২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চলছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চলছে


মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকীতে ওয়েবিনারে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার নেতা টিটো সোহেল বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা এদেশের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবের অবদান’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক অনলাইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের ২১ জন বিশিষ্ট মানবাধিকার নেতা, শান্তি কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী ও  উন্নয়নকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে বক্তব্য দেন বেলজিয়ামের সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ও প্রাক্তন এমইপি পর্তুগিজ মানবাধিকার নেতা পাওলো কাসাকা, ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ, পাকিস্তানের নারী অধিকার ও শান্তি কর্মী, ‘তেহরিক-ই-নিশওয়ান’-এর সভাপতি ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সীমা কেরমানি, পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন গবেষক লেখক ও মানবাধিকার নেত্রী তাহিরা আবদুল্লাহ, তুরস্কের পেন ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি, কবি ও নাট্যকার তারেক গুনেরসেল, আফগান ইন্টেলেকচুয়াল গ্লোবাল কম্যুনিটি আমেরিকার সভাপতি মানবাধিকার নেতা ও লেখক শাহী সাদাত, সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত আফগান শান্তিকর্মী ও লেখক আসলাম জামি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্ব সিন্ধি কংগ্রেস এর সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকা নেতা অধ্যাপক লাখুমাল লুহানা, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রাসবিহারী ঘোষ, ফোরাম  ফর সেক্যুলার  নেপালের  সভাপতি রাষ্ট্রদূত যুবনাথ লামসাল, সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আফগান কণ্ঠশিল্পী ও শান্তিকর্মী ঝালা সারমাস্ত, ইরানের- মানবাধিকার নেত্রী ব্যানফশেহ পোর’জান্দ, পোল্যান্ডের নেভার এগেইনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মানবাধিকার নেত্রী নাটালিয়া সিনায়েভা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার কর্মী আরমা দত্ত এমপি, মুক্তিযুদ্ধে শহিদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান মানবাধিকার নেতা আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সর্ব-ইউরোপীয় সভাপতি মানবাধিকার কর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, ফিনল্যান্ডের নির্মূল কমিটির সভাপতি মানবাধিকার নেতা ও গবেষক ড. মুজিবর রহমান দফতরি ও অস্ট্রেলিয়া মানবাধিকার নেতা টিটো সোহেল।

সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘আজ দুই অক্টোবর। আমরা, বিভিন্ন দেশের নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পুরোগামী নেতা মহাত্মা গান্ধীর ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে এই বহু-জাতিক সম্মেলনে জড়ো হয়েছি। ২০০৭ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক গান্ধীর পথকে সম্মান জানাতে ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছিল। এই দিনে, বিশ্বজুড়ে অহিংসা এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। ‘মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা জানাতে চাই, যিনি ১৯৭১-এর মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের আগে বাংলাদেশে একটি অভূতপূর্ব অসহযোগ ও অহিংসা আন্দোলন শুরু করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর গণহত্যার মতো নৃশংস কর্মকাণ্ড চালায়। গান্ধীজি এবং বঙ্গবন্ধু উভয়েই মানবতা ও শান্তির প্রতি নিবেদিত ছিলেন।

পাওলো কাসাকা বলেন, ভারতে মহাত্মা গান্ধী ও বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন। তারা তাদের দেশে মানবতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দু’জনেই দুটি দেশের অভ্যুদয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন।

অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ বলেন, মহাত্মা গান্ধী ও মুজিবুর রহমান দু’জনেই সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিফলন দেখা যায়। 

সীমা কেরমানি বলেন, ‘আমি দেখছি বিশ্বজুড়ে নিজের স্বাধীনতার জন্য নারীরা বিশেষ করে ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে অহিংস আন্দোলন করছে। কিন্তু এই দেশগুলোর সরকার ধারাবাহিকভাবেই নারীদের ওপর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। আর এজন্য বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত।

তাহিরা আবদুল্লাহ বলেন, ‘গান্ধীজি ও বঙ্গবন্ধু দু’জনেই দুটি দেশের জাতির জনক। কোনো কোনো সময় ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে শান্তি প্রক্রিয়া চালাতে হয়। তালেবান প্রভাবিত পাকিস্তান ও ইরানে কি হচ্ছে সবাই আমরা জানি। গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শান্তি প্রতিষ্ঠা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে করতে পারেন। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে অনেক সময় শান্তির জন্যও যুদ্ধ করতে হয়। শাসকদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে শান্তিকর্মীদের অহিংস আন্দোলনই যথেষ্ট নয়। যেটার উদাহরণ রয়েছে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে।

