টুর্নামেন্ট শুরুর নিতান্ত সাদামাটা দল অনেক হিসাব নিকাশ ভুল প্রমান করে কাল সংযুক্ত আরব এমিরেটসের মরুদ্যান থেকে এশিয়া কাপ ২০২২ ট্রফি তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে ১৫ বারের এশিয়া কাপ আয়োজনে এটি শ্রীলংকার ৬ বারের ট্রফি জয়, সর্বোচ্চ সাতবার জিতেছে ভারত,পাকিস্তান জিতেছে দুই বার। তরুণ, অপেক্ষাকৃত নবীন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া পতিত ইংলিশ কোচ সিলভার যুবাদের কুশলী পরিচর্য্য গড়া দাসুন শনাকের লংকান লায়ন্সরা একই টুর্নামেন্টে দুবার পাকিস্তানকে, একবার করে ভারত, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে। স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনালে পাকিস্তান থেকে ২৩ রানের অনায়াস জয়ে অধিকাংশ সময়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ওদের হাতে ছিল।
টস হেরে বাট করতে এসে সবুজ ঘষে ঢাকা নতুন উইকেটে শুরুতেই নাসিম শাহ ,হারিস রউফের দুরন্ত পেস মোকাবিলায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও বিকশিত হতে থাকা ভানুকা রাজাপাকসে ( ৪৫ বলে অপরাজেয় ৭১ ) আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার (৩৬) রানের সুবাদে ১৭০ /৬ জয়সম্ভবা স্কোর গড়ে তোলে। সেই রান প্রতিরক্ষায় শ্রীলংকা দল শুরু থেকেই সুশৃঙ্খল বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে পাকিস্তান ইনিংস ১৪৭ রানে গুটিয়ে দেয় যোগ্য দল হিসাবে ২৩ রানে ম্যাচ জিতে ট্রফি জয় করে লংকান লায়ন্স। মধুশান (৪/৩৪) ,হাসারাঙ্গা (৩/২২) এবং করুনারত্নে (২/৩৩) পাকিস্তান ইনিংস থেকে অক্সিজেন তুলে নেয়। পাকিস্তান ইনিংসের বিশেষ মুহূর্তগুলোতে লংকানদের শরীরী ভাষায় ছিল জয়ের অদম্য নেশা।
ট্রফি জয়ী লংকান বীরদের সাধুবাদ জানাতেই হবে প্রথম ম্যাচে লন্ড ভন্ড হয়ে পড়া অবস্থান থেকে দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। উদ্যমী যুবাদের পরিনত ক্রিকেট খেলা সবাইকে বিস্মিত করেছে। দুর্দমনীয় লঙ্কানদের দুরন্ত নৈপুণ্য। আসলেই শ্রীলংকার এই বিজয় থেকে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক কিছুই শেক্ষার আছে।
টি -২০ আদলে খেলা এবারের টুর্নামেন্টে রাংকিংয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারত আর পাকিস্তান ছিল ফেভরিট দল। অনেকেই ভেবেছিলো টুর্নামেন্টে ওরা তিনবার মোকাবিলা করবে। কেউ কিন্তু কস্মিকালেও ভাবেনি অনেকটা আনকোড়া নবীন দল শ্রীলংকা জিতে নিবে শিরোপা। দলটির পেস আক্রমণের মূল অস্ত্রগুলো আহত হয়ে টুর্নামেন্টে থেকে ছিটকে পড়েছিল। দলে ভারত ,পাকিস্তান ,আফগানিস্তান , বাংলাদেশের মতো বিশ্ব ক্রিকেট মাতানো তারকার সম্মিলন ছিল না। ছিল সম্ভাবনাময় উঠতি তরুণ, জয়ের লক্ষে কৃতকল্প একঝাঁক সাহসী খলোয়াড়। দলের ক্রিকেটাররা মনে করিয়ে দিলেন শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ী সহ সে দেশটির লিজেন্ড সব ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি-সিলভা, সনাৎ জয়াসুরিয়া, চামিন্দা ভাস, লাসিদ মালিঙ্গা, মুত্তিয়া মুরালিধারন, কুমার সাঙ্গাকারা , মাহেলা জয়বর্ধনে প্রমুখদের কথা। সত্যিই যোগ্য উত্তরসূরী দাসুন শানাকার এ দলটি। মরুভুমির এ আসরে মোমেন্টাম সৃষ্টি করা দল জয় পাবে এটি কিন্তু বেতার তরঙ্গে ম্যাচের শুরুতে পূর্বাভাস দিয়ে ছিলাম।
সব কিছুর পরেও কাল ফাইনালে কিন্তু অনেকেই পাকিস্তানকে সম্ভাব্য বিজয়ী দল হিসাবে বিবেচনা করেছিল। সবুজ ঘাসের আচ্ছাদনে ঢাকা উইকেটে টস জয় করে পাকিস্তান কিন্তু সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। একপর্যায়ে ১৪.৫ ওভারে শ্রীলংকার স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১১৬/৬। সেখান থেকে ভালো খেলে রাজাপাকসে ( ৭১*) , হাসারাঙ্গা ( ৩৬) জুটি ৫৪ রানের ম্যাচ জয় জয়ী ব্যাবধান রাখে। অনেকেই ভেবেছিলেন, পাকিস্তান ১৭১ রানের টার্গেট অর্জন করবে। কিন্তু নবীন মধুশান (৪/৩৪), হাসারাঙ্গা (৩/২২) আর করুণারত্নের ( ২/৩৩) সাড়াশি আক্রমণ আর গোটা দলের তুখোড় ফিল্ডিংয়ের মুখে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
২৩ রানে জয়ী হয়ে ট্রফি অর্জন করে শ্রীলংকা। সাবাশ ভদ্র মানুষের দেশ শ্রীলংকা। সবাইকে অভিনন্দন। এবারের এশিয়া কাপ থেকে সব দলের অনেক কিছুই শেখার আছে। কোনো বৈষয়িক টুর্নামেন্ট জিততে সেরা খেলোয়াড় , কাগজে কলমে সেরা খেলোয়াড়দের সম্মিলন চার লাগে সঠিক পরিকল্পনা, জয়ের নেশা আর মাঠের কাজটি সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে করা। শ্রীলংকার জয়টি সকল খেলোয়াড় সমান ভাবে ভাগ করে নিয়েছে।
