২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:২৮:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দলে প্রশাসনে অতি উৎসাহীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
দলে প্রশাসনে অতি উৎসাহীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ


কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজমের মা সাহেরা বেগম (৬৭) বার্ধক্যজনিত কারণে গত ১৮ ডিসেম্বর রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান। মা মারা যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পান বিএনপির এই সভাপতি মো. আলী আজম। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শেষবার মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে সোমবার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। তবে সোমবার না দিয়ে আদালত তাকে মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন। পরে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজা পড়ান। জানাজা চলাকালেও আলী আজমের হাতে থাকা হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত লোকজন। জানাজার এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজনের মাঝে ব্যাপক আলোচনা হয়, দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। দেশে বিদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে এমন ঘটনা ভীষণভাবে নাড়া দেয়। 

ঘটনা-২

গত ২১ ডিসেম্বর যুবলীগের মিছিলে তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামানকে দেখা যাওয়া নিয়েও তোলপাড় হয়ে যায় সারা দেশে। ঔদিন বিকেলে রাজশাহীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত যুবলীগের মিছিলের সামনের সারিতে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দেখা গেছে। এই ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে এই মিছিল নিয়ে তানোরের যুবলীগের নেতা-কর্মীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশে যোগদান করেন। এই মিছিলে নেতৃত্বে দেন তানোর উপজেলার যুবলীগের সভাপতি ও তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ। তিনি মিছিলের ব্যানার ধরে সামনের সারিতে ছিলেন। তাঁর পাশেই ছিলেন তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান। শুধু তা-ই নয়, ওসি কামরুজ্জামান যুবলীগের বহরের একটি গাড়িতে চড়ে তানোর থেকে বানেশ্বরে যান। এই বহরে ১৮টি মাইক্রোবাসে ১৪ জন করে নেতা-কর্মী ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ওসি ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তানোর যুবলীগের এই গাড়িবহরটি বানেশ্বরে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বানেশ্বর সরকারি কলেজে মাঠে আয়োজিত ‘মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সুধী সমাবেশে’ যোগদান করেন। 

এর ব্যাখ্যায় নানান ধরনের কথা এসেছে। বলা হয়েছে, আরে এটা তো আমাদেরই অনুষ্ঠান। আরো জানানো হয় যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। এ জন্য আমি এলাকার লোকজন নিয়ে গেছি। তা ছাড়া যুবলীগের মিছিলে আমি যাব কেন বলে মন্তব্য করেন তানোর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। অন্যদিকে ওসির মিছিলে যাওয়ার ব্যাপারে যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ বলেন, তাঁদের মিছিলটা ‘লাইন ক্লিয়ার’ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওসি মিছিলে ঢুকেছিলেন।

 তিনি বলেন, তাঁদের বহরের একটি গাড়িতেই ওসি তানোর থেকে বানেশ্বর এসেছেন। এই ছবি তুলে যুবলীগের সভাপতি নিজেই তাঁর ‘ময়না চেয়ারম্যান’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান গণমাধ্যমে প্রথমে বলেন, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন, সেই সময় তিনিও দাঁড়িয়েছিলেন। ওই ছবিটাই তুলেছে সবাই। তারপর তিনি বলেন, ‘আরে এটা তো আমাদেরই অনুষ্ঠান। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। এ জন্য আমি এলাকার লোকজন নিয়ে গেছি। তা ছাড়া যুবলীগের মিছিলে আমি যাব কেন।’

ঘটনা ৩ 

এটা ঘটেছে গত বছর। বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে আমন্ত্রণপত্রে ছাপানোর অভিযোগ এনে ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদে ছিলেন। তার এই মামলা করার ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ায়। ইউএনও তারিক সালমান বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় শিশুদের উৎসাহিত করতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ছাপিয়েছেন। তবে দলকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করে ছাপানোর অভিযোগে মামলা দিয়ে ইউএনও তারিক সালমানকে হেনন্তা করার বিষয়টি আলোচিত হয়। এ সময় অ্যাডভোকেট সাজু সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলে তার অবদান কী? আজ অতি উৎসাহী হয়ে তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাতে কী হয়েছে? দল ও সরকারকে তিনি বিব্রত করেছেন। বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিন। এরপরই সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ইউএনওর পক্ষে রয়েছে জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়ে ছিলেন, ইউএনও তারিক সালমান নির্দোষ। জানা গেছে সাজু অতি উৎসাহী হয়ে একটি মামলাটি করেছিলেন।  

ঘটনা ৪

এবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর সারা দেশে শোভাযাত্রা করেছিল বিএনপি। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দলের নেতা-কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জে গুলিতে মারা যান শাওন প্রধান নামের যুবদলের এক কর্মী। অভিযোগ উঠেছে, এখানেও অতি উৎসাহের ঘটনা ঘটেছে। কেননা পুলিশের গুলিতে মারা যান শাওন-যা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন মাঠে উঠে।  ঘটনার অনেক পরে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। 

সর্বশেষ ঘটনা..