তারেক গুনেরসেল বলেন, ‘আমার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আগ্রাসন ও অবিচার রোধে আসুন আমরা খুব ভালোভাবে কাজ করি। আসুন সমগ্র বিশ্বে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ফেডারেশন গড়ে তুলি।

শাহী সাদাত বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময়ে মহান নেতা মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন করছি যখন বিশ্বের অন্যান্য অংশে গণহত্যার মতো নৃশংস কর্মকাণ্ড চলছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে চলছে এই গণহত্যা। আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো আফগানিস্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য। এখন যদি আমাদের কান্না না শোনেন, আমাদের কথা না শোনেন তবে একদিন দেখবেন যুদ্ধ আমাদের দরজার ভেতরে ঢুকে গেছে।

আসলাম জামি বলেন, আফগানিস্তানেও বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ব্যক্তিত্ব দরকার ছিল যিনি একটি জাতিকে তার দুরবস্থা থেকে বের করে আনবেন।

অধ্যাপক লাখুমাল লুহানা বলেন, ‘অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান ভারত ও বাংলাদেশ নামক দু’টি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছিলেন। ভারত থেকে বাংলাদেশের বিষয়টা একটু ভিন্ন। সো কল্ড পাকিস্তান চেয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে নানা অন্যায়-অত্যাচারের মধ্য দিয়ে দাবিয়ে রাখতে। এজন্য তারা বাংলাদেশে গণহত্যাও চালিয়েছে। কিন্তু তারা এই হিংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে বাঙালিদেও দাবিয়ে রাখতে পারেনি।’

যুবনাথ লামসাল বলেন, বিশ্বে যে হারে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে সেই অবস্থায় অহিংস আন্দোলনের আদর্শ মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করা উচিত।

নাটালিয়া সিনায়েভা বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ আক্রান্ত মানুষকে সহযোগিতার জন্য পোল্যান্ড থেকে আরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। ইউক্রেনে মানবতা লঙ্ঘন রোধে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা প্রয়োজন।

ঝালা সারমাস্ত বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময়ে এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছি যখন সারাবিশ্বেই মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে এই অবস্থাটা খুবই ভয়াবহ। তালেবানের বিরুদ্ধে যেভাবেই হোক আফগানিস্তানকে রক্ষা করতে হবে।

ব্যানফশেহ পোর’জান্দ বলেন, ইরানে প্রতিনিয়তই মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে। আধুনিক ইরানের জন্য আমার আন্দোলনও অব্যাহত আছে।

অধ্যাপক ড. রাসবিহারী ঘোষ বলেন, ‘অহিংস আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু দু’জনেই বিশ্বের মানুষের কাছে আদর্শ। শ্রদ্ধা জানাই তাদের।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বিশ্বশান্তিতে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুকরণীয়।

আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বিশ্বে এখন গভীর সংকট চলছে। মানবতা চরম লঙ্ঘিত হচ্ছে ইউক্রেনে, ইরানে, আফগানিস্তানে এবং এছাড়া অন্যান্য দেশেও। এই অবস্থায় গান্ধীজি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ খুবই জরুরি।

আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, শান্তির জন্য তাদের প্রধান দৃষ্টি ছিল সমাজ এবং জাতির মধ্যে বৈষম্য হ্রাস মহাত্মা এবং বঙ্গবন্ধু উভয়েই শান্তির জন্য যা প্রচার করেছিলেন, তার উদাহরণও সৃষ্টি করেছিলেন।

তরুণ কান্তি চৌধুরী বলেন, মানবতা লঙ্ঘনের বর্তমান পরিস্থিতি অহিংস আন্দোলনের অনুকরণীয় এই দুই মহান নেতার মতো রাষ্ট্রনায়ক আজ খুব দরকার।

ড. মুজিবর রহমান দফতরি বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব ইতিহাসের দুই সম্মানিত নেতা। উভয়ই তাদের সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন এবং তাদের ধর্ম, বর্ণ এবং জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে মানুষের সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন।’

শেয়ার করুন