ওয়াশিংটন স্টেটে বোথেল শহরে অবস্থিত বোটেল ইসলামিক সেন্টার একটি গোপনীয় ওয়েবসাইট যোগাযোগ ফর্মের মাধ্যমে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিগত ৮ জুন ‘মসজিদে বোমা মার’ শিরোনামে একটি হুমকি বার্তা পাঠায়। বার্তায় স্থানীয় ধর্মীয় কেন্দ্রটি আক্রমণের কৌশল বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। স্থানীয় পুলিশ ও এফবিআইকে অবহিত করা হয়েছে এবং এই ঘটনাটি সম্ভাব্য ঘৃণার অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাটি ৮ জুন সন্ধ্যা ৯:২১ মিনিটে ঘটে, যেখানে প্রেরক নিজের নাম হিসেবে ‘ফিল্থি’ উল্লেখ করেন এবং সম্ভবত মিথ্যা ইমেইল ব্যবহার করেছেন। বার্তায় লেখা ছিল, শুক্রবারের নামাজ চলাকালে বোমা বিস্ফোরণ হোক এবং মসজিদের সবাই মারা যাক ও ‘নরকের পচা মাংস’ হয়ে যাক। বার্তায় আরো ছিল, সব মুসলিম পুরুষকে মেরে ফেলো। জুমার নামাজের সময় বোমা পাঠাও এবং টুকরো টুকরো হয়ে নরকে যাও, তোমরা ফাঁকা লোকেরা।’
অন্যদিকে গত ১২ জুন আমেরিকার বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার ও ওকালতি সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের ওয়াশিংটন শাখা স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল নিক ব্রাউনকে এ ঘটনাটি ও সাম্প্রতিক এডমন্ডস পার্কে এক মাতাল ব্যক্তির দ্বারা দুই ইসলামি নারীর বিরুদ্ধে জাতিগত কুরুচিপূর্ণ হামলার ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানায়। কেয়ার-ওয়াশিংটনের নির্বাহী পরিচালক ইমরান সিদ্দিকি বলেন, বোটেল ইসলামিক সেন্টারে পাঠানো স্পষ্ট সহিংস হুমকিগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা কখনোই ক্রাইস্টচার্চ, কুইবেক সিটি, বা ওক ক্রিক, উইসকনসিনের শিখ মন্দিরে সংঘটিত নির্মম হামলার মতো ঘটনাগুলো ভুলতে পারি না। আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাই এই হুমকিগুলোকে ঘৃণার অপরাধ হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করার।
বোটেল ইসলামিক সেন্টারের একজন প্রতিনিধি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের ইসলামিক সেন্টারের বিরুদ্ধে এই চরম ও লক্ষ্যভিত্তিক হুমকির পর আমরা মুসলিম সম্প্রদায় হিসেবে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, আমাদের বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি ভরসা নিয়ে। আমরা আমাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের হৃদয়ে ধারণ করে প্রার্থনা করি। বোটেল পুলিশ বিভাগ, কেয়ার-ওয়াশিংটন এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ, যা আমাদের মুসল্লিদের মধ্যে আশ্বাস সৃষ্টি করেছে। ঘৃণা আমাদের বৈচিত্র্যময় ও স্বাগতপূর্ণ সমাজে কোনো স্থান পায় না। আমরা শান্তি, করুণা ও সহমর্মিতার মূল্যবোধে অটল থাকবো, যা আমাদের ধর্ম ও বৃহত্তর বোটেল সম্প্রদায়ের পরিচায়ক। আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও শক্তির জন্য প্রার্থনা করছি এবং আশা করি আমাদের ঐক্য, স্থিতিশীলতা ও শান্তির অঙ্গীকার এই কঠিন সময়গুলো অতিক্রম করতে সাহায্য করবে।
বোটেল সিটির ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিল সদস্য রামি আল-কাবরা, যিনি একজন মুসলিম-আমেরিকান অভিবাসী। তিনি বোটেল পুলিশ বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং সবাইকে পরস্পরের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান। মুসলিম কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এফবিআই এবং ওয়াশিংটন স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেলকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে যাতে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং ইসলামিক সেন্টারের হুমকির মূল ব্যক্তিকে আইনের পূর্ণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। বোটেল ইসলামিক সেন্টারে বোমা হামলার হুমকি নিছক একটি একক ঘটনা নয়; এটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দিন দিন বেড়ে চলা ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণার রাজনীতির এক ভয়ানক বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের হুমকি শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকেই নয়, বরং আমেরিকার বহু সাংস্কৃতিক ও সহনশীল সমাজব্যবস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করে। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অটুট ঐক্য, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা এই সংকটময় সময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে।