২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৩:২০:০২ অপরাহ্ন


ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ আবেদনক্রমে এক বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারে
ইতিবাচক অ্যাসাইলাম আবেদন নিয়ে সুখবর ও দুঃসংবাদ
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২২
ইতিবাচক অ্যাসাইলাম আবেদন নিয়ে সুখবর ও দুঃসংবাদ


অ্যাসাইলাম অফিসে যাদের আবেদন স্থগিত রয়েছে, তাদের অবস্থা মহাদুর্যোগময়। তাদের আবেদন কবে শুনানির জন্য নেয়া হবে, কে কখন ডাক পাবেন বা কার আবেদন শুনানির পর কোর্টে পাঠানো হবে বা আবেদন মঞ্জুর করা হবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হচ্ছে তাদের, যারা শুনানিতে অংশ নিয়ে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করে আছেন। এই অপেক্ষার সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ বছর বা ততোধিক।

বর্তমানে ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি স্থগিত বা পেন্ডিং মামলা রয়েছে, এসব মামলায় অন্তত ৮ লাখ লোক অনেকটা ফাঁদে আটকা। এদের মধ্যে ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে আধা-যুগেরও বেশি সময় ধরে অনেকেই। তারা তাদের পরিবারÑ স্ত্রী, সন্তান থেকে পৃথক হয়ে অনিশ্চিত অস্তিত্বের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। এখন মনে হচ্ছে যে, পুরো ব্যবস্থাটা এক তুফানের মধ্যে আটকে আছে। এর মধ্যে হাজার হাজার নতুন মামলা যোগ হবে এবং একই সময়ে এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাতে মামলার স্তূপ দিন দিন বেড়ে যেতে থাকে। এই যে অ্যাসাইলাম নিয়ে ‘ভানুমতির খেল’ স্বাভাবিক কারণে শুরু হয়েছে, তাতে একদিকে কেউ লাভবান হলে, অন্যদিকে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে এসব নিয়ে এবং তা কীভাবে অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

কিছু কিছু ভালো খবর

যেসব ইতিবাচক বা এফারমেটিভ অ্যাসাইলাম আবেদনকারীর আবেদন স্থগিত আছে, তাদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্ট (ইএডি) কার্ড ইস্যু করা বা নবায়ন করা একটি সমস্যা। এখন কোর্টের এক আদেশে বলা হয়েছে, নতুন ইএডি কার্ড এক মাসের মধ্যে দেয়া হবে। তবে সেখানে সোশ্যাল সিকিউরিটির

থা বলা হয়নি। দেখা যাচ্ছে এক মাসের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পেলেও সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড পাচ্ছে না। তার জন্য অপেক্ষার শেষ নেই। এর জন্য যোগাযোগ করতে হবে সোশ্যাল সিকিউরিটি অফিসে, যা এখনো খোলা হয়নি। এরপর কেউ যদি ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করার জন্য আবেদন করেন, তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮০ দিন এক্সটেনশন বা বর্ধিত সময় দেয়া হয়। তবে সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে ১৮০ দিন সময় যথেষ্ট নয়। কারণ কোনো ওয়ার্ক পারমিট নবায়নে ১০ থেকে ১১ মাস সময় লাগছে। আর সে কারণে মানুষ তাদের কাজ হারাচ্ছে এবং ড্রাইভার লাইসেন্সের মেয়াদ গড়িয়ে যাওয়ায় চলাফেরা কিংবা গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আর তারা সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ইউএসসিআইএস বা সিটিজেনশিপ ও ইমিগ্রেশন সার্ভিসের অদক্ষতার জন্য সমস্যার শিকার হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইউএসসিআইএস এক নতুন রুল জারি করেছে ‘টেম্পোরারি বা অস্থায়ীভাবে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করার আবেদনের স্বয়ংক্রিয়ভাবে সময় বর্ধিতকরণ।’ এই বিধি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়ার্ক পারমিটের সময় ১৮০ দিন থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হবে। ইমিগ্রেশন সার্ভিস ওয়ার্ক পারমিট প্রসেসিং সময় কমানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে। আর প্রসেসিং সময় যদি কমে যায়, তাহলে স্বয়ংক্রিয় অটোমেটিক সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন না-ও হতে পারে।

আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে, কখন এই নতুন বিধি কার্যকর হবে। তবে মনে হচ্ছে, আগামী কয়েক মাস সময় লাগবে। এই পত্রিকায় এই কলামিস্ট বহু আগেই লিখেছেন যে, ইমিগ্রেশন সার্ভিস কতিপয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন টাইপের আবেদন যেমন ইবি-১, ইবি-২ ও ইবি-৩ প্রক্রিয়ার জন্য বর্ধিত ফি দিয়ে  (ক্ষেত্রে বিশেষে ১৭০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৫০০ ডলার করে) দ্রুত নিষ্পত্তিকরণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এই ব্যবস্থায় অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের স্থান নেই। তাদের জন্য অন্যান্য কতিপয় ক্যাটাগরির মতো প্রিমিয়াম সার্ভিস বা দ্রুত সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

এমনকি অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরির ওয়ার্ক পারমিট আবেদন কিংবা অ্যাসাইলাম পেয়েছেন যারা, তাদের এক বছর পর গ্রিনকার্ড আবেদনেও প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অনেক ইমিগ্রেশন পণ্ডিত অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের জন্য প্রিমিয়াম প্রসেসিংয়ের তদবির করে আসছেন, কিন্তু ইমিগ্রেশন সার্ভিস এক্ষেত্রে সমতা বিধানের জন্য প্রিমিয়াম সার্ভিসের ব্যবস্থা করেনি। তবে অনেকে মনে করেন, অতিরিক্ত ফি নিয়ে প্রিমিয়াম সার্ভিস চালু করলে তা পুরো অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক হবে। তাতে অ্যাসাইলামের আবেদনকারীরা পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। যদিও তারা সরাসরি উপকৃত হবেন না। 

ভালো সংবাদের তালিকায় এও দেখা যায় যে, ইমিগ্রেশন সার্ভিস অ্যাসাইলাম মামলা নিষ্পত্তিকরণে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তাতে অবশ্য অ্যাসাইলাম আবেদনকারীরা সরাসরি লাভবান হবেন না। ইমিগ্রেশন সার্ভিস অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ডের জন্য অপেক্ষার সময় ৬ মাস নির্ধারণ করেছে (অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরিতে থাকা আবেদন করেছেন, তাদের অপেক্ষার সময় এখন ২ থেকে ৩ বছর)। এক সময় ট্রাম্পের আমলের আগেও এক মাস, ২ মাস এমনকি ১৮ দিনেও গ্রিনকার্ড পাওয়া গেছে (এই কলাম লেখকের অন্তত তাই অভিজ্ঞতা) তবে ৬ মাস অপেক্ষার সময় নির্ধারণ অনেকটা সহনশীল।

এজেন্সি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য অপেক্ষার সময়ও আবার ৩ মাস নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য কি আদৌ অর্জিত হবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে, কিন্তু ইমিগ্রেশন সার্ভিস হাজার হাজার নতুন ওয়ার্কার নিয়োগ দিচ্ছে। বিগত ইমিগ্রেশন-বিরোধী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় এই সার্ভিসের কর্মকর্তার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমানো হয়েছিল। এ কারণে আশা করা যায় এক্ষেত্রে কিছু উন্নতি সাধিত হবে।

আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারো জন্য সুখবর হলেও আবার কারো জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে, তারা আফগানিস্তান থেকে আসা লোকদের অগ্রাধিকার দেবে। বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৩০ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্যারোল পেয়ে প্রবেশ করেছেন বা করবেন এবং অ্যাসাইলাম আবেদন করেছেন বা করবেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

বাইডেন প্রশাসন বলেছে, তাদের ৪৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। যদি কোনো ব্যতিক্রম সৃষ্টি না হয়, তাহলে ১৫০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে। অনেকে মনে করছেন, এ কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত হবে। এখনই অনেক আফগান মামলায় বিলম্ব শুরু হয়েছে। যদিও এই ঘোষণা আফগানদের জন্য সুখের, অন্যদের জন্য দুঃখের কারণ। আফগান ছাড়া অন্যদেরকে কম গুরুত্ব দেয়া হবে। এখন আগের এই সুখের ক্যাটাগরিতে ইউক্রেনবাসী যারা আমেরিকায় আসছেন, তারাও পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে অন্যদের দুরবস্থা আরো সমস্যা সঙ্কুল হবে। কাজেই অন্যরা সাক্ষাৎকার পেতে আরো সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। 

