২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৩০:০১ পূর্বাহ্ন


নদীর করুন পরিনতিতে জবাবদিহি করতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১১-২০২২
নদীর করুন পরিনতিতে জবাবদিহি করতে হবে বাংলাদেশের একটি নদী/ ফাইল ছবি


দেশের নদীপথে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকা আছে। আছে নাব্যতার সঙ্কট। এজন্য নদীর বুকে বড় নৌযানগুলি আর এখন দেখা যায়না। কারন নদীর নাব্যতা কমে গেছে এবং কমেছে এর প্রশস্ততাও। অন্যদিকে দখল আর দূষণের জন্য নদী তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে। আর এতোসব কারণে এখন মানুষ আর নৌপথ ব্যবহার করেনা যদিও নৌপথ অনেক বেশী সাশ্রয়ী। তবে নদীর এমন করুন পরিনতির জন্য দায়িত্বশীলদের একদিন ঠিকই জবাবদিহি করতে হবে। এর পাশাপাশি নদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় এবং বাস্তবায়নে নদীপাড়ের জনগনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ নৌপথকে এখনব গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। 


এসব কথা উঠে আসে নদীর পাড়েই আয়োজিত এক নদী কথন অনুষ্ঠিানে। বুধবার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর আয়োজনে ‘যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদী’ শীর্ষক নবম এবং শেষ নদীকথন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে বালু নদীর তীরবর্তী ইটাখোলা, খিলগাঁও, ঢাকা এলাকায় এই নদীকথনটির আয়োজন করা হয়। নদীকথনে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীর গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে নদীকে পুনরুদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আহবান জানানো হয়।  

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের প্রধান শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত নদীকথনে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, নোঙর বাংলাদেশ এর সভাপতি সুমন শামস, সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র এবং বারোগ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মোঃ সুরুজ মিয়া। এছাড়াও নদীদূষণ রোধে কাজ করেন এরকম স্থানীয় কমিউনিটি র্ভিত্তিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। 



নদীর পাড়ে আয়োজিত এক নদী কথন অনুষ্ঠান/নিজস্ব ছবি 


শরীফ জামিল বলেন, নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সকল গ্রাম শহর নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এমন কোন জনবসতি নেই যা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেনি। আদিকাল থেকেই মূল যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নৌপথ। তাই নৌপথকে গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। এইজন্য দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় এবং বাস্তবায়নে নদীপাড়ের জনগনকে সম্পৃক্ত করতে হবে 

ইবনুল সাইদ রানা বলেন, ‘‘বড় নৌযানসমূহ আর এখন দেখা যায়না কারন নদীর নাব্যতা কমে গেছে এবং প্রস্থও হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়াও দখল আর দূষণের জন্য নদী তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে এবং দূষিত পানিতে পরিনত হয়েছে। এখন মানুষ আর নৌপথ ব্যবহার করেনা যদিও নৌপথ অনেকবেশী সাশ্রয়ী। 


সুমন শামস বলেন,আমাদের দেশের নৌপথসমূহ হারিয়ে যাচ্ছে। নড়াই নদী যা ঢাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত, বেগুনবাড়ি খাল নাম দিয়ে নদীটিকে হত্যা করা হয়েছে। এই নদীর পুনুরুদ্ধারের দাবি করছি। 

নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, ‘‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমরা নদীর বুকে অপরিকল্পিতভাবে ব্রীজ ও সড়ক তৈরী করেছি । নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ধবংস করে উন্নয়ন করেছি যা এদেশের নৌপথসমুহ ধবংস করেছে।  

মোঃ সুরুজ মিয়া বলেন, বালু নদী আগামীর প্রজন্মের কাছে কাল্পনিক একটি নদী হয়ে যাবে। ঢাকা শহরের বর্জ্য এই নদীতে এসে পরছে এবং নদীকে দূষিত করে ফেলছে। নদীতে মাছ না থাকার কারণে এই এলাকার জেলে সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।অথচ একসময় এই নদীর মাছ নদী পথে ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হতো। 

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম, রাজধানী ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে ইউএসএআইডি এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দূষণবিরোধী একটি অধিপরামর্শমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে নিয়ে এই কনসোর্টিয়ামটি গঠন করেছে।


দূষণবিরোধী কর্মসূচিটি ঢাকা শহরের বায়ু, শব্দ ও নদী দূষণ মোকাবেলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সরকারী সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিয়ে একত্রে দূষণ পরীবিক্ষণ এবং বিভিন্ন দূষণবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের আওতায় নদী দূষণ রোধে এই রিভার টকি-নদী কথনের আয়োজন করা হয়েছে। নদীদূষণের প্রভাবে জীবন ও জীবিকায় যে সকল সমস্যা তৈরী হচ্ছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করনীয় কি তা তুলে ধরাই নদীকথন আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।


শেয়ার করুন