২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৭:১০:৩৪ অপরাহ্ন


দেশকে সাজন কুমার মিস্ত্রী
সচেতন সংখ্যালঘু কারো ভোট ব্যাংক হবেন না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০২-২০২৩
সচেতন সংখ্যালঘু কারো ভোট ব্যাংক হবেন না সাজন কুমার মিস্ত্রী


মোড়েলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির উপদষ্টা এবং বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিস্ত্রী বলেছেন, সংখ্যালঘুরা সবসময়ই রাজনৈতিক কারণে বলির পাঁঠা হচ্ছেন বলে মনে করি। তবে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তাই সচেতন সংখ্যালঘু মানুষেরা আর কারো ভোট ব্যাংক হবেন বলে মনে করি না। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের সুবিধায় অনেক প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কেউই বাস্তায়ন করছেন না। তাই যে রাজনৈতিক দল বাস্তবে সংখ্যালঘুদের সুযোগ-সুবিধা দিবেন সচেতন সংখ্যালঘুরা সেই রাজনৈতিক দলের সাথেই মিত্রতা করবেন। এটাই আমি মনে করি।

সাজন কুমার মিস্ত্রী জাতীয় পার্টি থেকে বাগেরহাট-৪ (মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে একাদশ জাতীয় উপনির্বাচনে ২০২০ অংশগ্রহণ করেছেন। দেশ পত্রিকার সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

দেশ : আপনারাতো সরকারের সাথে আছেন। সে হিসাবে দেশের পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : দেশের পরিস্থিতি আমার থেকেও আমার প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ভালো জানেন। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে যে কেউই বলবেন, দেশের সার্বিক দিক মিলিয়ে তেমন ভালো যাচ্ছে না। 

দেশ : আপনারা সংসদে বিরোধীদল না সরকারি দল?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : আমি রাজনৈতিক দলের হয়ে বক্তব্য দিতে চাচ্ছি না। আমি একজন তৃণমূল বা সাধারণ জনগণের স্থান হতে মন্তব্য করলে, ভালোভাবে মন্তব্য করতে পারি। আর যে বিষয় হলো, আমি এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের মূল্যায়ণ করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, জনগণ উন্নয়নের রূপকার পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের লাঙল মার্কায় ভোট দিতে চেষ্টা করলেও জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পেরেছেন বলে মনে করি না। জনগণ স্বাধীনভাবে যদি ভোট দিতে পারতেন, তাহলে মহান জাতীয়  সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে যেতে পারতাম এবং আরো অনেক উত্তর দিতে পারতাম। যেহেতু আমি সংসদ  সদস্য নই, অতএব এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে আমি এটাই মনে করি, দেশ ও জনগণের মঙ্গলে জনতার বন্ধু জি এম কাদেরের নেতৃত্বে সবসময়ই বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে এসেছেন।

দেশ : জাতির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আপনারা কথা বলেন না কেন?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : জাতির জন্য মানবাধিকারের কথা আমরা সবসময়ই বলতে চেষ্টা করি।

দেশ : সম্প্রতি রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক হিন্দু সম্মেলনে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়নসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ নামে সংগঠনের মাধ্যমে। আপনি কি মনে করেন না এসরকার আপনাদের ব্যাপারে আন্তরিক না?

সাজন কুমার মিস্ত্রী :  সরকার আমাদের ব্যাপারে আন্তরিক কিনা, সেই উত্তর সরকার দিতে পারবেন। তবে নিরীহ মানুষেরা ভালো নেই বলে মনে করি। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ধীর্ঘদিন দাবি করে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথেও এ বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো সুফল মেলেনি।

