১৭ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৫:৩৫:১২ অপরাহ্ন


থাইল্যান্ড সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
‘ধরে নিলাম তারা আমাকে উৎখাত করবে, কিন্তু এরপর কে আসবে ক্ষমতায়’
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৫-২০২৪
‘ধরে নিলাম তারা আমাকে উৎখাত করবে, কিন্তু এরপর কে আসবে ক্ষমতায়’


“ধরে নিলাম তারা আমাকে উৎখাত করবে। কিন্তু এরপর কে আসবে ক্ষমতায়- তারা কি সেটা ঠিক করতে পেরেছে? সেটাই আমার প্রশ্ন- কে আসবে ক্ষমতায়? কে দেশের জন্য কাজ করবে? কাকে তারা আনতে চায় (ক্ষমতায়) সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয় আর সেটা স্পষ্ট নয় বলেই তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না।” থাইল্যান্ড সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে নানা প্রশ্নের উত্তরের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেণ, “আমাদের দল তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মানুষের আর্থসামাজিক যে উন্নয়ন, এটাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানুষ যে শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্যই এই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কাজেই আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায় এবং এটা প্রমাণিত সত্য আর সেই কারণেই যত বাধাই আসুক, আমরা সেই বাধাটা পেরিয়ে যেতে পারি বা যত চক্রান্ত হোক, সেই চক্রান্তগুলোকে পাশ কাটিয়ে দেশের মানুষকে সাথে নিয়েই আমরা বিজয় নিয়ে আসি।”  


শেখ হাসিনা বলেন, “এটা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় থেকে শুরু করে এবং এই নির্বাচন জায়গায় এটা প্রমাণিত। কাজেই এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনতাই ঘটেছে। এখন যারা- ‘গণতন্ত্র নাই, দেশে ভোটের অধিকার নাই’ বলে তারাই তো মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, এটাই তারা ভুলে যায়। আর অনেকে নানা ধরনের কথা বলেন। অনেকে উন্নয়নটা চোখে দেখলেও কেউ কেউ দেখেন না।”  


এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, উন্নয়নটা তারা নাও দেখতে পারেন, কারণ তাদের হয়তো উন্নয়নের ফর্মুলাটা ভিন্ন আর আমার উন্নয়নটা হচ্ছে আমার গ্রামের মানুষ দু’বেলা পেট ভরে খাবে, তাদের একটু বাসস্থান হবে, চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে ও জীবন মান উন্নত হবে।  
তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনারা তো সাংবাদিক, আপনারাই বলেন বেশিদিন নয় মাত্র ১৫ বছর আগেই দেশের অবস্থা কেমন ছিল? এখন কি কোন পরিবর্তন হয়নি? এখন কেউ যদি উন্নয়নটা না দেখে- তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।”


 
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের তো কিছু লোক রয়েছে, যারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কানভারী করছে। তারা অনেক জ্ঞানী গুণী বুদ্ধিজীবী এবং তারা যখন সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা বলতেই থাকবে, কিছুটা (বিদেশিরা) তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার দেশের মানুষইতো অনেকে প্রভাবিত হয়ে যায় আর বিদেশীরা তো হবেই। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু এসব কথায় প্রভাবিত হয় না। তারা কিন্তু ঠিক আছে। তাদের একটা আত্মবিশ্বাস আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত আমরা করেছি।  
   


প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমি বলবো অনেক কিছুই হয়েছে, চেষ্টা করা হয়েছে যাতে নির্বাচনটা না হয়।   অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট এখনো টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।  


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবণে সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কথা বলেন। তিনি গত ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে থাইল্যান্ড সফর করেন। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক এই সফরে তিনি ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০ তম অধিবেশনেও যোগ দেন।


প্রশ্নত্তোরপর্বে শেখ হাসিনা একটি রেফারেন্স টেনে বলেন, “যেমন ধরুন সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচন করতে হলে জনগণকে তো দেখাতে হবে আপনাদের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন বা নেতা কে হবেন? একজন নেতাকে তো দেখাতে হবে। আপনাদের কাছে যদি এখন উপযুক্ত নেতা না থাকে তখন তো আপনাকে একটা ছুতা খুঁজতে হয়। হ্যাঁ নির্বাচন করলাম না, বাস্তবতা সেটাই। আমাদের দেশে ওটাই এখন হচ্ছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বা পলাতক আসামীকে যদি জনগণের সামনে দেখান তাহলে পাবলিকতো সেটা মেনে নেবেনা।  


শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করতে গেলে তো ঝুঁকি নিতে হয়। এ সময় ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর তাঁকে দেশে আসতে না দেওয়ার এবং শেখ রেহানার পাসপোর্টটি পর্যন্ত নবায়ন না করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যেখানে তাঁর বাবার খুনিরা পুরস্কার প্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন এবং সাজাপ্রাপ্তও ছিলো তাদের ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ প্রদান করা হয়, তারাই ক্ষমতায়। তারাই মন্ত্রী-উপদেষ্টা।  
প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন উপজেলা নির্বাচন নিয়েও। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জন করে কেন? কারণ তাদের নির্বাচন করার মত সক্ষমতাই নাই।  


তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান এবং একে প্রভাবমুক্ত রাখাই আমার লক্ষ্য। সেখান থেকে যারাই জিতে আসে আসবে। সেটা হলো বাস্তবতা। মানুষ যাকে চাইবে সে-ই জয়ী হয়ে আসবে। যেমন আওয়ামী লীগকে চেয়েছে (ক্ষমতায়) আওয়ামী লীগ চলে এসেছে। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে এই প্রক্রিয়াটাকে আরো গণমুখি এবং স্বচ্ছ করা।’  


নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রথম আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। আগে কখনও এটা করা হয়নি। অতীতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আর্থিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল  উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার এটাকে সেখান থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত করে দিয়েছে। আলাদা বাজেট দেওয়া হয়েছে।  


তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিত করেছি যে, দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনী ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন সেই ’৭৫ সালের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন, ‘৭৭ সালের ‘হ্যাঁ-না’ ভোট থেকে নিয়ে যতগুলো নির্বাচন প্রত্যেকটা নির্বাচনকে নিয়ে যদি তুলনা করা হয় তাহলে দেখবেন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যেকটি নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার নির্বাচনই হয়েছে। যেটা আমাদের লক্ষ্য ছিল । কারণ, এদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছি।  


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ। কাজেই জনগণের শক্তির উপর আমি সবসময় বিশ্বাস করি এবং আমি এটাও বিশ্বাস করি যে- জনগণ যতক্ষণ চাইবে, ততক্ষণই ক্ষমতায় থাকব। কারণ আমরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছি।  
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের পক্ষে রয়েছে উল্লেখ করে- প্রধানমন্ত্রী সেখানে গণহত্যা বন্ধের ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করে তার অর্থ দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় এবং জলবায়ু তহবিলে প্রদানের আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।  


তিনি বলেন, আমরা সব সময় ফিলিস্তিনিদের পাশে আছি এবং আন্তর্জাতিকভাবেও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। যেখানেই নির্যাতিত মানুষ, সেখানেই বাংলাদেশ আছে- এটাই আমি প্রমাণ করতে চাই। আমি যেখানেই যাই, সেখানে আমার কথা আমি বলবই। কারণ যেভাবে গণহত্যা চলছে, সেটা অমানবিক।  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন যে-  আমেরিকায় আন্দোলন করার জন্য ৯শ’ ছাত্র ছাত্রী ও অধ্যাপক গ্রেফতার হয়েছেন আর এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ।  


সেখানে একজন অধ্যাপককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাস্তায় ফেলে নির্যাতন করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই ঠিক যেভাবে তাদের সন্ত্রাসী ও পুলিশবাহিনী অত্যাচার করেছিল, এটা সেই অত্যাচারের কথাটাই মনে করিয়ে দেয়। অথচ তাদের কাছ থেকেই আমাদের মানবাধিকারের ছবক নিতে হয়, এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের।  
আমেরিকায় বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তাদের আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত।  

তিনি বলেন, আমেরিকায় বিভিন্ন স্কুল, শপিং মল, রেস্টুরেন্টে অনবরত বন্দুক হামলা হচ্ছে আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নাই বোধ হয় যে, আমেরিকায় মানুষ না মরছে। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।  
 
 
 
আমেরিকায় বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগেও আমাদের বাংলাদেশি কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং বিচার করে তারা আমাকে জানিয়েছে। আমাদের যেটুকু করার সেটা আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রতিবাদ শুধু এখানেই না, আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। সূত্র: বাসস। 

শেয়ার করুন