২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৪৮:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মহিলাদের স্তন ক্যানসার কী একদিন নির্মূল হবে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
মহিলাদের স্তন ক্যানসার কী একদিন নির্মূল হবে


মহিলাদের স্তন ক্যানসার কি একদিন নির্মূল হবে? একদিন কী মরণরোগ থেকে মহিলারা মুক্তি পাবেন? যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি আট জন মহিলার মধ্যে একজন তাদের জীবদ্দশায় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে গড়ে ৪২ হাজার মহিলার মৃত্যু হয় স্তন ক্যানসারে। এ রোগে যদি এমন একটি ভ্যাকসিন থাকতো, যা প্রতিটি মহিলার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতো বা নির্মূল করতো। অনেক বছর যাবৎ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, কিন্তু কোনো চেষ্টা সফল হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার সানজোসে শহরে অবস্থিত অ্যানিক্সা বায়োসায়েন্সেস কোম্পানির একদল বিজ্ঞানী একটি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যতের জন্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্সের সহযোগিতায় একটি যুগান্তকারী ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সমাপ্ত হয়েছে। অ্যানিক্সা বায়োসায়েন্সেস দ্বারা তৈরি একটি যুগান্তকারী ভ্যাকসিন একদিন মরণ রোগ নির্মূল করতে পারবে বলে গবেষকরা আশাবাদী। অ্যানিক্সা বায়োসায়েন্সেস ও ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে কয়েক দশকের গবেষণার মাধ্যমে তৈরি এই ভ্যাকসিন মহিলাদের ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন ক্যানসারকে নির্মূলের লক্ষ্য গবেষণা ও উদ্ভাবন চালাচ্ছে। ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাদের শুধু ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার রোগী ট্রিপল নেগেটিভ চিহ্নিত হন। যা স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে মারাত্মক এবং সবচেয়ে আক্রমণাত্মক রূপ বা চতুর্থ স্টেজ। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্য গবেষণা চলছে, যা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। অ্যানিক্সা বায়োসায়েন্সেসের সিইও ডা. অমিত কুমার, বলেছেন, এই ভ্যাকসিন সম্ভাব্যভাবে স্তন ক্যানসার দূর করতে পারে।

১৬ জন মহিলার ওপর ভ্যাকসিনের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলগুলো গত ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ বুধবার প্রকাশিত হয়। অংশগ্রহণকারী কোনো মহিলা এখনো কোনো খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং তাদের ক্যানসারের পুনরুত্থানের রিপোর্ট ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে করেনি।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের ওহাইয়োর একজন সাহসী মহিলা জেনিফার ডেভিস, যিনি ২০২১ সালের অক্টোবরে ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা যিনি স্তন ক্যানসারের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ডেভিস যখন তার ডাক্তারের কাছ থেকে ভয়ংকর কথা শুনেছিলেন, ‘আপনার ক্যানসার হয়েছে’। ছয় মাস আগে তিনি একটি রুটিন ম্যামোগ্রাম এবং আলট্রাসাউন্ডে অস্বাভাবিকতার বিষয়ে তার ডাক্তার তাকে সতর্ক করেন। প্রথম সতর্কতার ছয় মাস পরেই তিনি এই সংবাদ পান। তিনি সত্যিই বিশ্বাস করতেন যে, সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু তিনি কি জানতেন যে, তার কিছুই ঠিক ছিল না। যখন তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে তার ক্যানসারের চিকিৎসা নেন সেই সময় একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল সম্পর্কে জানতে পারেন। তখন তিনি ভেবেছিলেন- ‘আমাকে কী হারাতে হবে?’ সংবাদটি এমন কিছু ছিল যা আমাকে মানসিক শান্তি দিলো। যদি এটি আমার জন্য কাজ করে, তাহলে আমাকে আর ক্যানসারের পুনরাবৃত্তির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।’

৪১ বছর বয়সী ডেভিস বলেন, তার পরিবারে ক্যানসারের কোনো ইতিহাস ছিল না। তবুও তিনি তার স্তনে একটি লাম্প বৃদ্ধি অনুভব করতে থাকেন। তারপর তিনি অন্য ডাক্তারের কাছে দ্বিতীয় মতামত নেন। ডাক্তারের পরামর্শে তিনি দ্বিতীয় বায়োপসি করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তার ট্রিপল নেগেটিভ স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তার মন তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিবার এবং তিন সন্তানের দিকে চলে যায়। পরিবারের সবাইকে ক্যানসারের কথা বলা এবং তাদের মনকে শক্তিশালী করে রাখার চেষ্টা করা খুব কঠিন ছিল। ট্রিপল নেগেটিভের সঙ্গে কোনো প্রতিকার নেওয়ার মতো কিছুই নেই- পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য কোনও পিল বা কিছু নেই। মৃত্যুর হারই বেশি এবং যদি এটি ফিরে আসে তবে ফলাফল খারাপ। কেমোথেরাপি, একটি ডাবল ম্যাস্টেক্টমি এবং রেডিয়েশনের পড়ে। ডেভিস অবশেষে ক্যানসার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দীর্ঘস্থায়ী ভয় থেকে মুক্ত ছিলেন না। তিনি সর্বদা নার্ভাস ছিলেন এবং এটি ফিরে আসার ভয় ও আতংকে দিন পার করেন।

চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে একজন নার্স তাকে জানিয়েছিল যে, প্রাণীদের মধ্যে বছরের পর বছর ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালের মধ্যেও কোনো ক্যানসারের পুনরাবৃত্তি হয়নি এবং কোনো অ্যানাফিল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া ছিল না। একথা শুনে ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালে অংশ নিতে তার মনকে সহজ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি প্রতিশ্রুতিশীল গবেষণা বা গেম চেঞ্জিং নতুন চিকিৎসা হতে পারে। স্তন ক্যান্সার রোগীদের জন্য আশ্চর্যজনক ফলাফল হতে পারে যা স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ফর্মের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। 

