১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৫:৪১:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


দেশকে অমিতাভ রেজা
নিউইয়র্ক আমাদের মতো গল্পকারদের জন্য এক আশ্চর্য ল্যাবরেটরি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৫
নিউইয়র্ক আমাদের মতো গল্পকারদের জন্য এক আশ্চর্য ল্যাবরেটরি অমিতাভ রেজা চৌধুরী


ঈদে যখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে থ্রিলার আর অ্যাকশনের দাপট, তখন ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ নিয়ে হাজির হলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। হইচইয়ে মুক্তি পাওয়া এই ওয়েব সিরিজটিকে অনেকে বলছেন ‘একটি পলিটিক্যাল ফোক ফ্যান্টাসি’, যা আগের কোনো বাংলা কনটেন্টে দেখা যায়নি। আট নারীর জীবন, আব্বাস নামের এক ট্রাকচালক আর লোকজ মিথের ঘোর-সব মিলিয়ে সিরিজটি হয়ে উঠেছে দর্শকের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে ঢাকায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: ঈদে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পেল আপনার পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

অমিতাভ রেজা চৌধুরী: খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। দর্শকরা সিরিজের ভিন্নধর্মী গল্প, লোকজ আবহ আর মোশাররফ করিমের অভিনয় নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করছেন। অনেকে বলেছেন, এটা একটা পলিটিক্যাল ফোক ফ্যান্টাসি, যা আগে দেখা যায়নি।

প্রশ্ন: আব্বাস একজন অনাথ, এতিম। পরোপকার করতেই আটজন পোড় খাওয়া নারীকে বিয়ে করে? বিয়ে না দেখিয়ে বিষয়টা অন্যভাবে দেখানো যেত কি?

অমিতাভ রেজা: হ্যাঁ, অন্যভাবে দেখানো যেতো। তবে এই বিয়েগুলো আসলে প্রতীকী। একজন মানুষ, যিনি নারীদের পাশে দাঁড়ান, সংসার ভেঙে যাওয়া নারীদের নতুন জীবনের সুযোগ করে দেন। সমাজ এটাকে বিয়ে বলেই ধরে নেয়। এই মেটাফোর দিয়েই আমরা গল্পটা বলতে চেয়েছি।

প্রশ্ন: আটটা এপিসোডে আট নারীকে ঘিরে আটটি গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গল্পগুলো কি পরিপূর্ণভাবে বলা গেল?

অমিতাভ রেজা: গল্পগুলো আমরা ছোটগল্পের স্টাইলে সাজিয়েছি। কিছু গল্প হয়তো একটু অসম্পূর্ণ বা খোলা মনে হতে পারে। কারণ সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল-প্রতিটি চরিত্র যেন দর্শকের মনে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। সব উত্তর গল্পে নয়, দর্শকের অনুভবে রেখে দিতে চেয়েছি।

প্রশ্ন: এই আট নারীর বাসস্থান কি কাছাকাছি অঞ্চলে? নাকি দূরে দূরে? কেউ কারো সম্পর্কে জানতে পারে না কেন? তাদের অবস্থান আর আব্বাসের মুভমেন্ট কি সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলো?

অমিতাভ রেজা: এই নারীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকে-চট্টগ্রাম, বগুড়া, যশোর, খুলনা, দিনাজপুর, ঢাকার আশপাশে। আব্বাস ট্রাকচালক, ফলে তার চলাচল বিস্তৃত। এটাও গল্পের একটি ডিভাইস, যাতে তার ভৌগোলিক বিচরণ বিশ্বাসযোগ্য হয়। কেউ কাউকে না চেনা-এটাও আজকের দিনে ইন্টারনেট যুগে প্রশ্ন তুলতে পারে। তবে এটাকে নাটকীয় ছাড় হিসেবে নিতে হবে।

প্রশ্ন: সিরিজের অ্যান্ড ক্লাইমেক্সে দেখা গেল, স্ত্রীরা একে একে আব্বাসকে ছেড়ে চলে গেল। কেউ তাকে বোঝার চেষ্টা করল না, বা পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো না-এটা কেন?

অমিতাভ রেজা: এটাই গল্পের মূল ট্র্যাজেডি। আব্বাস যতটা নিঃস্বার্থ ভেবেছিল সম্পর্কগুলো, বাস্তবে মানুষ তার মতো ভাবেনি, ভাবে না। তারা তাকে ভালোবেসেছে, কিন্তুসেই ভালোবাসায় দ্বিধা ছিল, শঙ্কা ছিল। এ ফেয়ারি টেল বা গল্পের শেষটা একটু বিষণ্ন; কারণ বাস্তবেও সব ভালোবাসা স্থায়ী হয় না।

প্রশ্ন: বোহেমিয়ান ঘোড়ার দ্বিতীয় সিজন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

অমিতাভ রেজা: প্রাথমিকভাবে ভাবছি নতুন সিজনের কথা। যদি দর্শকের আগ্রহ ও ভালোবাসা অব্যাহত থাকে, তাহলে নিশ্চয় দ্বিতীয় সিজনের গল্প নিয়ে বসা যাবে। আব্বাসের জীবন তো এখানেই শেষ না।

প্রশ্ন: চারদিকে যখন রহস্য, থ্রিলার, অ্যাকশনের জয়জয়কার, তখন কি এমন একটা গল্পনির্ভর সিরিজ বানানো ঝুঁকি মনে হয়নি?

