০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশকে আফজাল হোসেন
উন্মাদকাণ্ডেও মানুষ আর দুঃখিত হয় না
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৫
উন্মাদকাণ্ডেও মানুষ আর দুঃখিত হয় না আফজাল হোসেন


নন্দিত অভিনেতা, নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন কেবল রং, আলো আর ক্যামেরার মানুষ নন, বরং সমাজ-সংস্কৃতি ও মানুষের অন্তর্জগত নিয়েও ভাবেন গভীরভাবে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক লেখায় তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন পারিবারিক বন্ধন, সমাজের পরিবর্তন, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সমসাময়িক মানুষের মানসিকতা নিয়ে। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক এক লেখায় আপনি পারিবারিক বন্ধনের প্রসঙ্গ তুলেছেন। কী কারণে এই স্মৃতিচারণ?

আফজাল হোসেন: আমরা সম্ভবত শেষ বা শেষের দিকের সেই প্রজন্ম, যাদের দাদা-নানাবাড়ির প্রতি ছিল এক অদ্ভুত টান। আম-কাঁঠালের ছুটিতে দাদাবাড়ি যাওয়া যেন ছিল এক উৎসব, আর বছরে একবার নানাবাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেলে তা ছিল স্বপ্নের মতো। দাদাবাড়িতে পরিবারের সঙ্গে একত্র হওয়ার আনন্দ আর নানাবাড়িতে অফুরান স্বাধীনতা-এ দুটো ভিন্ন অভিজ্ঞতাই আমাদের জীবনের স্বাদ আর স্বাধীনতার স্বাদ বুঝিয়ে দিতো। ছোটবেলায় আমরা স্বাধীনতার মানে বুঝতাম না, কিন্তু সেই আনন্দের স্বাদ ভালো করেই জানতাম।

প্রশ্ন: বড় হয়ে সেই স্বাদ আর অনুভূতি কি হারিয়ে গেছে?

আফজাল হোসেন: হ্যাঁ, অনেকটাই। বড় হওয়ার পর জীবনের স্বাদ আর স্বাধীনতার স্বাদ যেন ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়। সেই সহজ, নিঃস্বার্থ সম্পর্কগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। মানুষকে কাছের করতে, পুনরায় আপন বানাতে আমাদের জীবনের প্রায় সবটুকু দিয়ে দিতে হয়। অথচ ছোটবেলায় এমনি এমনি অনেক কিছুই পেয়ে যেতাম আর হয়তো সেই অবহেলাতেই সেগুলো হারিয়ে ফেলি। এখন মানুষ জীবনের স্বাদ হারায় অস্থিরতায়, আর স্বাধীনতার স্বাদ হারায় দায়িত্বহীনতায়, স্বেচ্ছাচারে।

প্রশ্ন: বর্তমান সমাজের মানুষদের আচরণ ও মানসিকতা নিয়ে আপনার কী অভিমত?

আফজাল হোসেন: আগে মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাসী ছিল সম্পর্কে, জ্ঞানে, নীতিতে, ধর্মে। এখন মানুষ মুখে বলে শান্তি চায়, কিন্তু কাজের মধ্যে তার প্রতিফলন নেই। দেখি, একজন আরেকজনের চোখ উপড়ে নিয়ে তারপর বলে-‘এসো, শান্তি প্রতিষ্ঠা করি।’ এসব উন্মাদকাণ্ডেও মানুষ এখন আর দুঃখিত হয় না, সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন মানুষ এখন ধর্ম ও দেশপ্রেম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে?

আফজাল হোসেন: অবশ্যই। আগে মানুষ কে কতটা ধার্মিক, দেশপ্রেমিক-তা বোঝাতে চাইতো না। এখন মানুষ তা প্রকাশ না করতে পারলে জীবনকে অসম্পূর্ণ মনে করে। ফলে চারদিকে রাজনৈতিক আস্ফালন আর ধর্মীয় জ্ঞান বিতরণের প্রতিযোগিতা। অনেকে মনে করে, ধর্ম পালনের মাধ্যমে সে পরকালে উচ্চ আসনে পৌঁছে গেছে, আর এই জগতেই বিচার করতে বসে-কে বেহেশতে যাবে, কে দোজখে।

প্রশ্ন: আপনি মনে করেন, সামাজিক সম্পর্কগুলোর ভাঙন এখন কেন এতো বেশি চোখে পড়ে?

আফজাল হোসেন: আমার মনে হয়, এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ সময় ও মনোযোগের ঘাটতি। মানুষ এখন এতোটাই ব্যস্ত এবং লক্ষ্যকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে যে, গভীর সম্পর্ক গড়তে চায় না বা সময় দেয় না। আত্মকেন্দ্রিকতা, তথ্যপ্রবাহের চাপ আর দায়িত্বহীনতা-এই তিনে মিলে সম্পর্কগুলো শুধু ভাঙে না, অনেক ক্ষেত্রেই জন্ম নিতেও পারে না। আগে পরিবার, বন্ধুতা এগুলোর মধ্যে হৃদ্যতা ছিল, এখন সেখানে অনেকটা কৌশল ও হিসাব।

প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনি কী ধরনের মূল্যবোধকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?

আফজাল হোসেন: আমি মনে করি, তরুণদের সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো-সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ এবং আত্মসংযম শেখা। এখন চারদিকে একটি ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যে, ‘যা খুশি তাই করো’-এই স্বাধীনতাই আসল। কিন্তু বাস্তবে, স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে আসে দায়িত্ব এবং পরিণতির বোঝা। তরুণরা যদি শেখে নিজের মতপ্রকাশ করেও অন্যের মতকে সম্মান করতে, তবে সমাজে প্রকৃত শান্তি ও সৌহার্দ্য ফিরতে পারে। বইপড়া, প্রকৃত সংলাপ, নীরব পর্যবেক্ষণ-এসব এখনকার তরুণদের জীবনে খুব দরকার।

প্রশ্ন: সামাজিক অবক্ষয়ের পেছনে আপনি সবচেয়ে বড় দায়ী কাকে মনে করেন?

আফজাল হোসেন: আমি কাউকে এককভাবে দোষ দিতে চাই না। কিন্তু বলা যায়, দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাব, গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন এবং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা-এই তিনটি বিষয় একত্রে সমাজকে অনেকটাই বেসামাল করেছে। মানুষ এখন মনে করে, মূল্যবোধ আর নৈতিকতা দিয়ে কিছু হয় না, এটা খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। অথচ এই মূল্যবোধই তো আমাদের সভ্যতার ভিত্তি।

প্রশ্ন: আপনার লেখার একদম শেষে আপনি একটি তুলনা টেনেছেন-দাদাবাড়ি-নানাবাড়ি বনাম রাজনীতিবাড়ি-ধর্মবাড়ি। এ নিয়ে কিছু বলবেন?

আফজাল হোসেন: এখন অনেকের প্রিয় দুই ‘বাড়ি’ হলো-রাজনীতিবাড়ি আর ধর্মবাড়ি। ক্ষমতা, গুরুত্ব আর প্রভাবের আশায় মানুষ এখন মিথ্যুক, প্রতারক হলেও মান্যতা পায়। আমাদের ছোটবেলায় দাদাবাড়ি-নানাবাড়িতে ছোটদের সম্মান ছিল, স্বাধীনতা ছিল। এখন অনেক ‘বাড়ি’ মানুষের শেখায়-মানুষ ছোট, তাই এসো তাদের আরো ছোট ভাবতে শিখি। এই মনোভাব আমাদের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ধ্বংস করে দিচ্ছে।

শেয়ার করুন