট করে ইউটার্ন নিলো কেনো? এগুলিও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরণের রহস্যের সৃষ্টি করেছে।
গোপন তথ্য ফাঁস তারেকের
রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতে ইসলামী’র এমন রহস্যজনক আচরণের মধ্যে গোপন তথ্য ফাস করে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। অনেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে, আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। এখন চেনা শত্রুর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্রে ফাঁদে পা দিয়েছে দেশের কিছু রাজনৈতিক দল। তারা আপনাদের আশপাশেই রয়েছে। তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন, নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে তাদের মোকাবিলা করুন।’ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনগণের সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রধান অতিথির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোনো দলের নাম উল্লেখ না করলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল বুঝে নেন এই দলটি হলো ‘জামায়াতে ইসলামী’। একই সমাবেশে তারেক রহমান আরো বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়তো হয়েছে, কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও বক্তব্য থেকে জামায়াতের পিছুটান
রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের এমন অবস্থানে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দলটির ব্যাপারে নানান ধরণের সন্দেহ অবিশ্বাস দেখা দেয়। আর এমন অবস্থা টের পেয়ে জামায়াত সুরু পাল্টে ফেলেছে। ইদানিং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জামায়াত সময়ও বেধে দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সম্প্রতি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনেক দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। অনেকে দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে আসছে। তিনি বলেন, দাবি পূরণ করার জন্য উপদেষ্টা সরকার নয়, প্রয়োজন জনগণের নির্বাচিত সরকার। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশে নানা সংকট তৈরি হতে পারে।
শেষ কথা
জামায়াতের সাম্প্রতিক সন্দেহজনক গতিবিধি ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যের পর দলটি বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়। এবং খুব দ্রুত জামায়াতের অন্য নেতারা বিষয়টি বুঝে দ্রুত নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে নামে। বলছেন, তা না হলে দেশে নানা সংকট তৈরি হতে পারে বলে এখন জামায়াতই দাবি করছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দলটি তাদের আগের দাবি থেকে যতোই পিছুটান দিক না কেনো এবং এর পাশাপাশি এখন যতোই মুখে এমন-টা দাবি করুক না কেনো জামায়াতের শীর্ষ নেতারা অনেক নাখোশ। দলের একটি সুত্র জানায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিশেষ করে তারই মুখ হতে এমন বক্তব্যে জামায়াত ভীষণ গোস্বা..।