অমিতাভ রেজা: অবশ্যই ঝুঁকি মনে হয়েছে, ঝুঁকি ছিল। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, বাংলার দর্শক শুধু রহস্য বা অ্যাকশনেই আটকে নেই। তারা গল্প চায়, ভালো গল্প, নতুন আঙ্গিকের গল্প। সে বিশ্বাস থেকেই সাহস করেছি এমন গল্পনির্ভর একটি সিরিজ বানানোর।

প্রশ্ন: সিনেমা নিয়ে নতুন কোনো খবর আছে?

অমিতাভ রেজা: একটা নতুন ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছি। প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তাই এখনই বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে এবারের গল্পটা একটু গভীর, আরেকটু নিরীক্ষাধর্মী।

প্রশ্ন: ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো দেখার সুযোগ হয়েছে?

অমিতাভ রেজা: না, এখনো সব দেখা হয়নি। তবে যেগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই দেখতে চাই।

প্রশ্ন: কদিন আগে দেখলাম, ‘ইন অ্যা রিলেশনশিপ’ স্ট্যাটাস দিয়েছেন?

অমিতাভ রেজা: (হাসি) ব্যক্তিগত জীবন কিছুটা ব্যক্তিগতই রাখতে চাই। তবে হ্যাঁ, নতুন একটা সম্পর্কের শুরু হয়েছে। সময় বলে দেবে বাকিটা।

প্রশ্ন: বেশ লম্বা সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, কী করছেন? ওখানে স্থায়ী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে?

অমিতাভ রেজা: হ্যাঁ, কিছুদিন হলো এখানে আছি। সিনেমা আর লেখালেখি নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। নিউইয়র্ক আমার প্রিয় শহর। তবে চূড়ান্তভাবে থাকার ভাবনা নেই। এই শহরটা আমাদের মতো গল্পকারদের জন্য এক আশ্চর্য ল্যাবরেটরি-প্রতিদিন শিখছি, দেখছি, ভাঙছি, গড়ছি। আমাদের জানা-পড়া একটু কম, তাই সময় নিচ্ছি নিজেকে আরো একটু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। এই সময়টাকে আত্মশুদ্ধির, আত্মসন্ধানের মতো করে নিচ্ছি। যখন মনে হবে পরের সিনেমার জন্য মানুষ তৈরি, প্রযোজক তৈরি, তখনই ফিরব আলোছায়ার খেলায়। স্থায়ীভাবে (যুক্তরাষ্ট্রে) থাকব কি না, সেটা এখনো চূড়ান্ত নয়, তবে নিউইয়র্ক আমাকে অনেক কিছু শেখাচ্ছে।

প্রশ্ন: দেশে ফিরবেন কবে?

অমিতাভ রেজা: নতুন করে পড়াশোনায় যোগ দিচ্ছি। শেষ হলে ফিরবো।

প্রশ্ন: আপনার ‘সিনেমা পাঠশালা’ কেমন চলছে? জুলাইয়ে নতুন ব্যাচ শুরু করবেন শুনলাম। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।

অমিতাভ রেজা: সিনেমা পাঠশালা আমার একান্ত স্বপ্নের জায়গা। জুলাইয়ে ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু হবে, প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এটা শুধুই একটা ক্লাসরুম না, একটা আড্ডা, একটা চর্চাকেন্দ্র, একটা নির্মাণশালা, যেখানে সিনেমার ভাষা নিয়ে নাড়াচাড়া করা যায়, ঝুঁকি নেওয়া যায়। এখানে শেখার চেয়ে প্রশ্ন করাটাকে বেশি গুরুত্ব দিই। ক্লাসরুমের কাঠামোটা খুব অলটারনেটিভ নির্দিষ্ট পাঠ্যবই নেই, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা, বিশ্ব সিনেমার চর্চা, ছাত্রদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: সিরিজে মোশাররফ করিমকে বেছে নেওয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল?

অমিতাভ রেজা: অবশ্যই। মোশাররফ ভাই এই ধরনের চরিত্রে গভীরতা আনতে পারেন, যে গভীরতা স্ক্রিপ্টে থাকলেও অনেক অভিনেতার পক্ষেই ফুটিয়ে তোলা কঠিন। ‘আব্বাস’ চরিত্রটা জটিল-একইসঙ্গে সহজ-সরল, আবার আদর্শবাদী ও দুঃখবোধে ভরা। মোশাররফ করিম এই মিশ্র আবেগকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রশ্ন: যারা এখনো ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ দেখেননি, তাদের জন্য আপনি কী বলতে চান?

অমিতাভ রেজা: আমি বলবো, এটা কেবল একটি সিরিজ নয়, এটা এক ধরনের অভিজ্ঞতা। এই গল্পটা আমাদের সমাজ, সম্পর্ক, সহানুভূতি আর বিস্ময়ের এক প্রতিচ্ছবি। যদি একটু ধৈর্য নিয়ে, খোলা মন নিয়ে দেখতে পারেন, তাহলে কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার নিজের মধ্যেও জেগে উঠবে। সেটাই আমাদের অর্জন।

শেয়ার করুন