০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:২৯:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও জামাত বিএনপির চরিত্র বদলায়নি
সামছুদ্দীন আজাদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২২
স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও জামাত বিএনপির চরিত্র বদলায়নি


স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মহান স্বাধীনতা দিবস ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের নামে বর্বরোচিত নির্মম হত্যাকাÐ চালায় নিরীহ বাঙ্গালী জাতির উপর। এমন নৃশংস বর্বরতার প্রথম টার্গেট ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন হেড কোয়াটার, পিলখানা, বিডিআর হেড কোয়াটার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষকদের হোস্টেলসহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ঐ রাতেই বর্বর হানাদার বাহিনী লক্ষাধিক বাঙ্গালীকে হত্যা করে এবং একই রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র (কালুরঘাটে স্থানান্তরিত) থেকে স›দ্বীপের দুই প্রবাদ পুরুষ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম স›দ্বীপ বার বার বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। এরপর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নানের কণ্ঠে ঘোষণাটি প্রচার করা হয়। সর্বশেষ ২৭ শে ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াকে দিয়ে বেলাল মোহাম্মদ স্বাধীনতার ঘোষণাটি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঠ করান। সাধারণ মানুষের মধ্যে চেতনা জাগ্রত করার চিন্তা থেকে এই সামরিক কর্মকর্তাকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করানো হয়। তৎকালীন সময়ে চট্টগ্রামে থাকা আরেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর রফিককে দিয়ে ঘোষণা করাতে চাইলে তিনি ব্যস্ত থাকায় মেজর জিয়াকে দিয়ে তা করানো হয়। জিয়া একজন সৈনিক হিসেবে জাতির পিতার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার দায়িত্ব পালন করেছেন ২৭ শে মার্চ ১৯৭১ সালে। আজকের বিএনপি এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে জাতির সাথে ইতিহাস নিয়ে ঠাট্টা- মশকরা করছে। বিএনপি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলছে। আরো একধাপ এগিয়ে জিয়ার পুত্র তারেক লন্ডনে বসে বলা শুরু করলেন জিয়া বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আরো মজার ব্যাপার হল- বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইতিহাস বিকৃত করতে করতে এবার বেগম জিয়াকে বানিয়ে দিলেন ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা, আর তারেক রহমানকে বানিয়ে দিলেন শিশু মুক্তিযোদ্ধা।

