১৬ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:২৩:১৯ অপরাহ্ন


কারাফটকে মির্জা ফখরুল ‘গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন সফল হবেই’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস কারামুক্ত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০১-২০২৩
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল  ও মির্জা আব্বাস কারামুক্ত কারামুক্ত ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ছবি সংগৃহীত


গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন সফল হবেই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন  কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কারা ফটকের সামনে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানোর জন্য এদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমি অবিলম্বে আমাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করছি। আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে জনগনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

এই সময়ে নেতা-কর্মীরা ‘জ্বালাও জ্বালাও আগুন জ্বালাও’ শ্লোগান দিতে থাকে।

সাদা পাজারো জীপে করে বিএনপি মহাসচিব কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসনে। পাজারো গাড়ীর ওপর থেকে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। এরপরই ক্রীম কালারের গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন মির্জা আব্বাস। তিনি গাড়ীর ওপর থেকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, ‘‘৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের জীবনে এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা বলতে গেছি, আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা বলতে গেছি, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলতে গেছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যের কথা বলেছি, আমরা বাজ্রা দরের কথা বলেছি। এটা কী আমাদের অন্যায় হয়ে গেছে? আমরা কী কোনো অন্যায় করেছি? আমরা কোনো অন্যায় করি নাই, কোনো পাপ করি নাই। এই সরকার আমাদেরকে একে একে বেশ কয়েকবার জেলে নেয়, আমাদের সময় থেকে বঞ্চিত করেছে, আমার নেতা-কর্মীদের কাছে থাকা থেকে বঞ্চিত করেছে।”


কারামুক্ত মির্জা আব্বাস/ছবি সংগৃহীত 


মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আজকে আমাদের মুক্তিটা নিসন্দেহে আনন্দের। তবে জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে রয়ে গেছে বন্দি। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা আপনাদের আমি বর্ণনা করতে পারবো না এই মুহুর্তে।”

ওই নেতা-কর্মীরা কি অবস্থায় আছে এক আল্লাহ জানেন,মা‘বুদ জানেন। আর আমরা দেখে এসেছি। আমরা এই সরকারের কাছে আশা করাটা খুব মুশকিল। তারপরেও বলব, আপনারা(সরকার) এই কার্বান্দিদের প্রতি দয়া করে একটু বিবেকবান হবেন, বিবেককে কাজে লাগান। একটু দেখে যান তারা কেমন আছে? একটা জেলখানার মধ্যে তারা কেমন করে থাকে, একটা পিঞ্জিরের মধ্যে এটা আমি বুঝাতে পারবো ন্।া” 

তিনি বলেন, ‘‘ আমি সরকারের কাছে আহবান জানাব, সরকার বলেছে, আমি পত্রিকায় দেখেছি তারা মানবিকতার কথা বলেছে। আমরা সরকারকে বলব,  এই বন্দিদের প্রতি আপনারা মানবিক হন।এরা বন্দি নন, এরা চোর নয়, এরা ডাকাত নয়।  এরা সব রাজনৈতিবব কর্মী।ওরা দেশের মানুষের কথা বলে বলে আজকে কারাগারে।”

কারাবন্দি অবস্থায় নিজের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা।

পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল  ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। সেখানে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বিকাল থেকে কারামুক্ত নেতাদের অপেক্ষায় ছিলেন। মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সেখানে পৌঁছালে নেতা-কর্মীরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়।

সোমবার সন্ধ্যায় ৫টা ৫৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতা মুক্ত হন।

গতকাল রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখলে এই দুই নেতা মুক্তির পথ খুলে যায়। কেরানীগঞ্জের কারাগারে মুক্তির সময়ে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিনী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।

কারা ফটকের বাইরে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, এসএম জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রিয়াজুল হান্নান, আনোয়ার হোসাইন, ইউনুস মৃধা, শায়রুল কবির খানসহ  শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। নেতা-কর্মীরা মুহুর্র মুহুর্র করতালি শ্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়।

পরে দলের মহাসচিব সড়ক পথে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিমুখে রওনা হন।

সর্বশেষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৫ সালে প্রায় ৯ মাস কারাবাসের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে মির্জা আব্বাস আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নাচক করে দিয়ে কারাগারে যান। তবে ১৮ দিন পর উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্ত হন।

গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন খানের বেঞ্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দেন।

এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানালে তা সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট হাইকোর্টের দেয়া আদেশই বহাল রাখে। কারাবন্দি হওয়ার পর বিএনপির এই দুই নেতা জামিন আবেদন তিন দফা ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাকচ হয়। পরে গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতেও সেই  আবেদন নামঞ্জুর হয়।

গত ৮ ডিসেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শাহজাহানপুর বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে যায়।

পরদিন নাশকতার একটি মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে জামিন আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে পাঠানো হয় কারাগারে।

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উতকন্ঠা- উত্তেজনার মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে অভিযোগ তুলে তখন ওই কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ, গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েকশ নেতা-কর্মীকে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় চারটি মামলা করে পুলিশ। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার নেতকর্মীকে আসামি করা হয় সেসব মামলায়। তাদের মধ্যে ৭২৫ জনের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, ওই তালিকায় মির্জা ফখরুল বা মির্জা  আব্বাসের নাম ছিল না।


শেয়ার করুন