৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:৪৩:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন
মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া!
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া! খালেদা জিয়া


কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ব্যাপকভাবেই করে বিএনপি। ওটা এখনো আছে। বিএনপির দাবিসমূহের মধ্যে এটাও একটা। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই আওয়াজ উঠেছে, খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন! কখন সে মুক্তি এবং কীভাবে-এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা থাকলেও স্পষ্ট নয় বিষয়টি। তবে সক্রিয় আলোচনা খালেদা জিয়াকে নিয়ে এখন সর্বত্র। গুঞ্জন কোনো এক প্রক্রিয়ায় সরকার হয়তো মুক্তি দিয়ে দেবেন খালেদা জিয়াকে। কেননা, যে জামায়াতকে দীর্ঘদিন মাঠেই নামতে দেয়নি, সে জামায়াতকে অনেকটাই জামাই আদরে সম্মেলন করতে দিয়ে উদারতা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের পক্ষে সাফাইও গাইছেন কেউ কেউ যে, ‘জাময়াত তো নিষিদ্ধ দল নয়’। এমতাবস্থায় দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ নির্বাহীর বিশেষ আদেশে মুক্তি দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাসে যেহারে দৌড়ঝাঁপ চলছে, তাতে রাজনীতির মাঠে ভিন্ন এক আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর সেটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রাণান্ত চেষ্টা। যাতে বিএনপি বর্তমান ধারার নির্বাচনে আসতে রাজি হয়। 

কয়েক দিন আগেও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি বাতাসে উড়িয়ে দিতেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এখন সেখান থেকেই সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আভাস দেওয়া হচ্ছে। দলের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু তো বলেই ফেলেছেন, সংলাপের কথা। বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখার পর এটা আবার ব্যক্তিগত অভিমত। সংলাপের চিন্তাও নেই আওয়ামী লীগের এমন সব কথা বলা হচ্ছে। আবার গত ৯ জুন ওবায়দুল কাদের বললেন, সংলাপ নিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই, সিদ্ধান্ত নেই। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে বলতে পারবো।

তিনি বলেন, তারা আওয়ামী লীগের জন্য নিষেধাজ্ঞা আনতে গিয়ে তারা এখন নিজেরাই ভিসানীতির ফাঁদে পড়েছে। ভিসা নিতে এসব আগুন সন্ত্রাস, নির্বাচনে বাধা দেওয়া, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ওই নিয়মনীতির আওতায় পড়ে। এটা শোনার পরে তাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। মুখে যদিও বলছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি নিয়ে আসছে। এই তিনটি না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না। সরকার কেন পদত্যাগ করবে? কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন? কোনো কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে? এ কথায় কী রয়েছে তা পাঠক নিজেরাই অনুধাবনে সক্ষম হবেন। 

আসলে রাজনীতি এটাই। কেউ কথা বলে পালস বোঝার চেষ্টা করে আবার কেউ কথামালা ছড়িয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার চেষ্টা করেন। যেমনটা ওই ঘটনার পরে আইনমন্ত্রী যেমনটা বলছিলেন আর কোনো হয়রানিমূলক মামলা নয়। 

ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের ভেতর থেকে এসব কথাবার্তা একটা বার্তা নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। কারণ ভিসানীতির একটা খড়গ মাথার ওপর ঝুলছে অনেকেরই। যাদের স্বপ্ন আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপসহ বিভিন্ন উন্নতশীল যাওয়ার তাদের মধ্যে। ফলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এমন এক মার্কিন ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। 

এ সুযোগটাই বলে দিচ্ছে, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে ফিরতে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিদান অন্যতম বড় রেফারেন্স হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। যদিও কিছুদিন আগে মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। এর ব্যাখ্যাও হয়েছে। তাতে খালেদা জিয়া বিশেষ ব্যবস্থায় কারাগারে না থেকে তার নিজ ভাড়া বাসা ফিরোজাতে অনেকটাই গৃহবন্দি অবস্থায়। এছাড়াও চরম অসুস্থও তিনি। যদি তিনি মুক্ত থাকতেন, তাহলে তিনি চিকিৎসার জন্য বাইরে চলে যেতেন যা তার পরিবারের পক্ষ থেকে বহুবার আবেদন করা হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের কাছে। কিন্তু সে অনুমতি মেলেনি। কারণ খালেদা জিয়া বহু জটিল রোগে আক্রান্ত। তাই তার সব রোগের চিকিৎসা একত্রে প্রয়োজন মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে। ওই রকম উন্নত প্রযুক্তি বাংলাদেশে নেই, বিধায় দেশের বাইরে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তার। 

কবে মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া? 

গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির দেশব্যাপী বিভাগীয় সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের সমাবেশটি ছিল ঢাকায়। নানা নাটকীয়তা শেষে সে সভা হতে পেরেছে রাজধানীর মুগদা, কমলাপুর এলাকার গোলাপবাগ মাঠে। ওই সমাবেশের আগে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা আমানউল্লাহ আমান বলেছিলেন, জনসভায় খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। সে বক্তব্য নিয়ে সর্বস্তরে একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে ১০ ডিসেম্বরের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবীর রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালামসহ একঝাঁক নেতা ও কর্মী আটক করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। প্রেরণ করা হয় কারাগারে। পরে আর ওই আলোচনা বা খালেদা জিয়ার জনসভায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি আর আলোচনাতে আসেনি। টালমাটাল অবস্থায় শেষ মুহূর্তে গোলাপবাগ মাঠে অনুমোদন পেয়ে বিএনপি কোনোমতে ওই সমাবেশ শেষ করে। যেদিন ঢাকাতে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ। 

এরপর থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি থাকলেও আর মুক্তি পাচ্ছেন এ আলোচনা ছিল না, যা এবার মার্কিন ভিসানীতির পর নির্বাচন কমিশনের আপ্রাণ চেষ্টা যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ভাবনা, সে সূত্র ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টকশো থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন সে আলোচনা সরব হচ্ছে। 

তবে এটাও ঠিক, বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তিটা উৎসবে রূপান্তরিত করবে। নির্বাচনে জয়ের উৎসবের মতো খালেদা জিয়াকে নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাবে। বেশ খানিকটা অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন, তবে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন সমাবেশে তাকে উপস্থিত করানো ও তার বক্তব্য দেওয়া বিএনপির রাজনীতিতে নতুন টার্ন হয়ে দাঁড়াবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সেটাও বিবেচনাতে রেখেছে আওয়ামী লীগ। 

তবু রাজনীতির মাঠ এখন কার নিয়ন্ত্রণে সেটা বোঝা মুশকিল। আওয়ামী লীগের দখলে থাকলে এগুলো কিছুই করতে পারবে না বিএনপি। এর বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কেউ যদি হস্তক্ষেপ করে বসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮-এর প্রেক্ষাপটে, তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি আসন্ন। সময়ই বলে দেবে কী হতে যাচ্ছে। 

শেয়ার করুন