১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৭:০৩:৩২ অপরাহ্ন


দেশকে রামেন্দু মজুমদার
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াই চলছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৩
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াই চলছে রামেন্দু মজুমদার


রামেন্দু মজুমদার। অভিনেতা, নির্দেশক, সংগঠক। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। অভিনয় জীবনের দীর্ঘ পথপরিক্রমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত অর্জনের কারণেই আপনার নামের পাশে অনেক বিশেষণ। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

রামেন্দু মজুমদার: কেউ নাটকের মানুষ বললে শোনতে ভালো লাগে। সংস্কৃতিক কর্মী বললে ভালো লাগে। আসলে প্রত্যেকটা মানুষেরই উচিত সমাজের জন্য কাজ করা। আমি সেই কাজটাই করার চেষ্টা করি নাটকের মাধ্যমে। 

প্রশ্ন: কিন্তু প্রায় দুই দশক নাটক পরিচালনা থেকে দূরে ছিলেন। এর কারণ কি?

রামেন্দু মজুমদার: এর কারণ অনেক। ২০০৩ সালে ‘মাধবী’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আবার ২০২২ সালে এসে ‘পোহালে শর্বরী’র নির্দেশনা দিয়েছি। মঞ্চের সঙ্গেই একটি জীবন কাটিয়ে দিলাম। এই নাটকটি আমাদের নাটকের দল থিয়েটারের। কোভিডের আগে আমরা মহড়া শুরু করেছিলাম। এর সঙ্গে সংযুক্ত নির্দেশক হিসেবে আছেন ত্রপা মজুমদার। বলতে গেলে ৯০ ভাগই ত্রপা করেছেন। তারপরও আমি কীভাবে চাই, কী চাই, সেসব বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। পোহালে শর্বরী নাটকের মূল গল্প পড়ার পর ভালো লেগেছিল। তারপর দলের সঙ্গে শেয়ার করি। এরপর অংশুমান ভৌমিক মূল গল্প থেকে অনুবাদ করেন।

প্রশ্ন: আপনি বিটিভির প্রথম নাটক ‘একতালা দোতালা’তে অভিনয় করেছেন। সেই সময়কার কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

রামেন্দু মজুমদার: ওই নাটকটির জন্য আমরা এক মাস রিহার্সাল দিয়েছিলাম। কারণ, তখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের মুখস্থ বলতে হবে এবং সেটা লাইভ হবে, রেকর্ডিংয়ের সুযোগ ছিল না। আরেকটা মজার কথা মনে আছে, সে সময় এনইসি লেখা জিপ ছিল। সে সময় ঢাকার রাস্তায় যানবাহন কম ছিল। দেখলে লোকে খুব বিস্ময়ের সঙ্গে তাকাতো। মহড়ার পরে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হতো। আমি সবার শেষে নামতাম, যাতে সবাই দেখে যে আমি টেলিভিশনের জিপে আছি। নিজেকে মনে হতো কিছু একটা হয়ে গেছি!

প্রশ্ন: এ দেশের মঞ্চ নাটক কতদূর এগিয়েছে?

রামেন্দু মজুমদার: গত ৪৮ বছরে যথেষ্ট এগিয়েছে। অনেকটা শূণ্য থেকেই শুরু হয়েছিল। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমাদের নাটক নিয়ে অবশ্যই আমরা গর্ব করতে পারি। আমাদের সুযোগ-সুবিধা কম। তা সত্ত্বেও প্রচুর নাটকের দল হয়েছে। নতুন নাটক এসেছে। তরুণরা নাটকে আগ্রহী হয়েছে। তৈরি হয়েছে নির্দেশক, অভিনয়শিল্পী। অনেক নিরীক্ষাধর্মী নাটক হয়েছে।

প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন মঞ্চ নাটকের দর্শক কমে যাচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?

রামেন্দু মজুমদার: দর্শক তো কমছে। কারণ আজকাল দর্শকের কাছে বিনোদনের অনেক বিকল্প মাধ্যম আছে। টেলিভিশন খুললেই অনেক নাটক দেখতে পারে। কিন্তু মঞ্চ নাটকের এক ধরনের আকর্ষণ আছে। যানজটের কারণে দর্শক মঞ্চে আসার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। দেখুন, কেউ মিরপুর বা উত্তরা থেকে দুই ঘন্টা করে চার ঘন্টা জার্নি করে এসে দেড় বা দুই ঘন্টার নাটক দেখবেন, সেটা কল্পনা করা যায় না। দ্বিতীয় কথা হলো- অনেক দল হয়েছে, নাটক হচ্ছে, সব নাটকই যে মানসম্পন্ন তা বলা যাবে না। ফলে নানা নাটকের ভিড়ে ভালো নাটক খুঁজে বের করা একটু কঠিন।

প্রশ্ন: গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান নাট্যচর্চায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?

রামেন্দু মজুমদার: নাট্যকর্মীদের বড় শক্তি ফেডারেশান। তবে গঠনমূলক কাজের চেয়ে ফেডারেশান নিয়ে এখন রাজনীতি বেশি হয়ে গেছে। পদ-পদবির আকাঙ্খা বাদ দিয়ে দলগুলো অভিন্ন স্বার্থে কাজ করে তাহলে ফেডারেশানের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হবে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন: জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ভেবেছেন কখনও?

রামেন্দু মজুমদার: স্বীকৃতির জন্য কোনো কাজ করি না। নাটকের জন্য কাজ করে গেছি। কিছুটা হলেও বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক ও সংস্কৃতির জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। আইটিআইর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? সফল হব তা ভেবে কিছু করিনি। সবার ভালোবাসা এবং দেশের সংস্কৃতির কথা ভেবে সব সময় কাজ করেছি। এভাবেই আগামীর পথ পাড়ি দিতে চাই। আমি মরে যাওয়ার পরে লোকে যদি মনে রাখে তাহলেই আমি খুশি। তবে রাষ্ট্রও আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এটি আনন্দের।

প্রশ্ন: নাটকের বাইরে দেশের সার্বিক অবস্থা আপনার কাছে কেমন মনে হয়?

রামেন্দু মজুমদার: অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণ-দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াই চলছে এখন। কিন্তু কিছু মানুষের দুর্নীতির কারণে সেই লড়াইয়ে জয় পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা হচ্ছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কিন্তু এই সুযোগে দেশের ব্যবসায়ীরা যেভাবে লুন্ঠন করছেন, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন, সেটা অগ্রহণযোগ্য।’

শেয়ার করুন