দেশ : দেশ  আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের একটি অসাম্প্রদায়িক সরকার বলে মনে করেন। তাদের ওপর কি আপনাদের আস্থা নেই? না থাকলে কেনো নেই?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। কিন্তু বিভিন্ন সময় যারাই সরকারে ছিলেন, তাদের কর্মকা-ই বলে দিবে কোন রাজনৈতিক দল অসাম্প্রদায়িক... বেশিরভাগ হিন্দু বন্ধুগণ আওয়ামী লীগ সমর্থন করে থাকেন। অনেক হিন্দু বন্ধু বিএনপিও করছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আমলে হিন্দু সম্প্রদায় কি পেয়েছি, আমার জানা নেই। তবে আমি যতটুকু জানি, আমাদের দেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকলেই অনেক কিছু পেয়েছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়। যেমন- সংখ্যাগুরু ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা চিন্তা করে, জুমার নামাজের দিন শুক্রবার ছুটি বাস্তবায়ন। হিন্দু সম্প্রদায়ের কল্যাণে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ছুটিসহ অনেক কিছু। অন্যান্য সম্প্রদায়ের কল্যাণেও কাজ করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আমার রাজনীতির জীবনে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জনতার বন্ধু জিএম কাদেরের মতো একজন ধার্মিক ও সৎ নিষ্ঠাবান রাজনীতি ব্যক্তি খুব কম দেখেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমি আশাবাদী, একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় জিএম কাদের যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন, তাহলে বর্তমানে আমাদের দেশের থেকে অনেক উন্নত রাষ্ট্রের থেকেও উন্নয়ন হবে বলে মনে করি। 

দেশ : আস্থা নষ্ট বা হানির এমনকি কিছু করেছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আস্থা নষ্ট বা হানি এমন কিছু করেছে কিনা সেই উত্তর আওয়ামী লীগ ভালো বলতে পারেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

দেশ : সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আর কোনো রাজনৈতিক দলের বলির পাঁঠা বা ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হবে না। আপনারা এ পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দলের বলির পাঁঠা হয়েছেন? কেন এটা বলছেন?

দেশ : এখন কোন রাজনৈতিক দলের ওপর বেশি আস্থা আপনাদের? আপনাদের দাবি কারা মেনে নিতে সত্যিকারেরর আন্তরিক বলে মনে করেন?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : সংখ্যালঘু মানুষেরা সবসময়ই রাজনৈতিক কারণে বলির পাঁঠা হচ্ছেন বলে মনে করি। তবে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক সচেতনতা বেড়েছে। তাই সচেতন সংখ্যালঘু মানুষেরা আর কারো ভোট ব্যাংক হবেন বলে মনে করি না। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের সুবিধার জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা এখনো বাস্তায়ন কেউ করেনি। তাই যে রাজনৈতিক দল বাস্তবে সংখ্যালঘুদের সুযোগ-সুবিধা দিবেন সচেতন সংখ্যালঘুরা সেই রাজনৈতিক দলের সাথেই মিত্রতা করবেন। এটাই আমি মনে করি।

দেশ : আপনাদের দাবি মনে নেয়ার ব্যাপারে সব সংখ্যালঘুরা ঐক্যবদ্ধ না কেন? এজন্য বলা হচ্ছে যে কার কথা এ সরকার শুনবে?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের আস্থা, সেই কথা বলার সময় এখনো আমাদের আসেনি। আমরা বাস্তবতায় বিশ্বাসী। সময় সব বলে দিবে।

দেশ : এসরকার কী সব ধর্মের মানুষের জন্য কাজ করছে না?

সাজন কুমার মিস্ত্রী : একটি রাষ্ট্রের সরকার সব ধর্মের মানুষের জন্যই কাজ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আর আমি তো সবসময়ই বলে থাকি, যে আমার প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা সব বিষয়ে অবগত আছেন। তাই এই বিষয়ে সরকার ভালো বলতে পারেন। তাই এই বিষয়ে আমার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন বলে মনে করি। আমাদের বঞ্চিত অধিকার আদায়ের দাবিতে যারা নির্লোভী নিঃস্বার্থ ও সচেতন, তারা সর্বসময়ই ঐক্যবদ্ধ। কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের মধ্যে কিছুটা অনৈক্যের চেষ্টা করে থাকে। যারা সৎ নিঃস্বার্থভাবে মানুষের বঞ্চিত অধিকার নিয়ে কথা বলেন, সরকার তাদের কথাই শোনা উচিত বলে মনে করি। 

দেশ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

সাজন কুমার মিস্ত্রী : ধন্যবাদ আমার প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণকে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সকল সৎ ও মানবিক ব্যক্তিবর্গ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে সৎ ও ভালো মানুষের জয় হোক, এই প্রার্থনা স্রষ্টার দ্বারে।

শেয়ার করুন