২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০১:১৮:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


অ্যাডিলেড কী ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে
সালেক সুফি, অস্ট্রেলিয়া থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
অ্যাডিলেড কী ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে ফাইল ছবি


এ যেন রূপকথার আরেক গল্প! শেষ হয়েও হইলো না শেষ। টি২০ আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপে জয় অধরা ছিল বাংলাদেশের। এমনিতেই পরাজয়ের বৃত্তে বন্দি। বাংলাদেশ সব ফরম্যাটেই তলানিতে  হাঁটছিল। উপর্যুপরি ব্যর্থতায় নানা বিতর্কে দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিলো। এ আসরে শঙ্কা ছিল, আদৌ কোনো ম্যাচ জিতবে কিনা বাংলাদেশ। কেউ কেউ আবার দুটি বা তিনটি ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো। অবশেষে অনেক যুদ্ধ করে তাসমানিয়ার হোবার্টে প্রথম জয় পেলো বাংলাদেশ টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। জয়ের খরা কাটলো। জয় সে তো জয়। এরপর আবার ছন্দপতন। এসসিজির প্রথম আবির্ভাব দুঃস্বপ্ন হয়ে গেলো বাংলাদেশের। প্রোটিয়া ঝড়ে ল-ভ- হলো সাকিব বাহিনী। তবুও আশায় আশায় বুক বেঁধে ব্রিসবেন উলন গ্যাবায় উড়তে থাকা জিম্বাবুয়েকে মাটিতে নামানোর যুদ্ধে টাইগারদের পাশে থাকার জন্য। সাহস আর ভাগ্যের মহামিলনে সূর্য হাসলো শেষ বিকেলে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জয় পেলো বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের প্রতীক্ষা ভারত-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ। দুই ম্যাচ হবে অ্যাডিলেডে যথাক্রমে ২ নভেম্বর ও ৬ নভেম্বরে। ফলে বাংলাদেশের সব ফোকাস এখন অ্যাডিলেড ঘিরে। 

এদিকে গ্যাবায় ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি খেলতে ছিল সব প্রস্তুতি। কিন্তু বৃষ্টি থামেনি। পরে পরিত্যক্ত। ব্রিসবেনের এ মাঠে খেলার প্রত্যাশা শিকেয় ঝুলে ছিল। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ এক পয়েন্ট পেয়েছিলো। সেটি কিন্তু সৌভাগ্যের সূচনা করেছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। পরিক্রমায় অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী। সেদিক থেকে অ্যাডিলেড সৌভাগ্যের মাঠ, আত্মবিশ্বাসের মাঠ। যদিও সে ম্যাচের দুই পারফরমার রুবেল হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নেই এ স্কোয়াডে। তবে সেদিন ইংল্যান্ডের বিরদ্ধে জয় পেয়ে উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ কোয়ার্টারে। আর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল তারা ভারতের বিরুদ্ধে এমসিজিতে। সে ম্যাচের নাটকীয়তাও এখনো ভোলেনি অনেকেই।

কাকতলীয়ভাবে এবারো সাকিব বাহিনীকে খেলতে হবে সেই অ্যাডিলেডে ভারত আর পাকিস্তানের সঙ্গে। ক্রিকেটযুদ্ধ জয় করলে সেমি ফাইনাল খেলতে পারে বাংলাদেশ। জানি অনেকটাই গাণিতিক সমীকরণে জয়ের চিন্তা অমূলক। কিন্তু রমণীর মতো লাস্যময়ী ক্রিকেটে গাণিতিক সমীকরণ মেনে চলে না। হতেও পারে বিশ্ব আসরে জয় পেতে ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ লাগে। কাল তার কিছুটা পেয়েছে বাংলাদেশ।

গ্যাবার দ্রুতগতির উইকেটে টস জিতে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ব্লেসিং মুজারাবাণী আর রিচার্ড এন রাবাকে ভালোমতো খেলতে পারেনি। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, নাজমুল হাসান শান্ত কালকের ম্যাচটিকে বেঁচে নিয়েছিল তার টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সেরা ইনিংস খেলে। ধীরস্থির শুরু করে ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসটি কাল বাংলাদেশ ইনিংস ধরে রাখার পাশাপাশি দলকে (১৫০/৯) করার পুঁজি দিয়েছিলো। সাকিবের সাথে ওর তৃতীয় উইকেটে করা ৫৩ রানের ইনিংস দলের ইনিংসকে স্থায়িত্ব দিয়েছিলো।

দারুণ পেস বোলিং করেছে কাল তাসকিন (৩/১৯) আর মুস্তাফিজ (২/১৫)। দু’জনই ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে লাইন ল্যাংথ বজায় রেখে জিম্বাবুয়ে দলকে চেপে ধরেছিলো। ১১.২ ওভারে ৫/৬৯ অবস্থানে ওদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে ছিল। উইকেটে ছিল সিন্ উইলিয়ামস। রায়ান বুরিকে সঙ্গে নিয়ে উথাল সাগরে তরী বেয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ১৮.৪ ওভারে দারুণ কাজ করলো সাকিব। নিজের বলে কিছুটা দৌড়ে বল ধরে, চকিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে উইলিয়ামসকে রান আউট করলেন। ঘুরে গেলো ভাগ্যের চাকা। ১৮.৪ ওভারে ওদের রান তখন ৮/১৩২। 

৮ বলে করতে হবে ১৯ জয় পেতে । ফ্রন্টলাইন বলার বাকি নেই। মোসাদ্দেকের হাতে তুলে দেয়া হলো বল। স্মরণীয় এই ওভারে দুই-দুইটি উইকেট তুলে নিলো মোসাদ্দেক। ওরা যোগ করলো ১৫। শেষ বলে নাটক। উইকেটকিপার সোহানের ভুলে বাড়তি হলো নো বল। সৌভাগ্য বাংলাদেশের ফ্রি হিট থেকে রান আসলো না। ৩ রানের নাটকীয় জয় পেলো বাংলাদেশ। স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশিরা আরো বড় স্বপ্ন দেখার অবসর পেলো। এখন দেখার অপেক্ষা অ্যাডিলেড কি আরো নাটক অপেক্ষা করছে? সবার দৃষ্টি এখন অস্ট্রেলিয়ার ওই স্টেডিয়াম পানে।

শেয়ার করুন