নিজ দলের পক্ষে প্রচারপত্র বিতরণ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হামলার শিকার হয়েছেন দেশের প্রবীণ প্রকৌশলী ম ইনামুল হক। তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করা হয়। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ইনামুল হককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হঠাৎ এক ব্যক্তি তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। তাঁর সঙ্গে যে ব্যক্তি এমনটা করেছেন তাঁর পরিচয় পাওয়া গেছে। অতি উৎসাহি এই ব্যক্তির নাম তাঁর নাম বানি আমিন। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি।

বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণ

জানা গেছে, এবছর ১ সেপ্টেম্বরে বিএনপি’র কর্মসূচিতে সরকারি দল ও আইন শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের কর্মকান্ড নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাদেরই সন্দেহ ছিল বিএনপির বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে, তেমনি কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করেছে। কেননা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী নিয়ে কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিলে তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। যা নিয়ে নানান গুঞ্জন উঠে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অভিযোগ উঠে পুলিশের মধ্যে কেউ কেউ আছে, যারা সরকারকে বিব্রত করতে চায়। তারা অতি উৎসাহী হয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গুলির ঘটনা ঘটাতে পারে। এর আগে গত ২২ আগস্ট থেকে দেশের মহানগর, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের লোকেরা কর্মসূচিতে নির্বিচার হামলা করছে। এর আগে ৩১ জুলাই ভোলায় লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দলটি। এ ঘটনায় বিএনপির দু’জন নেতা-কর্মী নিহত হয়। এদিকে মাস কয়েক আগে কুমিল্লায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলুর ওপর অতি উৎসাহী কেউ হামলার ঘটিয়েছে বলে খোদ আওয়ামী লীগেই সন্দেহ। যদিও সে সময়  এমন ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন ঘটিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসার এলাকায় নিজ এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন বরকত উল্লাহ বুলু। হামলায় বরকত উল্লাহ বুলু, তার সহধর্মিণী শামীম আক্তার লাকী, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেনসহ অন্তত সাত-আটজন নেতাকর্মী আহত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

অন্য ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল দেখেছেন, ইতোমধ্যে গাজিপুরের ঘটনায় সরকারকে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কেননা এমন ঘটনার প্রতিক্রিয়া মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানিয়ে আসক বলেছে, এ ঘটনা কেবল অমানবিকই নয় বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, আলী আজম গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বোয়ালী ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি। আলী আজমের মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান। শেষবার মায়ের মরদেহ দেখতে এবং জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেতে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। ২০ ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি তাঁর মায়ের জানাজায় উপস্থিত থাকার সুযোগ পান। প্যারোলের পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন তিনি। এমনকি জানাজা পড়ানোর সময় তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও পুলিশ তা খুলে দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেওয়া যাবে না। সংবিধানে এমন বিস্তৃত অধিকার থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ নাগরিককে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয় বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডান্ডাবেড়ি পরানো বিষয়ক উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটাও অনুসরণ করা হয়নি।’

অন্যদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেছেন এক গণমাধ্যমে, ‘মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। তিনি কোনো দাগী আসামি নন বলে শুনেছি। তাই তাঁকে শুধু হাতকড়া পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া যেত।’ 

দায়সারা জবাব..

