প্রাণের আমেজ আর হৃদয়ের উষ্ণতায় গত ৩ মে সন্ধ্যায় প্রবাসী শেরপুর জেলা সমিতি ইউএসএর বর্ণাঢ্য ঈদ পুনর্মিলনী ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে সানাই পার্টি হলে এ উপলক্ষে শের আলী গাজীর স্মৃতি বিজড়িত শেরপুর জেলার প্রবাসীদের মিলনমেলা বসেছিল। সবাই পারস্পরিক সহযোগিতায় কমিউনিটি এবং ফেলে আসা স্বদেশের কল্যাণে নিবেদিত থাকার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। সৌহার্দ্য সম্প্রীতির এই মিলনমেলায় আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে ঐক্যের বিকল্প নেই এবং সেই অভিপ্রায়ে সবাইকে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী প্রদোষ চক্রবর্তী। মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও স্বপন কুমার চক্রবর্তীর পবিত্র গীতাপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছামেদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাবেক সভাপতি, উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর জান্নাত রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী এন মজুমদার, বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন স্ট্যাটেন আইল্যান্ড লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী আশরাফ হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও সাংবাদিক আবুল কাশেম। প্রধান আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, পিঠা উৎসব গ্রামীণ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে এই সংস্কৃতি আমরা লালন করে আসছি। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে ঘরে নতুন ফসল ওঠার সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ধনী-দরিদ্র সব শ্রেণির মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে অথবা সম্মিলিতভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তিনি বলেন, সত্তর ও আশির দশকে আমি যখন গ্রামে বসবাস করতাম, তখন প্রাণভরে তা উপভোগ করেছি। বর্তমানে অতি আধুনিকতার যুগে আমরা তা হারিয়ে যেতে বসেছি। তিনি আরো বলেন, এই প্রবাস জীবনে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আমাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে চাইলে এই ধরনের পিঠা উৎসবের আয়োজন অনস্বীকার্য।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মামুন রাশেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান, সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাইছ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর সমিতির সাবেক সভাপতি বাদল রহমান জিল্লুর, প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, পরিচয় সম্পাদন নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক দেশ-এর সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল হক, সাংবাদিক আনিসুর রহমান, সাংবাদিক সাখাওয়াৎ হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ পোস্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন মজুমদার, সাবেক সভাপতি নাহিদ রায়হান লিখন, উপদেষ্টা সাবেরা জামান কচি, সাখাওয়াত হোসেন, রাকিবুল ইসলাম রাসেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী হরেক রকমের পিঠার মধ্যে চিতই পিঠা, তেলের পিঠা, ভাঁপা পিঠা, পাটিসাপটা, গোটা পিঠা, পায়েস পিঠা, নারুপিঠা, কলাপিঠা, আউলা খেসি, নারিকেল বরা, ক্ষির পিঠা, তাল পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, সন্দেশ পিঠা, ঝালপিঠা, ফুলপিঠা, চাপড়ি পিঠা, চিড়াপিঠা, মোয়াপিঠা ও সেমাই পিঠাসহ প্রায় ২৮/২৯ প্রকারের পিঠা দিয়ে আমন্ত্রিত উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়িত করা হয়। এসব পিঠা সংগঠনের সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বাসা থেকে বানিয়ে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন। যা ছিলো সত্যিই প্রশংসনীয়। তাছাড়া সবার আন্তরিকতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানও ছিল বেশ পরিচ্ছন্ন।
অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শামীম রেজা ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শাহ মাহবুব দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ সংগীত পরিবেশন করেন। উপস্থিত সবাই তাদের পরিবেশনা উপভোগ করেন। অনেকেই আবার শাহ মাহবুবের গানে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নাচতে থাকেন। একসময় চৎকার এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে আগামীতে আরো সুন্দর অনুষ্ঠানের প্রত্যাশায়। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন রেখা জামান চৌধুরী, মাসুদ পারভেজ মুক্তা, আসমাউল হুসনা লীরা, শহিজ উদ্দিন মিয়া শিমুল প্রমুখ।