১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৪:০৯:৫০ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্পের গণবহিষ্কারের তথ্য প্রকাশে ফেডারেল কোর্টে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২৪
ট্রাম্পের গণবহিষ্কারের তথ্য প্রকাশে ফেডারেল কোর্টে মামলা


আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) গত ১৮ নভেম্বর, সোমবার ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এফোর্সমেন্ট (আইস)-এর বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত গণনির্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবিতে ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি ইউএস সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব ক্যালিফোর্নিয়ায় দায়ের করা হয়। ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ের পর তিনি তার প্রথম দিন থেকেই ব্যাপক গণনির্বাসন কর্মসূচি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মামলায় আইসের বিমান পরিবহন নেটওয়ার্ক বা ‘আইস এয়ার অপারেশন’ সম্পর্কিত চুক্তি, নীতিমালা এবং অন্যান্য কার্যক্রমের বিস্তারিত প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক নির্বাসনের জন্য সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ২০ জানুয়ারি তার প্রথম কার্যদিবসেই নির্বাসন শুরু করবেন এবং এজন্য একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন।

মামলায় আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এফোর্সমেন্ট (আইস) থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর নির্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত তথ্য চেয়েছে। মামলার উদ্দেশ্য হলো, ‘আইস এয়ার অপারেশন’ নামে পরিচিত আইসের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার বর্ধিত ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নির্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এসিএলইউ একটি ফ্রিডম অব ইইউয়েরমেশন অ্যাক্ট-এর আওতায় আবেদন করেছিল, কিন্তু আইস এখনো এর উত্তর দেয়নি। বারবার তাগিদ দেওয়ার পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এফোর্সমেন্ট কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি, যার ফলে এ মামলা দায়ের করা হয়।

এসিএলইউ এই মামলায় বিমান চলাচল, বিমানবন্দর এবং নির্বাসন ফ্লাইট সম্পর্কিত চুক্তি, পরিবহন সেবা এবং পদ্ধতিসমূহের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। তাদের দাবি, এসব তথ্য সরকারের স্বচ্ছতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের ব্যাপক নির্বাসনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় কৌশল, প্রকল্প এবং বিনিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ছাড়া জনগণের পক্ষে সঠিকভাবে প্রতিরোধ গঠন করা কঠিন।

এসিএলইউয়ের আইনজীবীরা বলেন, এই তথ্য প্রয়োজনীয় কারণ, কারণ ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রশাসন এই নির্বাসন পরিকল্পনা কার্যকর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইস বর্তমানে যে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছে, তার মধ্যে বেশ কিছু বিমানে, বিশেষ করে শিশুদের বহন করার সময়, দমনমূলক ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ২০২৩ সালে কলম্বিয়া সরকার একটি নির্বাসন ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করে। কারণ তারা জানায় যে, আইস অভিযুক্তদের হাতে শিকল পরিয়ে রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এটি ‘নিষ্ঠুর এবং অবমাননাকর’ বলে উল্লেখ করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে আইস ৯২ জন পুরুষ ও মহিলাকে সোমালিয়াতে নির্বাসিত করতে গিয়ে সেনেগালের একটি বিমান আটকে যায়। বিমানটি ২৩ ঘণ্টা ধরে সেনেগালে অবরুদ্ধ ছিল এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে। এতে দেখা গেছে, আইস ওই অভিযুক্তদের ৪৮ ঘণ্টার বিমানযাত্রা এবং বিচারের প্রক্রিয়ায় শিকল পরিয়ে রেখেছিল।

এসিএলইউ কর্তৃক দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়েছে যে, আইস আইনানুগভাবে তাদের কাছ থেকে চাওয়া তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও আইস ৩০ দিনের মধ্যে এ তথ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ পরিস্থিতির মধ্যে আইসের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছে যে, তারা তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার অবস্থা বন্ধ করে এবং অবিলম্বে তথ্য সরবরাহ শুরুর আদেশ দিতে।

এসিএলইউয়ের মামলার মধ্যে আরো দাবি করা হয়েছে, গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসন ফ্লাইট পরিচালনা সরকারি সংস্থা ইউএস মার্শাল সার্ভিসের অধীনে ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক মহল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, আইস এয়ার সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য ৮০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হলেও তারা যথাযথভাবে এই খরচ এবং কোম্পানির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেনি। আইনের কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই বিমান সংস্থাগুলোর কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণ বা তাদের বরাদ্দকৃত বাজেটের সদ্ব্যবহার করা হয়নি। ফলে সরকারি অর্থের অপচয় এবং অস্বচ্ছতা সৃষ্টি করছে।

এসিএলইউয়ের আইনজীবীরা এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অভিবাসীদের প্রতি অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এডিএলইউ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলো দাবি করছে, নির্বাসন কার্যক্রমে এমন ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বিমান সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের অবাধ তথ্য পেলে তা অবৈধ অভিবাসীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে কোনো বাধা ছাড়া এ কার্যক্রমের বিবরণ গ্রহণ করার মাধ্যমে অভিবাসীদের পক্ষে সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর নির্বাসন পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়ে, একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি পদক্ষেপ হিসেবে উঠে এসেছে। মামলাটি এডিএলইউ এবং মানবাধিকারকর্মীদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি সরকারের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অভিবাসীদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আইসের কার্যক্রমে অনিয়ম এবং অপব্যবহারের অভিযোগসহ, মামলার ফলাফল শুধু ট্রাম্পের নির্বাসন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট করতে সহায়তা করবে, বরং ভবিষ্যতে অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইনগত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।

শেয়ার করুন