৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০২:৪৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


আড্ডায় কথা সাহিত্যিক শাখাওয়াত
আমার সাথেই বিশ্বভ্রমণ করে একটি বাংলাদেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২২
আমার সাথেই বিশ্বভ্রমণ করে একটি বাংলাদেশ আড্ডায় মঞ্চে অতিথিবৃন্দ


কথা সাহিত্যিক শাখাওয়াৎ নয়নের সাথে নিউইয়র্কে আয়োজিত হলো প্রাণবন্ত সাহিত্য আড্ডা। গেল ১৭ জুলাই রবিবার  সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের উডসাইডের দেশি কুজিন রেস্টুরেন্টে এই আড্ডার আয়োজন করে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব-যুক্তরাষ্ট্র। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কবি আসাদ মান্নান। লেখক ও সম্পাদক আবু সাঈদ রতনের সূচনাবক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। দুই অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন কবি আনোয়ার সেলিম ও অনুবাদক রওশন হাসান। বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের আহ্বায়ক কবি মিশুক সেলিম, কথাসাহিত্যিক শাখাওয়াৎ নয়ন, কবি আসাদ মান্নান ও কবি ফকির ইলিয়াসকে নিয়ে মূল মঞ্চে আড্ডা শুরু হয়। মূখ্য সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন কবি ফকির ইলিয়াস।

শুরুতে শাখাওয়াৎ নয়নের সদ্য প্রকাশিত উপন্যাস ’বোহেমিয়ান’ নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি সৈয়দ মামুনুর রশীদ। তিনি  বলেন, এই উপন্যাসটি পাঠ করে আমার মনে হয়েছে- এ যেন আমাদের সমাজের হাজারো মানুষের কথা। এ যেন আমারই কথা। বিশেষ করে অভিবাসী জীবনের যে সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা- তার উৎসমুখের সন্ধান করেছেন লেখক ভূমিকা বক্তব্যের পর প্রথমেই কবি ফকির ইলিয়াস, শাখাওয়াৎ নয়নের কাছে জানতে চান, আপনাকে লেখক হতে হলো কেন? উত্তরে শাখাওয়াৎ নয়ন বলেন, আমি অনেক লেখকের লেখা পাঠ করার পর মনে হয়েছে, আমার কিছু বলা দরকার। আমারও বলার কিছু কথা আছে। তা বলতেই আমি লেখালেখিকে আমার বলার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি।

আড্ডায় সঞ্চালকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এই কথাসাহিত্যিক। তিনি বলেন, আমিও জীবনের মার্বেল খেলছি। তা গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে কী না- তা আমার জানা নেই। লেখকেরা কি আসলেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন- কবি আসাদ মান্নানের কাছে এই প্রশ্ন রাখেন সঞ্চালক। কবি বলেন, লেখক কী আদৌ গন্তব্যে পৌঁছার জন্যে লেখেন? আমি নেই- তুমিও নেই। আমি আছি- তুমিও আছো! এটাই লেখালেখির সারসংক্ষেপ বলে আমি মনে করি। লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন বলেন, আমি আমার ’অদ্ভুত আঁধার এক’ গ্রন্থটি একটি গল্পোপন্যাস হিসেবেই লিখেছি। এটি একটি খন্ড গল্পের সমাহার। একটি পর্ব পড়লে মনে হবে এটি একটি গল্প। আর পুরোটি পড়লে মনে হবে এটি একটি উপন্যাস। এই উপন্যাসের ’সালেহা’ চরিত্রটি বাংলাদেশের একজন নারীর মূর্ত প্রতীক হয়েই আমার লেখায় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আমি জোর করে কোনো চরিত্রকে নিষ্পাপ বা রোল মডেল বানাতে চাইনি। আমি বিত্ত-বৈভবের কাছে দ্রবীভূত হয়ে আমার বাঙালী লেখকসত্তাকে হারাতে চাইনি, চাইবোও না। যেখানেই থাকি আমার সাথে থাকে প্রিয় বাংলাদেশ। লেখক বলেন, বাংলা সাহিত্য এগোচ্ছে। কে কোথা থেকে লিখছেন- সেটা বিষয় নয়। সম্মিলিত প্রয়াসের নামই এগিয়ে যাওয়া।