অ্যানিক্সা বায়োসায়েন্সেস সিইও ডাক্তার কুমার বলেন, এই ভ্যাকসিন মহিলাদের শরীরে টিউমার জন্মাতে পারে এমন কোষগুলোকে ধ্বংস করতে শেখায়। যদি কোনো ভাইরাস শরীরে দেখা দেয়, তাহলে ইমিউন সিস্টেম নিজেই শিখিয়ে দেয় কীভাবে এটিকে ধ্বংস করতে হয়। ডা. কুমার ব্যাখ্যা করেন, ‘আপনার শরীরের সমস্ত কোষ যেগুলো ক্যানসারে পরিণত হয় সেগুলি স্বাভাবিক, সুস্থ কোষ থেকে আসে। কোন কোষগুলো খারাপ ক্যানসারে রূপ নেবে, এটা নির্ণয় করা আরো কঠিন। পার্থক্যটি বড় নয়, তাই ইমিউন সিস্টেম একটি ক্যান্সার কোষকে চিনতে এবং এটিকে একটি সুস্থ কোষ থেকে আলাদা করতে কঠিন সময় পার করতে হয়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ভ্যাকসিনটি আলফা-ল্যাকটালবুমিন নামক একটি ল্যাকটেশন প্রোটিনকে লক্ষ করে কাজ করে, যা স্বাভাবিক ও বার্ধক্য টিস্যুতে স্তন্য পান করানোর পরে আর পাওয়া যায় না। তবে এটি বেশির ভাগ ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন ক্যানসার রোগীদের মধ্যে উপস্থিত থাকে। স্তন ক্যানসারের বিকাশ হলে, টিকাটি টিউমারকে আক্রমণ করার জন্য এবং এটিকে সম্পূর্ণরূপে বাড়তে না দেওয়ার জন্য ইমিউন সিস্টেমকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। কুমার বলেন, ‘ফলাফল অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিশ্রুতিশীল।’ আমাদের দৃষ্টি হলো একদিন যে কোনো মহিলাকে এটি দিতে সক্ষম হবো যিনি তার শরীরে ক্যানসার হওয়া থেকে বিরত রাখতে চান। এটি একটি ছোট পদক্ষেপ এবং আমাদের আরো অনেক ধাপ যেতে হবে, তবে এটি অবিশ্বাস্য হবে আমরা যদি এটি করতে পারি। দ্বিতীয় ভ্যাকসিন ট্রায়াল এ বছর শুরু হবে। এবার ১৬ জনের পরিবর্তে ৬০০ জন মহিলাকে দিয়ে এটি শুরু হবে।এই গবেষণাটি অনেক বড় পরিসরে হবে। যেখানে অর্ধেক মহিলা ভ্যাকসিন পাবেন এবং বাকি অর্ধেক একটি প্লাসিবো পাবেন। অ্যানিক্সা বায়োসায়েন্সেস সিইও ডাক্তার কুমার আশা করেন, বছরের পর বছর পশু পরীক্ষার পর, আমাদের টিমটি ২০২১ সালে মানব পরীক্ষা শুরু করার জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) থেকে অনুমোদন পেয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে, জেনিফার ডেভিস প্রথম মহিলা যিনি শট সিরিজের মধ্য দিয়েছিলেন।

কুমার আরো বলেন, ‘এই ভ্যাকসিনটি অনুমোদিত হওয়ার আগে অনেক আবিস্কারক, চিকিৎসক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, নার্স, আমার মতো মানুষ এবং অন্যরা ক্যানসার নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু যাদের সত্যিকার অর্থে কৃতিত্ব পাওয়া উচিত তারা হলেন জেনিফার ডেভিস এর মতো মানুষ এবং সমস্ত রোগী যারা বিজ্ঞানী হিসাবে আমাদের ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করে দেখতে সুযোগ দিয়েছেন। ২০২৪ সাল থেকে তারা শত শত নারীর সঙ্গে একটি ডাবল-ব্লাইন্ড স্ট্যাডি শুরু করবেন, যা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হবে। উভয় গ্রুপের যত্নের মান থাকবে, তবে একটি গ্রুপ প্লেসবো শটগুলোর একটি সিরিজ পাবে। এই দুটি গ্রুপের মধ্যে পুনরাবৃত্তির অনুপাত আমাদের বলবে যে এই টিকাটি কতটা ভালো, এমনকি যদি আমরা সেই অর্ধেক পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে পারি-সেটা কম কীসে। তবে এটি এখনো একটি গেম চেঞ্জার। এই মুহূর্তে দলটি কেবল সেসব মহিলার ওপর শট পরীক্ষা করছে, যাদের ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন ক্যানসার রয়েছে। কারণ রোগের প্রকারের উচ্চ পুনরাবৃত্তির হার। যদিও আমাদের লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনটি অন্যান্য ধরনের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের ওপর পরীক্ষা করা। অবশেষে বিজ্ঞানীদের দলটি এই ভ্যাকসিনটি এমন মহিলাদের মধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে কি না যারা কখনো এই রোগে আক্রান্ত হননি, তাদের সঙ্গে পরীক্ষা করবে।

ডেভিস এবং কুমার, যাদের উভয়েরই কন্যাসন্তান রয়েছে। তারা আশা করেছেন, এই জাতীয় ভ্যাকসিন তাদের বাচ্চাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাঁচ বছরের মধ্যে, তারা জনসাধারণের মধ্যে ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য এফডিএর অনুমোদন পেতে পারে।

শেয়ার করুন