এবার স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য্য এবং জামাত- বিএনপির ভূমিকা প্রসঙ্গে। ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে যান বৃটিশ ডাইসরযু লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয় ধর্মের ভিত্তিতে। আজকের বাংলাদেশ তখন ছিল পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। সুতরাং প্রদেশ হিসেবে পাকিস্তানের অপর ৫টি প্রদেশ যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সুযোগ- সুবিধা ভোগ করবে ঠিক সমপরিমাণ সুযোগ- সুবিধা ভোগ করার কথা পূর্ব পাকিস্তানেরও। কিন্তু সেটি হয়নি দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে, বরং হয়েছে শোষণ, নির্যাতন বঞ্চনার শিকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা। শোষণ- নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে দাবি তোলা হলেও সেটি কোনদিন আমলে নেয়নি সেই সময়কার পাকিস্তানী শাসকরা। বরং বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করলে আমাদের গুলি খেয়ে মরা ছাড়া কোন পথ ছিল না। যেমন ৫২ সাল ভাষার দাবিতে আমাদের প্রাণ দিতে হয়েছে। ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনে আমাদেরকে মাঠে নামতে হয়েছে। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের জীবন দিয়ে ১৯৭১ এর প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হয়েছে। ৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ৬ দফা দাবি ছিল বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ এবং সেই ৬ দফার প্রেক্ষিতে সর্বশেষ এক দফার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানী শোষণ আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একটি স্বাধীন- আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠন করার- সেই জাতি হবে বাঙ্গালী জাতি, দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলার সন্তানেরা এই দেশ পরিচালনা করবে, কোন ব্যবধান থাকবে না, থাকবে না কোন বৈষম্য। স্বাধীন বাংলার শিক্ষিত যোগ্য সন্তানেরা হবে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা, তারা হবেন আমলা, ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি স্বায়ত্বশাসিত কর্পোরেশনের প্রধান, পাইলট, জাহাজের ক্যাপ্টেন। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলার গর্বিত সন্তানেরা এই দেশ পরিচালনা করবে বঙ্গবন্ধু এমনই স্বপ্ন দেখেছিলেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের কতিপয় নাগরিক যারা পাকিস্তানের সাথে আমাদের বিভক্তি মেনে নিতে পারেনিÑ যারা মুসলিম লীগ করতেন তারা, জামাতে ইসলামী, আলবদর, রাজাকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেই রাজাকাররা পাকিস্তানীর পক্ষ হয়ে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছেন, পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে নিয়ে আমার দেশের বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে। আমাদের নারিদের পাকিস্তানী হায়েনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ধর্ষণ করার জন্য। আমার দেশের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিকদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করতে সাহায্য করেছিলেন এই জামাত। আমার দেশের অভ্যন্তরে গ্রামের পর গ্রাম অগ্নিসংযোগ করেছেন, নারিদের নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে। মানুষের ধন-সম্পদ লুটপাট করেছিল জামাতি আর পাকিস্তানী বর্বর সৈন্যরা মিলেমিশে। আর যারা মুসলিম লীগের রাজনীতি করতো তারা তাদের পরিবারের সদস্যরা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর স্বৈরাচারি জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। বিএনপি- জামাত মিলেমিশে একাকার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে ইঙ্গ মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের গোপন সহযোগিতায়। খন্দকার মোস্তাকের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জেলখানার অভ্যন্তরে এই দেশের চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে খুন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে মেধাশূন্য করে। এবং বাংলাদেশের কতিপয় সেনা কর্মকর্তাদের হাতে দেশকে তুলে দিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল জিয়ার সৃষ্ট দল বিএনপি এবং তৎকালীন সময়ের মুসলিম লীগ নেতারা যার পরবর্তি সংস্করণ বিএনপি। এমন সুদূর প্রসারি ষড়যন্ত্র দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চলছিল। শেষ পর্যন্ত ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৯৬ সালে সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে স্বৈরাচারি জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সেনা শাসনকে প্রতিহত করে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে আসেন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। শুরু হয় জামাত- বিএনপির ষড়যন্ত্র। পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততে দেয়া হয়নি।

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করে। দেশে পরিচালনা শুরু হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ এই দেশের অর্থনীতিকে স্বনির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। যা গত ৫০ বছরে হয়নি। ২০২২ সালে আমাদের অর্থনীতির আকার হয়েছে ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে গড়ে মাথাপিছু জিডিপির হার ছিল ৭.৮ শতাংশ। যেখানে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত ছিল যথাক্রমে ৬.৯ শতাংশ, ৪ শতাংশ ও ৩.১ শতাংশ। গত ৬ মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি।  সামাজিক অগ্রগতি সূচক যেমন শিশু মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, জন্মহার, গড় আয়ু, বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় ভাল অবস্থানে। জিডিপির ৫ শতাংশের কম রাজস্ব ঘাটতি, ৬ শতাংশের কম মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং জিডিপির ১৫ শতাংশের কম, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ একটি প্রশংসনীয় সমষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। খাদ্য উৎপাদন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে ভাল। East Asian Miracal এর মতই বাংলাদেশ এখন গতিশীল উন্নয়নের এক উদীয়মান দেশ। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে স্বল্প দক্ষতা নির্ভর ক্রমবর্ধমান দেশকে শিল্প, বর্ধিত রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং উৎপাদনশীল আধুনিক কৃষির কাংখিত কাঠামোগত রূপান্তর নিশ্চিত করে মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। সব কৃতিত্ব শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী সভার। সেই সাথে দেশপ্রেমিক জনগণ ও আওয়ামী লীগের লক্ষ কোটি কর্মী সমর্থকদের। দীর্ঘ ৫১ বছর পরও জামাত বিএনপির চরিত্র বদল হয়নি তারা এখনও ৭১ এর ঘৃণিত ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। রাজনীতির নামে জালাও, পেড়াও, হত্যা, ধর্ষণ, দেশ বিরোধী গোপন স্বরযন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

শেয়ার করুন