২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৭:৩৬ অপরাহ্ন


গণমিছিলে মানুষের ঢল : নতুন কর্মসূচী ঘোষনা
‘পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে ‘জনগনের রাজপথে আসা’ রুখতে পারবে না’ - খন্দকার মোশাররফ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১২-২০২২
‘পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে ‘জনগনের রাজপথে আসা’ রুখতে পারবে না’ - খন্দকার মোশাররফ গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিচ্ছেন ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন/ছবি সংগৃহীত


‘পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে সরকার ‘জনগনের রাজপথে আসা’ রুখতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

শুক্রবার বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুশিয়ারি দেন।

 তিনি বলেন, ‘‘ সরকার বলে জনগন আমাদের সাথে নাই। জনগন আছে কি নাই আমি সরকারকে তাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের যারা বিভিন্ন ব্যক্তি .. আজকের গণমিছিল দেখে যান। আপনারা যে বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় আপনারা পাহারা দেবেন।”

‘‘ আজকে আপনারা পাহারা দিয়েছেন কিন্তু এদেশের জনগনকে আপনারা ঘরে রাখতে পারেন নাই। অতএব আমরা বলি, আগামী দিনে এদেশের জনগন রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাদেরকে বিদায় করবে-তার নমুনা আজকের এই গণমিছিল দেখে যান।”

 নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১০ দফার যুগপত আন্দোলনের এই গণমিছিল হয়। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি কথা গণমিছিলের ব্যানারে লেখা ছিলো।


 গণমিছিলের পূর্বে এভাবেই রাস্তায় দাড়িয়ে জুময়ার নামাজ আদায় করেন বিএনপির নেতাকর্মী/ছবি সংগৃহীত 


বিকাল তিনটা ১৫ মিনিটে  গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, মৌচাক হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়।

দুপুরে জুম্মার নামাজের আগেই নয়া পল্টনে দীর্ঘ সড়ক ফকিরেরপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় পর্যন্ত মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করে। লাল, নীল, সবুজ টুপি মাথায় জাতীয় পতাকা ও বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে নেতা-কর্মীরা এই গণমিছিলে অংশ নেয়।


‘চার ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা’

সরকার পতনে যুগপত আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে আগামী ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশাররফ।

 তিনি বলেন, ‘‘ আগামী ১১ জানুয়ারি,২৩ ঢাকাসহ সারা দেশে বিভাগীয় শহরে সকাল ১০ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঢাকায় হবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেই গণঅবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।”

‘‘আজকের যেসকল দল ও জোট আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এই গণ মিছিল করছেন আমাদের বিশ্বাস ওই সকল দলগুলোও যুগপতভাবে আগামী ১১ জানুয়ারি গণ অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আমরা আহবান জানাই এই আন্দোলনের সাথে যারা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন জোট, ব্যক্তি, গোষ্ঠি এবং এদেশের আপামর জনগন আগামী এই গণঅবস্থান কর্মসূচিকে সফল করে দ্বিতীয় কর্মসূচি দিয়ে আপনারা এই সরকারের বিদায়ের দুই নাম্বার সতর্কবার্তা উচ্চারণ করবেন।”


খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ শুধু এই গণমিছিল নয়, আমরা এই ১০ দফা কর্মসূচি আদায় করার জন্য আরো কর্মসূচি একের পর এক পর্যায়ক্রমে দেবো। আমরা আশা করি, আমরা গণতান্ত্রিক দল, আমরা মধ্যপন্থি শান্তিপূর্ণ দল, আমরা এই পর্যন্ত যত সমাবেশ, যত কর্মসূচি নিয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে হযেছে এবং আজকের গণমিছিলও শান্তিপূর্ণভাবে আমরা শেষ করব।’’

 ‘‘ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এবং সাধারণ জনগনের যে স্বতস্ফূর্ত যোগদানের কারণে জাতীয়ভাবে আন্তর্জাতিকভাবে এই আন্দোলনকে আজকে দেখেছি সকলে প্রশংসা করছে। আমরা এই প্রশংসাকে আমরা ধরে রাখতে চাই।”

 

মিছিলের পূর্বমুহুর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারন মানুষ/ছবি সংগৃহীত 


খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ সহজে এই ধরনের স্বৈরাচারি সরকার নিজেরা ক্ষমতা ছাড়ে না। তাদেরকে বাধ্য করতে হবে। এজন্য এদেশের জনগন ও আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রাণ দিয়েছে, আমাদের নেতা-কর্মীরা আজকে কারাগারে, আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ নেতারা জেলে, সারা বাংলাদেশে আমাদের ২৪ হাজার নেতা-কর্মী আজকে জেলে। আমাদেরকে কিন্তু দমাতে পারেনি।ওরা মনে করেছিলো ১০ ডিসেম্বরের আগে আমাদের মহাসচিবসহ নেতাদের গ্রেফতার করলে সমাবেশ বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়নি।”

‘‘আজকে ঘোষণা করতে চাই, যত গ্রেফতার, যত নির্যাতন হোক না কেনো রাস্তায় আমাদের নেতা-কর্মী শুধূ নয় জনগন নেমে গিয়েছে। আর তাদেরকে দামানো যাবে না।”

‘ক্ষমতাসীনদের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ আপনারা দেখেছেন ওদের জামানত বাতিল হয়ে যায়, বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে।”

‘‘ বাংলাদেশে এটাই অবস্থা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এদেশের জনগন নিজের হাতে নিজে ভোট দিতে পারলে এই সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না। এই সরকারের আসলে সময় শেষ এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভবিষ্যত বাংলাদেশ। এই ভবিষ্যত বাংলাদেশ সৃষ্টি জন্য সকলে একতাবদ্ধ থাকুন।”

মগবাজারের চৌরাস্তায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে গণমিছিলের সমাপ্তি টানেন।


বিএনপির গন মিছিল/ছবি সংগৃহীত 


মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।

নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেনজীর আহমেদ টিটো প্রমূখ নেতৃবৃন্দ ছিলেন।

কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড়ে আফরোজা আব্বাস ও েেহ্লন জেরিন খানের নেতৃত্বে মহিলা দলের গণমিছিলের প্রথমে ছিলো। সর্বশেষ ছিলো ফকিরেরপুলের বাজারের কাছে মহানগর দক্ষিন বিএনপি। এই গণমিছিলে মুক্তিযোদ্ধা দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, য্বুদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মতস্যজীবী দল, তাঁতী দল, উলামা দল, জাসাস, ঢাকা উত্তর ও ছাত্র দল নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়। গণমিছিল শুরুর আগে নয়া পণ্টনের সড়ক নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

 গণমিছিল উপলক্ষে ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে মগবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কের মোহনা ও গলিতে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাঁজোয়া যান, জল কামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়।


শেয়ার করুন