২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:২৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস শুভঙ্করের ফাঁকি
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
গ্যাস বিতরণে সিস্টেম   লস শুভঙ্করের ফাঁকি


 বাংলাদেশের গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থায় এখন তীব্র গ্যাস সংকট। ৪৩০০-৪৫০০ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ সরবরাহ ক্ষমতা (২৩৫০+৬৫০) ৩০০০ এমএমসিএফডি। প্রায় ৩০০০-৩৫০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অলস রেখে খরচে তরল জ্বালানি (ডিজেল, ফার্নেস অয়েল) দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। সার উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। শিল্পকারখানাসমূহে মানসম্মত গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। 

২০২৩ শেষ নাগাদ গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করার সুযোগ নেই, অথচ গ্যাস সিন্ডিকেটের করাল গ্রাসে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা।  তিতাস বিতরণ ব্যবস্থায় ৮ শতাংশ সিস্টেম লসের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু মিটারবিহীন গ্যাস গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বিষয়ে অত্যধিক পরিমাণ দেখানো হচ্ছে। প্রকৃত হিসাব পাওয়া গেলেই সিস্টেম লসের পরিমাণ ১০ শতাংশের কম হবে না, তাহলে ১৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রেই ১৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস দৈনিক চুরি- ডাকাতি হচ্ছে শুধু মাত্র তিতাস বিতরণ ব্যবস্থায়।

 সরকার স্বীকার  করে তিতাস বিতরণ ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ অবৈধ সংযোগ আছেই, হাজার হাজার কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন আছে। গৃহস্থালি গ্রাহকদের গ্যাস চুরি ছাড়াও একশ্রেণির শিল্পগ্রাহক মিটার ট্যাম্পারিং, মিটার বাই পাসিং করে বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি করে।  গ্যাস সংকটে যখন বহু মূল্যের এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, তখন এই ধরনের গ্যাস চুরি-ডাকাতি অবিলম্বে বন্ধ করা ফরজ হয়ে গাছে। একধরনের অবৈধ সিন্ডিকেটে এতো প্রভাশালী যে গ্যাস কোম্পানির মধ্যম স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অসম্ভব। 

গ্যাস সিস্টেম গ্যাস চুরি কম-বেশি শুরু হয়েছিল ১৯৮০ দশক থেকেই।  প্রথমে তিতাস গ্যাস থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বিজিএসএল এবং জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিতে ছড়িয়ে পরে। ১৯৯০-২০০১ পর্যন্ত নানা কার্যক্রমের মধ্যম এ গ্যাস চুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। কিন্তু ২০২২-২০০৬ আবারো চুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ২০০৯ -২০২১ গ্যাস চুরি সংক্রমণ ব্যাধিতে পরিণত হয়। গ্যাস সিটেমের এহেন অবস্থার জন্য ২০১০ থেকে এযাবৎ যত জ্বালানিমন্ত্রী, জ্বালানি সচিব এবং পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ছিলেন সবাই কম-বেশি দায়ী। 

দুর্নীতি পরায়ণ সিন্ডিকেটেদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। আয়ুব আলী খান চৌধুরীর মতো দুর্নীতিবাজ কর্তফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পেট্রোবাংলার পরিচালক হয়েছে। কিছু কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছে। অবাক লাগে ২০১০- ২০১৪ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা একজন প্রাক্তন আমলা। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পরিষদ সম্পূর্ণ আমলানির্ভর। 

এই মুহূর্তে গ্যাস চুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে ২৫০-৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। ৩০০০ এমএমসিএফডি দৈনিক গ্যাস সরবরাহের ২৩৫০ এমএমসিএফডি আসে দেশীয় গ্যাস সূত্র থেকে। ৪০০ এমএমসিএফডি আসে দীর্ঘকালীন এলএনজি ক্রয়ের চুক্তির অধীনে কাতার এবং ওমান থেকে। বাকি ২৫০ মিলিয়ন বহু মূল্যের স্পট মার্কেট থেকে। গ্যাস চুরি বন্ধ হলে স্পট মার্কেট থেকে আমদানি প্রয়োজন হবে না, শুধু চোরদের স্বার্থরক্ষার জন্য এলএনজি আমদানি বিলাস এখন আত্মঘাতী। 

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আশা করি।


শেয়ার করুন