১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১০:৩৬:০৬ অপরাহ্ন


জীবনের গল্প : ৪৬
শওকত হোসেন বাদল
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৪-২০২২
জীবনের গল্প : ৪৬


বেশ কয়েকদিন থেকে একটা জিনিস ল করছি। সীমার সঙ্গে যতই রাগারাগি করি না কেন, ও কিছুই বলে না। নিশ্চুপ হয়ে সব শোনে। একটা কথাও বলে না। যখনই ওর সঙ্গে রাগারাগি হয়, ও মাথা নিচু করে রান্নাঘরে চলে যায়। আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসে বলে, ‘এই নাও চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো।’

আমি অবাক হয়ে চায়ে চুমুক দিয়েই শান্ত হয়ে যাই। একা একা তো আর ঝগড়া করা যায় না। মনে মনে ভাবি, সীমাকে কি দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তৈরি করেছেন! কারণে-অকারণে এতো বকাঝকা করি, রাগারাগি করি, তাও তো ও বিন্দুমাত্র রাগ করে না...!

আমাদের বিয়েটা ‘ইয়ে’ করে। প্রেমিক-প্রেমিকা স্বামী-স্ত্রীতে কনভার্ট হলে সুবিধা যেমন, অসুবিধাও তেমন। প্রেমের আবহাওয়া যখন-তখন পরিবর্তন হয়। কোনো কিছুরই পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। এই রোদ, তো এই বৃষ্টি।

গত রাতে অফিস থেকে ফিরেছি রাত সাড়ে ১১টায়। পত্রিকা অফিস তো, বিকেল ৪টা থেকে ১০টা। তেজগাঁও থেকে বলাকা বাসে চড়ে টিকাটুলির বাসায় ফিরতে প্রায় এক ঘণ্টা। বাসায় ফিরে রাতের খাবার খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আড্ডা দিয়ে বিছানায় যেতে যেতে রাত সাড়ে ১২টা। পাশেই সীমা শুয়ে আছে।  

আদুরে গলায় ওকে বললাম, ‘আমি তোমাকে পেয়ে সত্যি অনেক সুখী।’ 

সীমা জানতে  চাইলো-  ‘এভাবে বলছে কেন?’ 

 -‘এই যে, আমি তোমার সঙ্গে কারণে-অকারণে এতো খারাপ ব্যবহার করি, রাগারাগি করি, কিন্তু তুমি আমার ওপর একটুও রাগ করো না। কখনো একটু অভিমানও করতে দেখি না!’

: ‘আমি রাগ করি তো।’  

-‘কই রাগ করো? তুমি তো কিছুই বলো না,  চুপ করে থাকো।’ 

: ‘তুমি যখন আমার ওপর রাগারাগি করো, আমি তখন রাগ করে তোমার জন্য চা বানাতে যাই।’ 

কৌতুহলী হয়ে বললাম- ‘চা বানালেই কি রাগ কমে যায়?’

: ‘ওই চায়ের মধ্যে আমি থু থু দিয়ে দেই।’

সীমার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রইংরুমের জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। পর্দাটা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, স্ট্রিট লাইটের আলো ছাপিয়ে চাঁদের আলোতে চারদিক উদ্ভাসিত। 

ভাবছি, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক আদর্শ, ছাত্র সংগঠনের তিন মূলনীতি শিা, শান্তি ও প্রগতির সঙ্গে একসময় আমারও সখ্য ছিল, প্রেম ছিল। আমিও এক ধরনের ঘোরের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচু করে স্লোগান দিয়েছি, ‘শিা উপকরণের দাম- কমাতে হবে, কমাতে হবে।’

কোনো চায়ের কাপে থু থু ছিটিয়ে বাজার সিন্ডিকেটের সদস্য কিংবা তৃতীয় কাউকে পরিবেশন করার মতো যোগ্যতা ও অবস্থান আমার নেই। আমিও নীরবে সাড়ে ৫শ টাকার গরুর মাংস সাড়ে ৬শ টাকা কেজি দরে কিনে মুখ নিচু করে বাসায় ফিরি। চাল-তেল-চিনি কিংবা মাছের কথা আর নাই-বা বললাম। ভেবো না এমনি করে চুপ করে থাকবো। একদিন সময় সুযোগ পেলে চায়ের কাপে নয়, থু থুটা তোমাদের মুখেই ছুড়ে দেবো। অতএব...

