১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:২৫:৩৭ পূর্বাহ্ন


ফরিদপুরের বিএনপির মহাসমাবেশে মানুষের ঢল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না হলে নির্বাচন হবে না - মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২২
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না হলে নির্বাচন হবে না  - মির্জা ফখরুল ফরিদপুরের কোমরপুরের বিএনপির জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ছবি সংগৃহীত


‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদেশের মানুষের মনের দাবি, কারণ বিগত দুইটা নির্বাচনে আপনারা মানুষকে প্রবঞ্চনা করে মিথ্যা কথা বলে, আপনারা ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলে ক্ষমতায় চলে গেছেন। কিন্তু এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে’- কথাগুলো বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে ফরিদপুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনষ্টিটিউশন মাঠে আয়োজিত ফরিদপুর বিভাগ মহাসমাবেশে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা না হবে ততক্ষণ দেশে নির্বাচন হবে না। এটা আমাদের খুব স্পষ্ট কথা। আমি ক্ষমতা ছাড়বো না, তোমরা যে যাই বলো ভাই আমার সোনার হরিণ চাই- এটা হবে না।’ 


সমাবেশস্থল আগের দিনই ভরে যায় কানায় কানায়। এদিন সমাবেশস্থল পেড়িয়ে আশপাশের রাস্তাঘাট পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে। মুহুর্মুহু শ্লোগানে মুখরিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা চাই এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। পদত্যাগ করে ক্ষমতা তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দিতে হবে। সে সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির একটা পার্লামেন্ট তৈরি করবে। সেই পার্লামেন্টে যারা আসবে তারা সরকার গঠন করবে। 


সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (শুক্রবার) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি সংগ্রাম করছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। এই কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে। আর বলবে ভূতের মুখে রাম রাম। যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিল। যারা গণতন্ত্রকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল। যাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে যে- কোন মানুষ ভোট দিতে পারবে না, জোর করে ভোট দেবে, তাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে গুম করা, হত্যা করা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া, তারা বলে তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে গ্রুপ দেবে। 


যানবাহন বন্ধ করে দেয়ার পর সমাবেশে এভাবেই যোগ দেয় অনেক মানুষ/ছবি সংগৃহীত 



মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি দয়া করে বলবেন আপনার কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি? সেটা কি এই কথা- যে অন্য কোন দলকে আমি কোন কিছু করতে দেবো না? তিনি বলেন, আজকে ফরিদপুরের এ জনসভা নস্যাৎ করার জন্য তিন দিন আগ থেকে তাদের আজ্ঞাবহ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন দিয়ে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে পথে-পথে সিকিউরিটি চেক বসেছে, আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা আটকায় জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাবেন? বলে যাওয়া যাবে না। রাস্তা বন্ধ আছে। বরিশালে আরো খারাপ কাজ করেছে, বরিশালের ট্রলারে করে মানুষ যখন আসছিল সে চলার ফেলে দিয়ে লোকজনকে নদীতে ফেলে পিটিয়েছে, বাস থেকে নামিয়ে মেরেছে, ময়মনসিংহে কিভাবে গোলাগুলি করেছে এই হচ্ছে আমি লীগের গণতন্ত্র। 

 ফখরুল বলেন, এত ভয় কেন? জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো জনগণের সাথে তোমাদের কোন সম্পর্ক নাই। আজকে দেশে আলেম-ওলামাদের পর্যন্ত তোমরা হয়নি করেছ। তোমরা তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামি করেছো। তাদেরকে জেলে পাঠিয়েছ। তাদেরকে জামিন দিচ্ছো না। 


দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনতার নয় বছর দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সেই টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রের চারণকবি মতো ঘুরে বেরিয়েছেন। সে নেত্রীকে তুমি মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে চার বছর বন্দী রাখছো ।  অসুস্থ মানুষ ও সুচিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চায়, চার বছরের জন্য বাইরে যেতে যেতে দাও না। ভয় কেন? বংশীবাদক যদি বাঁশি বাজাতে শুরু করেন, তাহলে দেশের মানুষ একাধারে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে সে জন্য? মির্জা ফখরুল এ বক্তব্যের শুরুতে ফরিদপুরের প্রায়াত রাজনৈতিক মোহন মিয়া, শেখ মুজিবুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের নাম উল্লেখ করেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। 


তিনি বলেন, তোমাদের মনে থাকা উচিত যে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে মেরে তার ওপর তোমরা নেচে নেচে ১/১১ আনার ষড়যন্ত্রটা করেছিলে। আজকে আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন। সংবিধানের কথা বলেন। এই সংবিধানকে তো শেষ করেছেন আপনারা। তত্বাবধায়ক সরকার করা হয়েছিল আপনাদের দাবি অনুসারে। আপনারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন।  তখন জাতীয় পার্টি,  জামাতকে নিয়ে আন্দোলন করে তৈরি করলেন এক অচলাবস্থা।  



সমাবেশের আগের রাতে এভাবে রাত কাটিয়েছেন সমাবেশে আসা সাধারন মানুষ/ছবি সংগৃহীত 


আবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে হত্যা করছেন, আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করবো না আমরা। রুখে দাঁড়াবো। তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সব মানুষকে জেগে উঠতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের এক দফা এক দাবি এই সরকারের পদত্যাগ হবে ফয়সালা হবে সেটা রাজপথে। 

 

মহানগর আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজের ও এ কে এম কিবরিয়া স্বপন এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান ওমর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জহুরুল হক শাহজাদা, আবু জাফর, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সেলিমুজ্জামান সেলিম, খন্দকার মাসরুর, আনিসুর রহমান তালুকদার, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  


শেয়ার করুন