এদিকে এসব ঘটনার প্রায়ই দায়সারা হাস্যকর যুক্তি দেখানো হয় সরকারের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে। যেমন বলা হয়েছে গাজিপুরের এই ঘটনার ক্ষেত্রে। এতে একেক জন একেকরকম কথা বলে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে । যদিও জানাজা পড়ার সময় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজমের হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করে ইতিবাচক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তবে এমন ঘটনার পেছনে জড়িতদের মন্তব্য বা বক্তব্য সরকারের পক্ষে মোটেই যাইনি। কেননা কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান গণমাধ্যমে বলেছেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা দেওয়া। ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া-না দেওয়ার বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের। আর তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলী আজমকে গ্রেপ্তার করা হয়। কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান বলেছেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা দেওয়া। ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া-না দেওয়ার বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, প্যারোল প্রদানের কর্তৃপক্ষ হলো জেলা প্রশাসক। আমার কাছে আবেদন করেছে, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নির্দেশনা সংবলিত প্যারোলে মুক্তির আদেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, জেলকোড বা অন্যান্য বিষয়ে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে। তিনি এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ঢাকার আদালত চত্বর থেকে জঙ্গির পলায়নের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন। গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ বলেছেন আসামি জেলের বাইরে গেছে, তাই নিরাপত্তার জন্য ডান্ডাবেড়ি দিয়েছি। ওয়ারেন্টে দাগি-নিদাগি কোনো কিছু বলা থাকে না। আমি শুধু মামলার সেকশনগুলো (ধারা) দেখি। অন্যদিকে পানি বিশেষজ্ঞ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. ইনামুল হককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এর বিপরীতে দগায়সাড়া গোছের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে আইন শৃংখলা বাহিনী। 

পুলিশে অতি উৎসাহিদের তালিকা প্রস্তুতের আহবান...

এদিকে প্রশাসনে বিশেষ করে আইন শৃংখলা বাহিনীতে এমন মন মানসিকতার জন্য  কতিপয় সদস্য ও কর্মকর্তার কারণে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগ এমনকি প্রশাসনের শীর্ষরাও। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনও সরব হয়ে উঠেছে। বাহিরের প্রতিক্রিয়াতো আছেই  দেশের ভেতরে ইে বিএনপি নেতাকর্মীদের অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করতে বলে বিষয়টির আরো জোড়ালো করেছেন।  দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী  বলেছেন, ‘পুলিশ নাকি বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। অতি উৎসাহী কিছু পুলিশের সদস্য ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তালিকা আপনারা তৈরি করেন।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন এসব মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া এখন দেশের মধ্যেই থাকে না। এটা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও ঢুকে পড়ে। এসব ঘটনা নিয়ে দেশে বিদেশে তোলপাড়ে আইন শৃংখলায় নিয়োজিতদের ওপরই বর্তায় দেশে-বিদেশে। জবাব তাদেরই তৈরি করে পাঠাতে হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। 

শেষ কথা..

উপরের এসব ঘটনার আগে পরে আরো কয়েকটি এমনই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে গেছে। আর সারাদেশে একের পর এক ঘটনর দায় ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর পড়ছে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও প্রশাসনের কারো এমন অতি উৎসাহী ভাবে দেশে বিদেশে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন ধরনের ইমেজ। জানা গেছে আর একের পর এক সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন খোদ আওয়ামী লীগেরে হাই কমান্ড। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবার দলের হাল ধরে আছেন দীর্ঘদিন। দেশে বিদেশে নানান ধরনের কূটকৌশল মোকাবেলা করেই তাকে দেশ চালাতে হচ্ছে। কিন্তু তার একক ক্যারিসমায় দল ও প্রশাসনের অনেকে অতি উৎসাতি হয়ে উঠেছেন, যার মাসুল শেষ বিচারে আওয়ামী লীগ সরকারকেই দিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন আওয়ামী সরকার ও দল যদি এভাবে অতি উৎসাহিদের দমাতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে চরম মাসুল দিতে হতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞা নিয়ে পথ চলা আওয়ামী লীগ এধরনের অতি উৎসাহিদের অবশ্যই মোকাবিলা করতে পারবে। পারবে বলেই বরিশালের সাজু’র কীর্তিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কিছু লোক দলে ঢুকে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটান। এর মাধ্যমে তারা দল ও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন। তাই সবাইকে সাবধান হতে হবে। দল ভারী করে বদনাম কেনার দরকার নেই। কাউকে দলে নেওয়ার আগে ওই ব্যক্তি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালো করে জানা উচিত। আবার সর্বশেষ দলের কাউন্সিলে দেশের জাতীয় মুদ্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দিয়েছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাকী বিল্লাহ বলেছিলেন, ‘জাতীয় মুদ্রায় আপনার ছবি দেখতে চাই মাননীয় নেত্রী। আপনার ছবি বাংলাদেশের মুদ্রায় দেখলে আমরা শান্তি পাব। কিন্তু এর জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চট করে বলেন, ‘টাকায় একমাত্র জাতির পিতার ছবি থাকবে।’ রসিকতা করে তিনি আরো বলেন, ‘মাইর দিবো তোমাকে, ভাগো।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন এধরনের ঘটনায় বোঝা যায় প্রধানমন্ত্রী চাটুকারিতা ও অতি উৎসাহীদের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সজাগ আছেন।

শেয়ার করুন