কে.এম. দাস লেন

টিকাটুলি, ঢাকা

৩১.০৩.২২


জীবন থেকে নেয়া

সানি

হরতালনামা-১

গণমানুষের প্রতিক্রিয়া

ঘটনা: ১. ভোলায় শিকতা করে আমার বাল্যবন্ধু। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা-অটো কিছুই পাচ্ছিল না। চৌমাথা থেকে অনেক কষ্টে শহিদ মিনারের কাছাকাছি পৌঁছে লঞ্চঘাট পর্যন্ত ওর হেঁটে যেতে হয়েছে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা বলার সময় সে দীর্ঘপথের কান্তির কথা বলেনি, বলছিল মানুষের প্রতিক্রিয়ার কথা। আকুণ্ঠ সমর্থনের কথা। অভিনন্দিত করছিল সফল হরতালের জন্য।

ঘটনা: ২. একজন বাবা তার সন্তানকে নিয়ে হেঁটে জিলাস্কুলের দিকে যাচ্ছেন। সদর রোডে গাড়ি না চলায় হাঁটতে হয়েছে পুরোটা। দেখে একটু খারাপই লাগলো, এগিয়ে গিয়ে বললাম- জানি আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমাতে আমাদের এই হরতাল করতে হচ্ছে। কথা শেষ না হতেই ভদ্রলোক বললেন- আপা, আপনারা চালিয়ে যান। এটুকু কষ্ট কোনো ব্যাপারই না। আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের ওপর অবিচল আস্থা আছে। গেছিলাম সহানুভ‚তি জানাতে, তার বদলে পেলাম সংহতি..! লম্বা পথ হেঁটে ঘর্মাক্ত হবার পরও বহু শিার্থীর  মায়েরাও বলছিলেন- একদম ঠিক কর্মসূচি, চালিয়ে যান!

ঘটনা: ৩. আমরা যে রাস্তায় পিকেটিং করছিলাম, সেই কাকলীর মোড়ের সামনেই জজকোর্ট। কালো কোটপরা আইনজীবীরা হেঁটে যেতে যেতে শুভকামনা জানাচ্ছিলেন, কেউ পানি কিনে দিচ্ছিলেন!  দুপুরে বাসায় আইনজীবী বাবার সাথে দেখা। তিনি এমনিতে বেশ কাঠখোট্টা মানুষ, প্রশংসা করেন কম। সরাসরি রাজনীতিও করেননি কখনো। জিজ্ঞেস করলাম, কোর্টে গেলা কীভাবে? উত্তর আসলো- হরতালের পর গেছেন। অর্থাত তিনিও মৌনভাবে হরতাল পালন করেছেন...!

ঘটনা: ৪. একজন প্রথিতযশা  শিকের বাসায় ছাত্রফ্রন্টের কর্মী সাইমন বিকালে পড়তে গেছে। পড়তে গিয়ে সে জানতে পারলো সারের বাসায় আজ নির্মাণশ্রমিকরা আসেনি, পাইপ মিস্ত্রীরাও না। কারণ জানতে চাওয়ায় সার বললেন, ওরা হরতালের জন্য কাজ বন্ধ রেখেছে। তোমাদের হরতাল তো সফল হয়েছে, অভিনন্দন! রাতে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে হরতালে ৬ ঘণ্টা সেøাগান দেয়া সাইমন তো খুশিতে ডগমগ।

মানুষের এমন প্রতিক্রিয়া আরো শত শত লেখা যাবে। সদর রোডে ১২টা পর্যন্ত দোকান বন্ধ থাকা, বরিশালের বিভিন্ন রুটের গাড়ি বন্ধ থাকা, গাড়ি থেকে নেমে মিছিলে যোগ দেয়া মানুষের দৃশ্য আমাদের কর্মীদের শক্তি জুগিয়েছে দারুণভাবে। একদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষ অতিষ্ঠ, আরেকদিকে হরতালকারীদের ওপর আস্থা-ভালোবাসা- এই দুই বিষয়ের অপূর্ব সম্মিলনে আজকে বরিশালে এই অভ‚তপূর্ব হরতাল পালিত হয়েছে। মানুষের এই সাড়া আমাদের নতজানু করে, দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দেয়, মনে করিয়ে দেয় যে- যেতে হবে বহুদূর। মনে করিয়ে দেয় যে,

The woods are lovely, dark and deep

But I have promises to keep.

& miles to go before I sleep.

জনতার জয় হোক।


শেয়ার করুন