০৫ মে ২০১২, রবিবার, ১০:১৪:৫৩ অপরাহ্ন


সোহেল তাজ কী আ.লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৮-২০২২
সোহেল তাজ কী আ.লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক?


সোহেল তাজ রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার খবরে আওয়ামী লীগে বেশ চাঙ্গা ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে দলের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তিনি যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরবেন এটা অনেকেই ধারণাও করতে পারেননি। কিন্তু সোহেল তাজ নিজেই জানাচ্ছেন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দলের (আওয়ামী লীগের) জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে দল যদি মনে করে, আমি অবদান রাখতে পারি, তাহলে আমাকে ডাকলে যাবো। আমি আওয়ামী লীগের জন্য অতীতে প্রস্তুত ছিলাম, এখনো প্রস্তুত, ভবিষ্যতেও তৈরি থাকবো।’ 

কিন্তু এখন প্রশ্ন কোন পদে তাকে দেয়া হবে দলের দায়িত্ব। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের যে আলোচনা তাতে উঠে আসছে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ। কেননা বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তারের অনেক বারণ নিষেধ সত্ত্বেও তিনি দলের স্বার্থে পালন করে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হলে অনেকটা হাল ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ রহম করেছেন। ভারত থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল ড. দেবী শেঠিকে। তার পরামর্শে শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেয়ে অনেক চিকিৎসার পর আবার সুস্থ হয়েছেন এবং দলের প্রয়োজনে আবারো মাঠে ফিরেছেন। কিন্তু তার পক্ষে এতো বড় লোড নেয়া সম্ভবপর নয় এটা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও জানেন। কিন্তু কে হবে তার স্থলাভিষিক্ত। 

যারা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে তাদের ওপর সেভাবে আস্থা নেই বিধায়, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের পুত্র সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী  এবং অভিমান করে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া সোহেল তাজের শরণাপন্ন। জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডের অনুরোধ এবার আর ফেলতে পারেননি। এর আগেও তার জন্য অপেক্ষা ছিল, মন্ত্রিত্বে তিনি ফিরবেন। কিন্তু ফেরেননি। তবে দীর্ঘ এ সময় তিনি বাংলাদেশে আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। তিনি নিজের মেজ বোনের (সিমিন হোসেন রিমি) নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিলেও নিজে প্রার্থীও হননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা কিছু কর্মকাণ্ডে। সম্ভবত আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই তাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাবে। 

এ ব্যাপারে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ আরো বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ পদ্মা সেতু। এখন প্রয়োজন মানবিক উন্নয়ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের মানুষের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাচ্ছেন বলে আমি মনে করি। সেজন্য তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পাশে যোগ্য ও নিবেদিত মানুষ প্রয়োজন, তাকে সহায়তা করার জন্য।’ 

এর আগে সর্বশেষ সোহেল তাজকে রাজপথে দেখা গিয়েছিল গত ১০ এপ্রিলে ২০২২ এ। ওইদিন বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে পদযাত্রা করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন পর্যন্ত যান। কেউ চাইলে তাঁর সঙ্গে পদযাত্রায় শামিল হতে পারেন। ফেসবুকে এমন প্রচারণায় বেশকিছু মানুষ সময়মতো সমবেত হন।  ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরকে (জেলহত্যা দিবস) জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনসহ তিনটি দাবিতে পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তিন দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। আওয়ামী লীগের সাবেক এ সংসদ সদস্য গণভবনের সামনে প্ল্যাকার্ডসহ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। এ কর্মসূচিতে সোহেল তাজের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন বিভিন্ন বয়সের বেশকিছু নারী ও পুরুষ।

ওইদিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৪টার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ গেটের সামনে (মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ প্রান্ত) অবস্থান নেন সোহেল তাজ। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুনসহ তার সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনদফা দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে হেঁটে গণভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন সোহেল তাজ। তার সঙ্গে যোগ দেয়া নারী-পুরুষ তিনদফা দাবি উল্লেখ করে সেøাগান দেন।

১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এবং জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি এবং তা চর্চার দাবি জানান সোহেল তাজ।

দুই পৃষ্ঠার স্মারকলিপিতে সোহেল তাজ ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন কেন প্রয়োজন তা-ও তুলে ধরেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের অজ্ঞতা ও অনাগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। এজন্য এ ইতিহাস সবস্তরের পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তার স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। স্মারকলিপির শেষে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ লিখে নিজেকে ‘প্রহরী ৭১’ দাবি করেন। 

ওই ঘটনার পর আর কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। তবে ফেসবুকে তার একটি প্রোগ্রাম রয়েছে ‘হটলাইন কমান্ডো’, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।  

এদিকে গত ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ৮১ সদস্যের কমিটির ৪২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানে ৩৯ জনের নাম ঘোষণা বাকি ছিল। এর কিছুদিনের মধ্যেই বাকি ৩৯ জনের নাম ঘোষণার কথা থাকলেও ৩২ জনের নাম ঘোষণা করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ও শফিউল আলম নাদেলের নাম ঘোষণা করা হয়। অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়াসিকা আয়েশা খান।

এবার আওয়ামী লীগের কোন পদে কে আসছেন তার চেয়েও বড় কথা সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন। নাকি ওবায়দুল কাদেরই কন্টিনিউ করবেন। তবে শোনা যাচ্ছে, নতুন কাউকেই দেয়া হবে ওই দায়িত্ব। যিনি গোটা দেশে সাংগঠনিক সফরে চষে বেড়িয়ে দলকে চাঙ্গা করে তুলতে সক্ষম হবেন। এদের মধ্যে অনেক নাম শোনা গেলেও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও রয়েছেন আলোচনায়। এর বাইরেও কয়েকটি নাম উচ্চারিত হলেও সর্বশেষ সোহেল তাজ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ফিরতে আগ্রহী হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বটা তাকেই দেয়া হতে পারে। কারণ দল ও দলের বাইরেও সোহেল তাজের ক্লিন একটা ইমেজ রয়েছে। তাছাড়া সোহেল তাজ একটি পরীক্ষিত রাজনৈতিক ফ্যামিলির সদস্য। যার রাজনীতিতে কিছু মানদণ্ড বজায় রেখে চলার ইমেজও রয়েছে। তবে এর বাইরেও বর্তমান কমিটি থেকে বাছাই হতে পারে যে সকল স্থান থেকে তা হলো- 

সভাপতিমণ্ডলী

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, আবদুল মতিন খসরু, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান।

কার্যনির্বাহী

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বদর উদ্দিন কামরান, দীপঙ্কর তালুকদার, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম, আক্তার জাহান, ডাক্তার মুশফিক, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার, মেরিনা জামান কবিতা, পারভিন জামান কল্পনা, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, অ্যাডভোকেট সফুরা খাতুন, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম রব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। 

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এদের মধ্যে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

সাংগঠনিক সম্পাদক

আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজম। এর মধ্যে আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আগের কমিটিতেও একই পদে ছিলেন। আর আগের কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন বাকি দু’জন।কমিটির এসকল সদস্যের মধ্য থেকে।


শেয়ার করুন