২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৫২:৩২ অপরাহ্ন


ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর জানাজা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৭-২০২২
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর জানাজা


জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ২২ জুলাই (বাংলাদেশ সময়) দিনগত রাত ২টার দিকে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন গাইবান্ধা-৫ আসনের এই সংসদ সদস্য। মৃত্যুকালে ফজলে রাব্বী মিয়া তিন মেয়ে রেখে গেছেন। ২০২০ সালে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান।

এদিকে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৩ জুলাই বাদ জোহর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। জানাজা পরিচালনা করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খতিব মওলানা আবু জাফর বেগ।

জানাজায় মুক্তিযোদ্ধা, ক‚টনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাহিত্যিক, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজার পূর্বে স্মৃতিচারণ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনির হোসেন। তিনি বলেন, প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। এর বড় প্রমাণ তিনি সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সরকারের উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালনেও তিনি অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। এ সময় উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি মনির হোসেন মরহুমের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করেন। সবশেষে ডেপুটি স্পিকারের মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন উপস্থিত মুসল্লিদের সামনে। এ সময় ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হাসান প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের যে কোনো ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহŸান জানান। 

প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের ভাতিজা ও সহকারী একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম সবার কাছে মরহুমের জন্য দোয়া চান। তিনি প্রয়াত অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বীর যে কোনো লেনদেনের ব্যাপারে জানানোর জন্য সবার প্রতি আহŸান জানান। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের উপস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক আফতাব মান্নানসহ অনেকে।

জানাজা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার কফিনে স্যালুট দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। এ সময় স্বজনরা জানিয়েছেন, মরহুমের কফিন নিয়ে শনিবার রাতেই তারা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে তার লাশ বাংলাদেশে পৌঁছেছে এবং আরো জানাজা শেষে তার লাশ দফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ই এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। 

ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হন।

২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন। নবম সংসদে ফজলে রাব্বী সরকারি প্রতিশ্রæতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, কার্যউপদেষ্টা কমিটি, কার্যপ্রণালি বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এসময় তিনি কার্যউপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন।


শেয়ার করুন