২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:৩২:৫৮ পূর্বাহ্ন


জনমত জরিপে বদরুল-মঈনুল প্যানেল এগিয়ে
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ৫ জুন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২২
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ৫ জুন


আমেরিকা প্রবাসী বৃহত্তর সিলেটবাসীর ঐতিহ্যবাহী সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার নির্বাচন আগামী ৫ জুন রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ১১ হাজার ৯২। যার মধ্যে ১০ হাজার ৬৪৮ সাধারণ ভোটার এবং ৪৪৪ জন লাইফ মেম্বার। আগামী ৫ জানুয়ারি ৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা তাদের টছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। নিউইয়র্ক কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে, নিউজার্সি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এবং ফিলাডেলফিয়া কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটকেন্দ্রগুলো হচ্ছে এস্টোরিয়ার এনটিভি ভবন, ওজন পার্কের দেশি সেন্টার, ব্রঙ্কসের নীরব রেস্টুরেন্ট, নিউজার্সির ফায়ারম্যান হল এবং ফিলাডেলফিয়ার আল শ্যাম রেস্টুরেন্ট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আতাউর রহমান সেলিম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ৫টি ভোটকেন্দ্রে মোট ২০টি মেশিন ব্যবহার করা হবে। তবে আইডি ছাড়া কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। তিনি আরো জানান, ভোট গ্রহণ শেষে রাতেই বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হবে। একটি সুষ্ঠু, অবাদ, সন্দুর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তিনি সকল জালালাবাদবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ১৯ পদের মধ্যে ১৪ জন প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় আগেই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে। আগামী ৫ জুন ৫টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত সবাই বদরুল-মঈনুল প্যানেলের। পাঁচটি পদের জন্য লড়ছেন বদরুল-মঈনুল পরিষদ থেকে সভাপতি পদে সংগঠনের সাবেক সভাপতি বদরুল খান, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কোষাধ্য মঈনুল ইসলাম, সহ-সভাপতি (সিলেট জেলা) পদে এমডি লুকমান হোসেন, কোষাধ্য পদে মোহাম্মদ আলিম এবং সাংগঠনিক ও সাদস্যিক সম্পাদক পদে ইফজাল চৌধুরী। 

অপর দিকে স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদুল হক ছানু, সাধারণ সম্পাদক পদে সাইকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি (সিলেট) শাহ মিজানুর রহমান, কোষাধ্য মিসবা উদ্দিন আহমেদ এবং সাংগঠনিক ও সাদস্যিক পদে শহীদুল হক।

আমেরিকায় বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটের চারটি জেলার ৩৯ থানার বাসিন্দারা ভোট দিয়ে থাকেন এ নির্বাচনে। অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের দিনণ যতই এগিয়ে আসছে, প্রার্থীদের তত্পরতা, প্রচার-প্রচারণা ততই তুঙ্গে উঠছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে শুধু জালালাবাদবাসীরাই নয়, প্রবাসী পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিতেই সৃষ্টি হয়েছে কৌতুহল। এই সংগঠনটির নির্বাচন ইতোমধ্যেই মাতিয়ে তুলেছে কমিউনিটিকে। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা আর সমীকরণ। তারা হিসাব করছেন, কাকে ভোট দিলে সংগঠন বেশি গতিশীল হবে। কারা জালালাবাদবাসীর বহুদিনের স্বপ্নের একটি স্থায়ী ভবন তৈরি করে দিবেন। এ পর্যন্ত বদরুল-মঈনুল প্যানেল থেকেই বলা হচ্ছে তাদের নির্বাচিত করা হলে ১০০ দিনের মধ্যেই তারা জালালাবাদবাসীর স্বপ্ন পূরণ করবেন। অর্থাত জালালাবাদ ভবন করে দিবেন। অন্যদিকে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের এই নির্বাচন নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এবারের নির্বাচনে মাত্র কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন করে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বিপুল অঙ্কের অর্থ অপচয় করছেন। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের ভোটারও বানায়নি, আবার সংগঠন অর্থ অপচয় করছে। তারা বলেন, এই নির্বাচনে কমপক্ষে ১ লাখ ডলার খরচ হচ্ছে। মাত্র কয়েকজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে এই অর্থ খরচ হচ্ছে। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভালো চায় না, তাদের ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

এদিকে জনমত জরিপে দেখা গেছে, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে বদরুল-মঈনুল প্যানেল এগিয়ে। তারা তাদের এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখলেই তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হবেন।

বদরুল হোসেন খান: জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী বদরুল হোসেন খান বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের মধ্যেই জালালাবাদবাসী স্বপ্নের ভবন পাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জালালাবাদবাসীর সেবা করতে চাই। এর আগেও একাধিকবার সভাপতি হয়েছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে ভবন করতে পারিনি। তবে আমরা এই নিউইয়র্ক শহরে বিশ্ব জালালাবাদ সম্মেলন করেছিলাম। দেশে এবং প্রবাসের সিলেটবাসীর যে কোন সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমাদের প্যানেল হচ্ছে যোগ্য প্যানেল। এই প্যানেলকে ভোট দেয়ার জন্য তিনি জালালাবাদবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, শুধু ভাবন নয়, নির্বাচনে আমরা যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সব প্রতিশ্রুতি ইনশাল্লাহ রক্ষা করবো।


জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবন বানিয়ে দেব: মইনুল ইসলাম

নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালিদের অন্যতম বড় সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। আগামী ৫ জুন সংগঠনটির নির্বাচন। কিন্তু আগে থেকেই এর নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল একটি। সেটি বদরুল-মঈনুল পরিষদ। এবারের নির্বাচনে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ি ও রূপসী বাংলার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মইনুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির কোষাধ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাক্ষাত্কারে মইনুল ইসলাম কথা বলেছেন নির্বাচন, নির্বাচিত হলে তার পরিকল্পনা এবং সংগঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। মইনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন রূপসী বাংলার নির্বাহী সম্পাদক মুবিন খান।

প্রশ্ন: শুরুতে আপনার কাছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন সম্পর্কে জানতে চাইছি। 

মঈনুল ইসলাম: জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অঞ্চলভিত্তিক তো একটি নন-প্রোফিট অর্গানাইজেশন এবং নিউইয়র্কের অন্যতম বড় একটি সংগঠন। আমরা মানবতার সেবাতেই কাজ করি। যেমন ধরুন, করোনা ভাইরাস মহামারীর সময়টিতে আমরা মৃতদেহ সত্কারের ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা সংগঠনের প থেকে মানুষকে সহযোগিতা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছি। আবার ধরুন বাংলাদেশ থেকে কিংবা অন্য দেশ থেকে যে সব বাংলাদেশিরা এখানে আসেন, তাঁদের অনেকেরই অনেক সময় কাগজপত্র নিয়ে সমস্যা হয়, অনেকের কাগজপত্র থাকেও না। আমরা তাঁদেরকে আইনি সহায়তা দিই। তাঁদের সমস্যাগুলো সমাধানে সাধ্যমত সহযোগিতা করতে চেষ্টা করি। এসব ছাড়াও খাদ্য সহযোগিতা, শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ -এমন নানান কর্মকাণ্ড যার সবই মানুষের কল্যাণে। এবং সবটাই অলাভজনক।

প্রশ্ন: রিয়েল এস্টেট মাধ্যমে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও আপনি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের মতো সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কেন?

মঈনুল ইসলাম: দেখুন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন তো একটি অঞ্চল ভিত্তিক সংগঠন। সেকারণে ফলে যারা সিলেট অঞ্চলের মানুষ তাঁদেরই এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত। কেননা এটিকে কেবলই একটি সংগঠন হিসেবে দেখবার সুযোগ নেই। এটি আসলে নাড়ির টান এবং বিদেশের মাটিতে এই সংগঠনটি আমার দেশের, আমার অঞ্চলের মানুষদেরকে একটি ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। 

প্রশ্ন: আমরা জেনেছি আপনি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন? দীর্ঘ একটা সময় ধরে আপনি এই সংগঠনের কোষাধ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সাধারণ সম্পাদক হতে চাইছেন কেন? 

মঈনুল ইসলাম: আমাদের এই জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন আজকের নয়। এর বয়স ৩৮ বছর হয়েছে। এর মোট সদস্য এখন এগারো হাজারেরও বেশি। কিন্তু দেখেন, এতো পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন কিন্তু আমাদের কোনো নিজস্ব ভবন নেই। এটি থাকার কথা ছিল এবং উচিতও ছিল। তো যে কারণেই হোক নিজস্ব ভবন হয়নি। আমি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছি, ভোটাররা যদি আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবন আমি করে দেব এবং সেটা নির্বাচিত হওয়ার একশো দিনের মধ্যেই কাজটি করবো। এটি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

প্রশ্ন: মানে যেদিন নির্বাচন তার পরদিন থেকে হিসেব করে তিন মাস দশ দিনের মধ্যে আপনি ভবন করবেন?

মঈনুল ইসলাম: হ্যাঁ, ফলাফল ঘোষণার পরদিন থেকে একশো দিনের মধ্যে। একইসঙ্গে আপনার মাধ্যমে আমি সকলকে এটাও জানাতে চাই, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ওই ভবনটি নিউইয়র্কের চার ডিস্ট্রিক্টের সকল সংগঠন ব্যবহার করতে পারবে আর এজন্যে তাঁদেরকে কোনো মূল্য বা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে না। এটি আমরা সম্পূর্ণ ফ্রিতে ব্যবহার করতে দেবো।

প্রশ্ন: একটু আগে পরিবর্তন আনবার কথা বলছিলেন। সেটা একটু জানতে চাই। কি ধরনের পরিবর্তন আনবেন?

মঈনুল ইসলাম: জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৩৮ বছর হয়ে গেল। পুরোনো সকলে এখন নেই সে কথা সত্যি। কিন্তু একই সঙ্গে নতুন নেতৃত্বও তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে আসেনি। আমি চাই তরুণ যারা তারাও এগিয়ে আসুক। আমার এই চাওয়াটি কমিউনিটির স্বার্থেই। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। তারা বড় হচ্ছে ভিন্ন এক সমাজে ভিন্নরকম সমাজব্যবস্থায়। তাদেরকে যদি আমরা আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করি তাহলে তারাও আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠলো একইসঙ্গে এদেশে তাদের যা অর্জন তা থেকেও সংগঠন অনেক কিছু পাবে বলে আমার মনে হয়।

শেয়ার করুন