২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৩৩:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


আইএমএফ থেকে লোন চায় বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২২
আইএমএফ থেকে লোন চায় বাংলাদেশ


 আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে লোন নেয়া না নেয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। অবশেষে লোন নেয়ারই সিদ্ধান্ত হয় এবং আনুষ্ঠানিক আবেদনও করেছে বাংলাদেশ। অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে  ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পেতে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে সরকার। গত ২৪ জুলাই রোববার অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভাকে এক চিঠিতে এ ঋণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সম্প্রতি সঙ্কটে পড়া বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাঙ্গা করা এবং মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা আনতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সরকার আইএম এফ এর কাছ থেকে এ লোন নেবে বাজেট সহায়তা হিসেবে। 

জানা গেছে এক বছর ধরে আইএমএফ থেকে এ ধরনের বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে আসছে সরকার। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনাও সেরে রেখেছে সরকার। আইএমএফের বাংলাদেশ অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সর্বশেষ আইএমএফের যে মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে তাদের সঙ্গেও আলোচনা করে বিষয়টিতে এগিয়ে রাখা হয়। আইএমএফ এ জন্য বেশ কিছু শর্ত দেয়ার কথা বলেছে। যেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়। তবু তাতে অনেকটাই রাজি হয়ে ওই সিদ্ধান্তে গেছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে  বিষয়টি বাস্তবায়নে দুই পক্ষ একটি করে প্রতিনিধি দল কাজ করে বিষয়টি এগিয়ে নেবে। তবে সব ঠিকঠাক চললেও এ লোন অনুমোদন পেতে ৫-৬ মাস লেগে যেতে পারে। 

বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য হারে ৪০ এর নিচে নেমে এলে এ নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তা শুরু হয়। গত ২০ জুলাই রিজার্ভ দাঁড়িছিল ৩৯ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। একই সঙ্গে ওই রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি বরং নিম্নমুখী। রপ্তানী থেকে আয়ও তুলনামূলক কমেছে। পাশাপাশি মান কমেছে টাকার। সর্বশেষ, ডলারের মূল্য খোলাবাজারে ১১০ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার জন্য প্রতি ডলার ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এবং এটা বাড়ছে। এ রকম অবস্থায় সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে নিরাপদ রিজার্ভ নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।

তবে ইতিপূর্বে বিভিন্ন আলোচনা যে বিষয়টি উঠে আসে সেটা হলো- আইএমএফ এই ঋণ ( লোন) দিতে বেশ কিছু শর্ত দিতে পারে সরকারকে। যার মধ্যে জ্বালানির ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়া অন্যতম। এটা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা। কারণ এ মুহূর্তে জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি মানেই দেশে সবকিছু মূল্য উর্দ্ধমুখী হওয়া থেকে আরো উর্দ্ধমুখী হতে থাকবে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে এটা ক্ষমতাসীনদের জন্য মাইনাস পয়েন্ট। 

এ ছাড়া অন্যান্য শর্তাবলীর মধ্যে থাকতে পারে জ্বালানি তেলের বাজারভিত্তিক দাম কার্যকর করা। ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদ হারে সীমা তুলে দেওয়া। ব্যাংক খাতে সুশাসন বাস্তবায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত হিসাব করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা এবং রাজস্ব সংগ্রহের ভিত্তি বাড়ানোর শর্ত দিতে পারে আইএমএফ। আগামী সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে আইএমএফের যে মিশন আসবে তারাই ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা করবে। বাংলাদেশ সরকার শর্তে রাজি হলে এ ঋণ অনুমোদনের জন্য আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তোলা হবে। তবে যাই হোক, আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, এতে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতা কমে আসার পাশাপাশি আর্থিক খাতে কিছু মৌলিক সংস্কার উদ্যোগও আসবে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার যে বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে সেখানে জোগান দেওয়া সহজ হবে। ফলে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন। 

উল্লেখ্য, এর আগেও বাংলাদেশ বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে। ১৯৯০ সালে আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেয় বাংলাদেশ। তখন সামান্য পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৩ সালে দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধি সুবিধার (প্রভার্টি রিডাকশন অ্যান্ড গ্রোথ ফ্যাসিলিটি) আওতায় বাংলাদেশ ৩০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। এরপর ২০১১ সালে টাকার মান দ্রুত অবনতি হলে সরকার এপটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির আওতায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করে। সর্বশেষ করোনার সময়ে র‌্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যান্ড পারচেজ অব র‌্যাপিড ফ্যাইনান্সিং ইনস্ট্রুমেন্ট আওতায় ৭৩ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ২০২১ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের কাছে আইএমএফের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ এসডিআর বা প্রায় ১২০ কোটি ডলার।

 

শেয়ার করুন