২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:১৬:২৮ পূর্বাহ্ন


মান্না বললেন চোখ বাধা অবস্থায় কোথায় ২ ঘন্টা ঘুরিয়েছে জানি না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
মান্না বললেন চোখ বাধা অবস্থায় কোথায় ২ ঘন্টা ঘুরিয়েছে জানি না আন্তর্জাতিক গুম দিবসে র‌্যালি


এখানে কেঁদে কোন লাভ নেই, আমি যতবার এসেছি স্বজনদের কান্নায় আমিও কেঁদে ফেলেছি। কিন্তু এই কান্না আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুনেন না। তার মন্ত্রি সবার সদস্যরা কখন কি বলেন, তা তারা নিজেরাও জানে না। আপনারা জানেন আমিও ৪০ ঘন্টা বন্দি ছিলাম। আমার চোখ বেধে কোথায় কোথায় ২ ঘন্টা ঘুরিয়েছে আমি জানি না। কথাগুলো বলেছেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রনেতা মাহামুদুর রহমান মান্না। 

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে দিবসটি পালিত হচ্ছে। মায়ের ডাক এর উদ্যোগে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। 

মান্না আরো বলেন, আমাকে যে বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল তা মনে হচ্ছে আয়না ঘরের মতই। একটি খাট পাতা একটু হাটা চলা ছাড়া কিছুই করা যায় না। সেখানে কোন জানলাও নেই। আমি ৪০ ঘন্টা ছিলাম। এখানে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। তিনি সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন- আয়না ঘর বলে কিছু নেই। তাহলে এর পরিস্কার ব্যাখ্যা দিন। যাদের বিরুদ্ধে আয়না ঘরের অভিযোগ করা হয়েছে তাদেরও ব্যাখ্যা করা উচিত। অভিলম্বে গুম হওয়া স্বজনদের পরিবারের কাছে তাদের সদস্যদের ফিরিয়ে না দিলে এর পরিনতি খুবই খারাপ হবে যা আপনারা চিন্তা ও করতে পারছেন না।  

মায়ের ডাকের সমন্বয়নকারী আফরোজা ইসলাম আখির সভাপতিত্বে ও মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ঢাবির সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ভূইয়া ফুয়াদ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর মাহবুব হোসেন, গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সানজিদা ইসলাম তুলি, গুম হওয়া তপন দাসের স্ত্রী সুমী রানি দাস, গুম কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, গুম রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা আলহাজ্ব সালেহা বেগম, গুম ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম ইনশা, ক্রস ফায়ারে নিহত বি-বাড়ীয়ার শাহিনুরের ভাই মেহেদী হাসান, গুম পিরোজপুরের নাসির উদ্দিন মিন্টুর ভাই আলআমিন, সূত্রাপুরের ছাত্রদল নেতা পিন্টুর বোন রেহেনা পারভীন মুন্নী, ব্যারিস্টার আরমানের মা আয়েশা খাতুন, আল মুকাদ্দেসের চাচা আব্দুল হাই, গুম রাশেদের ভাই লোটাস, গুম মনির হোসেনের ভাই শহিদুল্লাহ, লক্ষীপুরের ওমর ফারুকের ছেলে ঈমন ওমর, গুম কমিশনার চৌধুরী আলমের ভাই খোরশেদ আলম সহ শতাধিক পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। 

২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এর পরের বছর থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছেন। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, বিশেষ বাহিনী- র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রায়ই সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।

গুম হওয়াদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি জানিয়েছেন, দেশের বাইরে আমেরিকায় জাতিসংঘের সদর দপ্তর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া পার্লামেন্টের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন প্রবাসী নেতারা। এর মধ্যে আমেরিকায় যে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে সে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন গুম হওয়াদের স্বজনদের একটি অংশ।

শেয়ার করুন