খারাপ সংবাদের ক্ষেত্রে আরো রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের ভিড়। এফারমেটিভ বা ইমিগ্রেশন বিভাগের আবেদনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা। ২০১২ সালের পূর্বে মার্চ মাস ছিল সীমান্ত অতিক্রমকারীদের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়। কিন্তু ২০১৩ সালের পর বেশি লোক আসছেন বসন্তের শেষ এবং গ্রীষ্মকালে। এর অর্থ সবকিছু গরল বেল। অর্থাৎ  এটা আশা করা যাচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে সীমান্তে অ্যাসাইলাম আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু এ বছর সবকিছু সমান নয়।

সে জন্য বাইডেন প্রশাসন টাইটেরল ৪২ প্রতিবন্ধকতা তুলে দিতে চায়। যে কারণে অধিকাংশ মাইগ্র্যান্ট স্বাস্থ্যগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পায়নি।  সে ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ছিল না অথবা তাদের কোনো অ্যাসাইলাম দাবির আবেদন ছিল কিনা তা দেখা হয়নি। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, টাইটেল ৪২ তুলে দিলে আরো অনেক বেশি অ্যাসাইলাম অফিসার নিয়োগ করা হবে। তাদের জন্য সেটা ভালো খবর। আর তা হবে এফারমেটিভ অ্যাসাইলাম আবেদনকারী বা ভিসা নিয়ে এসে ইমিগ্রেশনে যারা আবেদন করেছেন, তাদের জন্য দুঃখের খবর।

কারণ সীমান্তে গিয়ে কাজ করবেন বলে কর্মকর্তাদের অ্যাসাইলাম অফিসে কাজের জন্য পাওয়া যাবে না। তাতে আবেদনকারীরা হবে ভুক্তভোগী। তাদের মধ্যে অনেকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে সাক্ষাৎকারের জন্য। অবস্থা কিন্তু এর চেয়েও বেগতিক। কারণ নতুন রুলে অ্যাসাইলাম অফিসাররা ‘ক্ষুদে ইমিগ্রেশন জাজ’ হিসেবে কাজ করবে। সীমান্ত মামলা নিষ্পত্তিকরণে তাদের বর্ধিত ভূমিকা থাকবে। আর তাতে তারা সীমান্ত প্রতিটি মামলায় আগের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে পারে। একইসঙ্গে তারা ব্যাকলগ মামলার জন্য কম সময় পাবে। 

২০২১ সাল ছিল সীমান্তে আসা রেকর্ডসংখ্যক লোকের সমাবেশ এবং আগামী মাসে যদি টাইটেল ৪২ তুলে দেয়া হয়, তাদের আসার স্রোত বেড়ে যাবে। সে কারণে এটা মনে হয় যে, অনেক অ্যাসাইলাম অফিসার সীমান্তে মামলায় নিষ্পত্তি করতে ইমিগ্রেশন অফিসে যাদের মামলা স্থগিত, তাদের খেসারত দিতে হবে আরো বেশি। 

এখন এ অবস্থায় কীভাবে তা নিষ্পত্তি হবে তা দেখার বিষয়। ব্যাপক ইমিগ্রেশন সংস্কার ছাড়া তার নিষ্পত্তি নেই। এখন এমনকি যাদের সমস্যা রয়েছে, অর্থাৎ পরিবার পৃথক রয়েছে, তাদের জন্য বিভিন্নভাবে আবেদন নিবেদন করেও অনেক ক্ষেত্রে আগেভাগে সাক্ষাৎকার পাওয়া যাচ্ছে না। নিউইয়র্ক অ্যাসাইলাম অফিস আরো ব্যাপকভাবে হযবরল অবস্থায় পড়েছে। কোনো মামলা আগেভাগে ডাকলেও সাক্ষাৎকারের জন্য একই ধরনের মামলা ডাকা হচ্ছে না। পরিশেষে বলা যায়, তারপরও দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা লোকজন, যারা আমেরিকায় নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে চায়, তাদের জন্য অ্যাসাইলাম ছাড়া অন্য কোনো পথে তেমন সুফল পাওয়া যায় না।


শেয়ার করুন