০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:৪০:০৯ পূর্বাহ্ন


২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৪-২০২২
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ


২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন গত ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ নানা ধরনের নিপীড়নে জড়িত থাকলেও এর জন্য তাদের জবাবদীহী করা হয় না বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কম সংখ্যক ঘটনাতেই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়াও প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগের ফিরিস্তি প্রমাণ করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে পুরোপুরি চেপে ধরেছে। এই পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে এটি ছিলো ভয়াবহ। এই রিপোর্টে ভয়ঙ্কর সব রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকা সন্তুষ্ট নয়। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের উপরও বাইডেন প্রশাসন নাখোশ। এর প্রধান কারণ হচ্ছে গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশ, ভোটার বিহীন বাংলাদেশ। সেই সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, মামলা, অত্যাচার এবং নির্যাতন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয় এই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুযায়ীই অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই, যেভাবে নেই সরকারের জবাবদিহিতা। সম্প্রতি সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ম্যানেজ করতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্রকে। উল্টো পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে দিয়েছেন। শর্ত দিয়ে বসেছেন অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ক্রয় করবে বাংলাদেশ, তবে সে ক্ষেত্রে শ্যাংসন উঠাতে হবে এবং এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। এই প্রস্তাবে আরো ক্ষেপে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যে সময় দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি সেই অবস্থায় প্রকাশ করা হলো প্রতিবেদন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) দায়িত্ব পালন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই বাহিনীর ওপরে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানা ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে থাকেন।বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব বিষয়ের গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে সেগুলো হলো, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকান্ড; গুম; সরকারের পক্ষে নাগরিকদের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ; কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ; নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার বা আটক; রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার; অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ; বিচারবিভাগের স্বাধীনতার জন্য বাধা; ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া; বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করা; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন।

এ ছাড়া শরণার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ; শরণার্থীদের নিপীড়ন; ব্যক্তির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ; সরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি; দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ; লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ঘাটতি, যার মধ্যে গৃহনির্যাতন, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চা রয়েছে; ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি; হিজড়াসহ ভিন্ন লৈঙ্গিক আচরণের মানুষের ওপর সহিংসতা; ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের সমিতি করার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং ব্যাপক মাত্রায় শিশু শ্রম।

শেয়ার করুন