২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:২২:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন
১০ হাজার স্টুডেন্ট ৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৩-২০২৩
১০ হাজার স্টুডেন্ট ৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা


বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় প্রায় ১০ হাজারের মতো স্টুডেন্ট এসেছে। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় তারা প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে আসে। বাংলাদেশে যথেষ্ট রিজার্ভ রয়েছে। বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন আমরা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করতে চাই। কেউ যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমাদের করার কিছুই নেই। যাদের দেশে নির্বাচনে সহিংসতা হয়, পুলিশের গুলিতে মানুষ হত্যা হয়, তারা যদি আমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ছবক দেয়-এটা লজ্জার। ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের জন্য আমেরিকা যা চেয়েছে আমরা সবই দিয়েছি, কিন্তু তারা এখনো পারমিশন দিচ্ছে না। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আয়োজিত দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসব কথা বলেন।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান, টাইম টিভির প্রেসিডেন্ট আবু তাহের, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, মূলধারার রাজনীতিবিদ মোর্শেদ আলম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুল হাসিব মামুন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ শাহনাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল খান আনসারী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মনসুর খান, যুক্তরাষ্ট্র যুব লীগের সাবেক সভাপতি মিসবাহ আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম, সাবেক নেতা আব্দুল করিম, হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজি আব্দুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেত্রী মোর্শেদা জামান, কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাখাওয়াত বিশ্বাস প্রমুখ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় এসেছি। সেখানে বাঙালিরা একটি বিশাল কাজ করেছে। তারা নিজেরা ১ লাখ ৮৭ হাজার ডলার খরচ করে স্মৃতিসৌধ করেছে। সেখানে আমি কনস্যুলেটের স্থায়ী ভবন উদ্বোধন করেছি। আমাকে দ্রুত বাংলাদেশ চলে যেতে হবে। কারণ আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন। তিনি আরো বলেন, আমেরিকান আইনের দেশ। এই দেশ কীভাবে একজন খুনিকে আশ্রয় দেয়। তবে আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল সেই খুনির রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীর বিষয়টি শুনানির ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আপনারা যারা আমেরিকায় আছেন, আপনাদের দায়িত্ব হলো মাঝেমধ্যে তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করা। সেই খুনির নাম হচ্ছে রাশেদ চৌধুরী। আমেরিকায় আরো একজন খুনি রয়েছে। বাংলাদেশের কূটনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করছি। আমার কূটনীতি হচ্ছে কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। আমরা ভাগ্যবান যে আমরা শেখ হাসিনার মতো নেতা পেয়েছি। প্রবাসীদের সম্পত্তি নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সব কিছু ডিজিটালি হচ্ছে। তারপরেও আমাদের দেশে কিছু দুষ্টু এবং দুর্বৃত্ত আছে, যারা জায়গা সম্পত্তি দখল করে। একটি স্পেশাল আইনের কথা আইনমন্ত্রীকে বলেছিলাম। তিনি বলেছেন, এটা তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হয় না, সিলেটে হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাকি খুন করে ফেলা হয়। তবে প্রবাসীদের জায়গা সম্পত্তি বেশির ভাগ আত্মীয়স্বজনই দখল করে। তিনি বলেন, আমি বলতে পারি এই অনুষ্ঠানেও কয়েকজন আছেন, যাদের আমি চিনি তারা দেশে সম্পত্তি বিক্রি করে আমেরিকায় অর্থ নিয়ে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ কিন্তু ৮ থেকে ১০ শতাংশ লোক ট্যাক্স দেয় না, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। মিশিগানে কনস্যুলেট অফিস প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সরকারের ইচ্ছা রয়েছে মিশিগানে অফিস করার কিন্তু বর্তমানে সেই অর্থ নেই। তবে মিশিগানে অফিস করতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সরকারি অর্থে ২৭টি মিশন রয়েছে। এ্যাম্বাসেডরদের জন্য বাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। আরো ৬টি প্রসেসে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা প্রবাসীদের মধ্যে ধনী তারা অর্থ পাঠান না, কিন্তু গরিব প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠান। প্রবাসীদের অর্থ এবং বিনিয়োগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে যদি কোনো প্রবাসী ১০ হাজার ডলারের বেশি রাখেন বা বিনিয়োগ করেন, সেটা আমেরিকার ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় প্রায় ১০ হাজার স্টুডেন্ট এসেছে। আসার সময় তারা প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছেন। বিমান নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা যেসব ডকুমেন্ট চেয়েছে আমরা সবাই ডকুমেন্ট তাদের দিয়ে দিয়েছি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমার নতুন এবং অত্যাধুনিক এয়ারক্র্যাফট রয়েছে। আমেরিকার একটি প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে গিয়েছিল। কিন্তু তারা এখন সিকিউরিটির কথা বলছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে বলেন, প্রবাসীরা ভোটাধিকার অবশ্যই পাবে। আমরা লন্ডন এবং সৌদী আরবে চালু করেছিলাম। করোনার কারণে তা বন্ধ রয়েছে। এনআইডি নিয়ে বলেন, আমরা সবাইকে এনআইডি দিবো। এখন সমস্যা তৈরি হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এই নিয়ে টানাহিঁচড়া চলছে। আমরা তো দ্বৈত নাগরিকত্ব দিতে চাই, কিন্তু আমেরিকার সরকার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের দেশে কিছু হলেই হৈ চৈ পড়ে যায়। চিলে কান নিয়ে গেছে, কান পরীক্ষা না করেই আমরা চিলের পেছনে দৌড়াই। আইএফএম আমাদের ঋণের প্রথম কিস্তি দিয়েছে। আমরা সেই অর্থ রেখে দিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার চায় সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনমুখী দল। আওয়ামী লীগ ক্যান্টমেন্টের সৃষ্টি দল নয়, এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। যাদের দেশেও নির্বাচনের সময় সহিংসতা হয়, পুলিশের গুলিতে মানুষ হত্যা হয়, তারা যদি আমাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার শেখাতে চায়, ছবক শোনাতে চায়-এটা লজ্জার। তিনি বলেন, গাইবান্ধা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে তাদের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। কোনো দল যদি নির্বাচনে না আসে, এটা তাদের সমস্যা। আরেক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হতে হলে অবশ্যই আমেরিকার নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে এবং দেশে গিয়ে নির্বাচন করতে হবে। আমিও নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছি। বিনিয়োগ নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ এখন সিকিউর। তিনি হুন্ডি বন্ধে সরকার সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাটফিশ নিষিদ্ধ নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের হয়রানি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন এয়ারপোর্টে ক্যামেরা লাগিয়েছি। কিন্তু আমার মাথায় ঢোকে না কেন প্রতিটি মানুষের লাগেজ চেক করতে হবে। যাকে সন্দেহ হবে তার ব্যাগ চেক করা উচিত। সত্যি কথা বলতে কি নোংরা পোশাক দেখলেই এয়ারপোর্টে তাদের হয়রানি করে। এটাও এক ধরনের জালিয়াতি। আমরা এটা বন্ধে কাজ করছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার হচ্ছে প্রবাসীবান্ধব সরকার। যে কারণে ৩০ ডিসেম্বরকে এনআরবি ডে ঘোষণা করা হয়েছে। আপনারা সেদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। করোনার সময় টিকার জন্য যেসব প্রবাসী সহযোগিতা করেছেন, তাদেরসহ আমেরিকার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হুন্ডি বন্ধে প্রবাসীদের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ বৃদ্ধির পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এটা আমি উপস্থাপন করবো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি প্রবাসীদের প্রত্যেককেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে অভিহিত করে দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বুদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সকলের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি সরকারের প্রবাসীবান্ধব নীতি অনুসারে প্রবাসীদের আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলকরণে প্রবাসীদের অবিরাম প্রচেষ্টা ও সাফল্য তুলে ধরেন এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে একটু উত্তেজনা এবং তর্কবিতর্ক হলেও কনসাল জেনারেলের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

শেয়ার করুন