২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:০১:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


কী ইঙ্গিত করছেন কাদের সিদ্দিকী?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৩-২০২২
কী ইঙ্গিত করছেন কাদের সিদ্দিকী?


কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে বিএনপি বিব্রতবোধ করছে। কেনো কি কারণে বিএনপি’র বিরুদ্ধে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী এভাবে, এসময়ে মুখ খুললেন তা ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাউকেই তিনি চাচ্ছেন না। ডা. কামাল হোসেনেরও সমালোচনামুখর তিনি। তাহলে কাকে প্রত্যাশা করছেন। কী ইঙ্গিত করছেন তিনি পরবর্তি সময়ের রাজনীতিতে?  

কি বললেন বঙ্গবীর 

গত ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘দিনলিপি: বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) বলেছেন, ‘মানুষের কল্যাণ, মানুষের নিরাপত্তা, মানুষের সম্মান ছাড়া আমার আর কোনো প্রত্যাশা নেই। আমি খালেদা জিয়ার কাছে যেমন নেতৃত্ব চাই না, তেমনই আমার বোন শেখ হাসিনার কাছেও কিছু প্রত্যাশা করি না। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন,‘আমি আজ চিন্তিত এ কারণে যে, এ সরকার চলে গেলে বিএনপি ক্ষমতায় এলেই বঙ্গবন্ধু সরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা লাগানো হবে। যারা ওখানে আছে তাদের ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হবে। তারেক রহমান ক্ষমতায় এলে পাঁচ লাখ লোক একদিনে মারা যাবে।’ অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, অনাগত এ ভবিষ্যত থেকে দেশকে ফেরানোর জন্য আপনি কি কোনো চেষ্টা করেছেন? সবার মৃত্যু আছে। আপনার দলকে বাঁচানোর জন্য আপনি কোনো চেষ্টা করে যাবেন না? 

আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-উর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহসীন হোসেন পিন্টু ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান প্রমুখ। এর আগে ২০১৯ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জনগণের কাছে ক্ষমা না চাইলে তাঁর দলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। 

সেসময়ে এক অনুষ্ঠানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একজন সহকর্মীর নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন নয়, বিএনপি। বিএনপির নেতৃত্বে বা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমি এখন আর বেহেশতেও যেতে রাজি না।’

এর আগে ঐক্যফ্রন্ট নিয়েও কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করেছেন। বলেছেন কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নামের জোট গঠন হলেও তাঁকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। জোট গঠন হলেও মূলত জোটের অন্যতম শরিক বিএনপি কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন জোটের অফিস থেকে হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অফিস থেকে বিএনপির নেতৃত্বে তা হয়েছে, যা ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নীতিমালার পরিপন্থী বলে জানায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। 

এ ছাড়া জামায়াতকে একই প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ারও সমালোচনা করা হয়।  ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয় গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। এরপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ যোগ দেয় এ জোটে। নির্বাচনের পর আবার জোট থেকে বেরিয়েও যায়। অবশেষে ঘোষণা দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম। 

এর আগে আন্দালিব রহমান পার্থ’র বিজেপিও ঐক্যফ্রন্ট ছেড়েছে। সেটি ছিল অনেকটাই হুট করেই। কিন্তু কাদের সিদ্দিকীর বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। তিনি বারবার ঐক্যফ্রন্টকে সতর্ক করেছেন। ছেড়ে যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন এবং এরপরও যখন মনের মতো কিছু হলো না তখন ঘোষণা দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট ছেড়েছেন। এর মধ্যে জেএসডি ছেড়ে আলাদা দল গঠনের পথে হাঁটেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। এখন আবার তিনি ফিরে আসছেন বলে আলোচনা রয়েছে। এরপর শুরু হয় গণফোরামে ভাঙনের সুর। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় গণফোরাম।

শেষ কথা

বিএনপি দলমত নির্বিশেষে সকলকে এক সাথে আন্দোলনে আসার আহবান জানিয়েছেন। আগের বারের চেয়ে এখনকার আহবানটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশে তাৎপর্যপূর্ণ। ইতোমধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটও হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে। আর তাতে বিএনপি সমর্থন দিয়ে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন সময়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য বিএনপি’কে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। তাছাড়া তিনি যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তাদের যাদের উপস্থিতি ছিল সে ব্যাপারেও বিএনপি’র কিছুটা প্রশ্ন আছে।

 সেজন্য বিএনপি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যকে সাদামাটাভাবে নেয়নি। কেননা অতি সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রীও বিএনপি ও এদলটির নেতৃত্ব নিয়ে নানান ধরনের তির্ষক মন্তব্য করেছেন। গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার ও দেশবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে।  ১৪ দলকে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। ক্ষমতায় গেলে তাদের নেতা কে হবেন? প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? 

এই কারণে তারা নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বিএনপি ধরে নিয়েছে যে তাদের দলের মনেবলে আঘাত হানতে এমন বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তাই স্বভাবতই বিএনপি’র মধ্যে নানান মত জোড়ালো হচ্ছে সামনের দিনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আগে কি হতে যাচ্ছে? তবে বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতা দেশ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, কাদের সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি খুবই খোলামেলা পক্ষপাতহীন কথা বলে থাকেন। এর পাশাপাশি তার বক্তব্যে অনেক ইঙ্গিতপূর্ণ হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন ব্যক্তিত্ব থাকবেই। তিনি বলেন, বঙ্গবীর আগেওতো বলেছিলেন যে, ‘বর্তমান বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি এর ১০০ ভাগের এক ভাগ হবে- এটা জানলেও আমি মুক্তিযুদ্ধ করতাম না।’ 

তাহলে কি ধরে নেয়া যাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছেন? অন্যদিকে  গণতন্ত্র আর খালেদা জিয়া এক কথা-এমন মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘যে আদালতে যে বিচারক বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি দিয়েছেন সেই বিচারকের জনগণের আদালতে শাস্তি হবে। তাই তারা কাদের সিদ্দিকী মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথায় অন্য কিছু ভাবছেন না বলে মত দেন ঔই বিএনপি নেতা। এই বিএনপি নেতা আরো বলেন. তিনিইতো (কাদের সিদ্দিকী) সেদিন বলেছেন, করোনাভাইরাসে কারণে আমরা আড়াই বছর সাংগঠনিক কাজ করতে পারিনি। 

করোনা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। এবার দলীয় কার্যক্রম সক্রিয় করবো। ঈদের পরেই আমরা রাজনীতির মাঠে নামবো। আবার আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করেও বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সরকারকে সবসময় ভাবতে হবে, আমি সরকার থেকে কখন চলে যাবো। মানুষের মৃত্যু যেমন অবধারিত, সরকার থেকে একদিন চলে যেতে হবে সেটাও অবধারিত।


শেয়ার করুন