ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৩ হাজারের বেশি অভিবাসী, যারা হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তারা বর্তমানে অভিবাসন আটক কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছেন। অর্থাৎ তারা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। এসব অভিবাসীর বেশির ভাগই হয় যুক্তরাষ্ট্রে বা অন্য কোনো দেশে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টএর ‘অধি-আটক’ ডকেটে অন্তর্ভুক্ত থাকা এই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন মামলা চলমান রয়েছে। তবে তারা বর্তমানে আটক অবস্থায় নেই। ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের অধি-আটক ডকেট সেসব অভিবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন মামলা চলছে, কিন্তু তাদের আটক করা হয়নি। এর অর্থ হলো ইমিগ্রেশনের কাছে তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে, কিন্তু তারা বর্তমানে অভিবাসন কেন্দ্রে নেই। এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে, যেমন তারা স্থানীয় বা রাজ্য কারাগারে সাজা খাটছে, তাদের আটক করার প্রয়োজনীয়তা কম, অথবা ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এখনো তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি।
ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই অভিবাসীরা হয় তাদের অপরাধের জন্য কারাগারে রয়েছে, অথবা তাদের আটক করা প্রয়োজনীয় মনে করা হয়নি। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে সংস্থা তাদের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য রাখতে সক্ষম নয়, যা এই অবস্থার কারণ হতে পারে। দুটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট প্রায়ই স্থানীয় বা স্টেট পর্যায়ের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সব সময় তথ্য পায় না। তাই এটি জানা যায় না যে কত জন অভিবাসী বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এ তথ্য ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট থেকে কংগ্রেসের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মতে, অনেক অভিবাসী যারা এই ডকেটে অন্তর্ভুক্ত, তারা আগের প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই তথ্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং এটি বর্তমান প্রশাসনের অধীনে ঘটছে না। তিনি আরো জানান, এ তথ্য গত ৪০ বছর ধরে প্রাসঙ্গিক এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে এমন অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করছে, যারা বহু বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
অভিবাসন আটক কেন্দ্রের বাইরের অভিবাসীদের সংখ্যা
অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকা অভিবাসীদের আটক না করার ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩ লাখ ৬৮ হাজার অপরাধমূলক অভিবাসী ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের আটক কেন্দ্রের বাইরে ছিল। ২০২১ সালের জুন মাসের হিসাবে প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৭৮৬ অপরাধমূলক অভিবাসী ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের অধি-আটক ডকেটে অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন অভিবাসীরা ইমিগ্রেশনের আটক কেন্দ্রের বাইরে
অনেক ক্ষেত্রে, অভিবাসীরা সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার পরই তাদের অপরাধমূলক ইতিহাস জানা যায়, ফলে তাদের আগে থেকেই আটক করার সুযোগ থাকে না। কিছু অভিবাসী স্থানীয় বা রাজ্য কর্তৃপক্ষের হাতে শাস্তি ভোগ করার পর ছাড়া পায়, কিন্তু ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এ সম্পর্কে অবহিত থাকে না, ফলে তাদের আটক এবং দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দেরি হয়।
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের সীমিত সংস্থান
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের বর্তমান ‘অধি-আটক’ ডকেটে ৭.৫ মিলিয়নেরও বেশি অভিবাসী রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন মামলা চলমান রয়েছে, কিন্তু তারা আটক অবস্থায় নেই। সংস্থার সীমিত মানবসম্পদ এবং সংস্থান থাকায়, অপরাধী অভিবাসীদের শনাক্ত এবং আটক করার কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে অনেক স্থানীয় প্রশাসন তাদের সংরক্ষণ নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করছে এবং অভিবাসীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট ইতিমধ্যেই কিছু ক্ষেত্রে সফলভাবে কিছু অভিবাসীকে আটক করেছে, যারা হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।
ডিএইচএসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ ডাটা কয়েক দশকের পুরোনো; এর মধ্যে অনেকেই বর্তমান প্রশাসনের আগে দেশটিতে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও অনেকেই স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছেন। ২০১৬ সালের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার অপরাধী অভিবাসী আইসির দ্বারা আটক করা হয়নি। ২০২১ সালের জুনের হিসাবে এই সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৫ হাজার ৭৮৬ হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের শেষের দিকে ছিল। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৯ অপরাধী অভিবাসী আইসির ‘অপরাধী মুক্ত’ তালিকায় রয়েছেন।
আইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা কলম্বিয়ায় হত্যার দায়ে দণ্ডিত এবং এল সালভাদরে হত্যার প্রচেষ্টার দায়ে দ-িত দুই ব্যক্তিকে আটক করেছেন। অপরাধীদের অবস্থান নির্ধারণ এবং তাদের আটক করা একটি বিশাল শ্রমের কাজ।
হোয়াইট হাউস এখনো এই ডাটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডাটার প্রকাশ হোয়াইট হাউসের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল।
মিশিগানে এক প্রচারণা বক্তৃতায় ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে বর্তমান অভিবাসন নীতির জন্য সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ডেটা প্রমাণ করে যে, এই অপরাধীরা আমাদের দেশে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
আইসি বর্তমানে ৭.৫ মিলিয়নের বেশি অভিবাসীকে ‘অপরাধী মুক্ত’ তালিকায় রেখেছে। আইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুরুতর অপরাধীদের খুঁজে বের করা এবং আটক করা অনেক শ্রমের বিষয়। স্থানীয় কিছু শহর তাদের সংরক্ষণ নীতিতে পরিবর্তন আনছে এবং আইসির সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।