কবি আসাদ মান্নান, লেখকের লেখা থেকে পাঠ করে বলেন, আমি এই লেখকের লেখায় কবিতার ঘোর লাগা বাক্যাবলির ঘ্রাণ পাই। তিনি চমক তৈরি করে বাক্য নির্মাণ করেন। লেখার পেছনে ঢেউ রেখে যান। অনুবাদ ও সাহিত্যের অর্থনীতি বিষয়ে কবি আসাদ মান্নান বলেন, আমাদের লেখা অনূদিত হয়ে বিভিন্ন ভাষায় ছড়িয়ে পড়ুক- এটা আমরা চাই। এই প্রজন্মের যারা ইংরেজীতে দক্ষ তারা এগিয়ে আসবেন, বাংলা সাহিত্যের দ্যুতি ছড়াবে এমন আশাবাদ আমি রেখেই যাচ্ছি।

আড্ডায় শাখাওয়াৎ নয়নের ছোটগল্প ’একজন হৃদয়বতী’ খুব চমৎকারভাবে পাঠ করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সংগঠক গোপন সাহা। তার পাঠ, সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষক ও প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার বলেন, শাখাওয়াৎ নয়ন প্রস্তুতি নিয়ে আসা লেখক। তার লেখা পড়লেই বুঝা যায় তিনি ব্যাপক পঠন-পাঠন সেরেই লেখালেখিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ডায়াসপোরা বলতে যা বুঝায় তা কেউ মানেন, কেউ মানেন না। তা নিয়ে অনেক মত থাকতেই পারে। কিন্তু একজন লেখক বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসেই তার ভাষায় লেখালেখি করতেই পারেন, যদি তা হয় মানবের জন্য- তার ভাষা ও সাহিত্যের জন্য।

বিশিষ্ট চিন্তক ও লেখক ডঃ আবেদীন কাদের বলেন, বাংলাদেশের একটি গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে যিনি লেখালেখি করেন, তিনিও ঢাকার অভিবাসী। তাই নয় কি! তাহলে শাখাওয়াৎ নয়ন সিডনিতে থাকেন, না নিউইয়র্কে থাকেন- সেটা তো কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, লেখক তার পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারলেই তিনি স্বার্থক। নয়ন, ক্রমশ: সেদিকেই এগোচ্ছেন বলে আমি বিবেচনা করি।

অধ্যাপক ও কবি হোসাইন কবির বলেন, লেখকের শক্তি হচ্ছে তার লেখা। এটা অর্জন করেই তাকে তার পাঠক তৈরি করতে হয়। শাখাওয়াৎ নয়ন তা করেই আমাদের মাঝে এসেছেন।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি ও শিশু সাহিত্যিক অনীলা পারভীন। আড্ডায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন, লেখক-গীতিকার ইশতিয়াক রুপু ও ডাঃ হাসান।

অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কবি শামস আল মমীন, কবি এবিএম সালেহউদ্দিন, সংগঠক মোশাররফ হোসেন, কবি আহমেদ ছহুল, কবি সৈয়দ আহমদ জুয়েদ, কবি সালেম সুলেরী, কবি স্বপ্ন কুমার, ছড়াকার আলম সিদ্দিকী, এক্টিভিস্ট ও শিল্পী সুতপা মন্ডল, কবি সুরীত বড়ুয়া প্রমুখ। দেশি কুজিনের স্পনসরে এই মনোগ্রাহী আয়োজনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাকী। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান এই আয়োজন সফল করার জন্য। সমাপনী বক্তব্যে কবি আসাদ মান্নান নিউইয়র্কের মতো জায়গায় এমন আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। শাখাওয়াৎ নয়ন এমন চমৎকার আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আয়োজকদের প্রতি।

প্রাণবন্ত আড্ডার সমাপ্তি ঘোষণা করতে গিয়ে রাইটার্স ক্লাবের আহ্বায়ক কবি মিশুক সেলিম স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে উপস্থিতি সকল কবি লেখক ও সুধীজনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।


শেয়ার করুন