২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:২৫:০১ পূর্বাহ্ন


আন্দোলনের আর কোনো বিকল্প নেই- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৩-২০২৩
আন্দোলনের আর কোনো বিকল্প নেই- মির্জা ফখরুল


‘দেশের সম্পদ লুটপাটে আওয়ামী লীগ পাগল হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।


তিনি  ‘‘ আজকে আওয়ামী লীগের সব মানুষ তারা যেন মরিয়া হয়ে গেছে, পাগল হয়ে গেছে যে, লুট করে তারা অতি দ্রুত সব সম্পদ নিয়ে এদেশ ছেড়ে চলে যাবে। ঠিক যেভাবে বর্গীরা আমাদের দেশে আগে এসে আমাদের সব সম্পদ লুট করে নিয়ে যেতো। আজকে আওয়ামী লীগ ঠিক একইভাবে সেই লুট করে একটা আসর বসিয়েছে, লুটের একটা উতসব সৃষ্টি করেছে। এরা(সরকার)আমাদের সমস্ত কিছুকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে, আমাদের সমস্ত ঐহিত্য, কৃষ্টি, ইতিহাস সব কিছুকে তারা ধবংস করছে। সুতরাং আমাদের আন্দোলনের আর কোনো বিকল্প নেই।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের মানুষেরা এখন আর ভোট দিতে পারে না, ভোট দিয়ে প্রতিনিধি তৈরি করত পারে না। ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না। আজকে মানুষ কথা বলতে পারে না, ভিন্নমত পোষন করতে পারে না। যারা ভিন্নমত পোষণ তাদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আজকে আমাদের পত্র-পত্রিকাগুলো তারা লিখতে পারে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ অন্যান্য আইনের মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আজকে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে, পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে তারা জনগনকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, তাদেরকে দমন করছে। শুধু তাই নয়, যারা ব্যবসা-বানিজ্য করতে যায় কেউ সতভাবে সঠিকভাবে ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারছে না। তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”


এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।


তিনি বলেন, ‘‘ এখন আর বসে থাকার সময় নাই। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের সামনে পথ একটাই খোলা- আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। দূর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমরা সব সময় বলে আসছি এই আন্দোলন এই সংগ্রাম এটা বিএনপির সংগ্রাম নয়, গণতন্ত্র মঞ্চের সংগ্রাম নয় বা শুধূমাত্র কোনো একটা বিশিষ্ট রাজনৈতিক দলের সংগ্রাম নয়। এটা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম।”


বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এটা হচ্ছে মার্চ মাস। ১৯৭১ সালে এই মার্চ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন করছিলাম। সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্যে, আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্যে, আমাদের ভোটের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্যে আমাদেরকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি আজকে সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাব, আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুগপত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি যে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগনের উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে পরাজিত করতে পারব।সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে সক্ষম হবো।”


জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ২রা মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।


১৯৭১ সালের ২ মার্চ ততকালীন ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। প্রথম পতকা উত্তোলন দিবসে বিএনপির পক্ষ থেকে আসম আবদুর রবকে অভিনন্দন জানান মির্জা ফখরুল।


 ‘মানুষের ভাগ্য নিয়ে পরিহাস করছে’


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকের পত্রিকায় দেখেছেন যে, চট্টগ্রামে ওএমএসের চাল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দুই বৃদ্ধ অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। আজকে দুর্ভাগ্য যখন আমাদের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তারা চালের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, যখন তারা খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে, যখন চাল-ডাল-তেল-লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে তখন আমাদের দেশের তথাকথিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেই হাওড়ের মধ্যে গিয়ে একটা উতসবের মধ্য দিয়ে ২৩ পদ, ২৪ পদ ৃ. মাছের রান্না করে উতসব করছেন। শুনতে খারাপ লাগতে পারে কিন্তু এটা একটা পরিহাস। এই মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে পরিহাস, মানুষের অবস্থার সঙ্গে পরিহাস। বর্তমানে বাংলাদেশের আসল চিত্র এটা।


তিনি বলেন, ‘‘ কি ভয়ংকর কথা আজকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে পরপর পরপর।দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো এবং আইন করে নিয়ে এখন আর যে কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা আছে তারা আগে যে গণশুনানি করত সেই শুনানি করার আর দরকার হবে না। প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে। তার আলোকে তারা বাড়িয়েই চলেছে। তাদের(সরকার) গায়ে লাগে না। কারণ তাদের তো বিদ্যুতের দাম দিতে হয় না। সরকারি খরচে অর্থাত জনগনের টাকায় তাদের এসি চলে, ফ্রিজ চলে, সবকিছু জনগনের পয়সা চলে।কিন্তু জনগনকে তাদের পকেট থেকে বিদ্যুতে দাম দিতে হয়। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ফলে কী হচ্ছে? সব শিল্পকলকারখানায় উতপাদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে যে জিনিসের দাম ১০ টাকা সেটা ১১/১২ টাকা হয়ে যাচ্ছে, যেটা ৫০টাকা সেটা ৫৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে। সব পণ্যে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

একইভাবে গ্যাসের দাম, জ্বালানি তেলের দাম, কয়লার দাম সব কিছুর দাম বাড়ছে উল্লেখ করে ‘কোথাও কোনো জিনিসে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।


‘রাষ্ট্র এক বিপদজনক অবস্থায়’

জেএসডির সভাপতি বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলক আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ ১৯৭১ সালের ২ মার্চ জাতি যখন খুঁজছিলো কী করতে হবে? এটা সেন্স অব প্রিডিকশন। ওয়াট টু বি ডান। কি করিতে হইবে। তখন এই পতাকা নিয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, এই পতাকা অর্জন করতে হবে, তার জন্য স্বাধীনতা ছাড়া বিকল্প নাই। অনেক কথা। আমি আজকে এদিনে কোন বিতর্কিত কথা বলব না। ৭০ সালে যার জন্ম হয়েছে সেরকম একজনের লেখা পড়লাম আজকে যে, ৬৬ সালে নাকী ৬ দফার আন্দোলন করতে করতে নাকী স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। ৬ দফা কি স্বাধীনতার দাবি ছিলো না স্বায়েত্ব শাসনের দাবি ছিলো। দেশের মানুষ সব কি ঘাস খায়। আমরা কি সব গরু-ছাগল? বেকুব হয়ে গেছি, অন্ধ হয়ে গেছি।”


তিনি বলেন, ‘‘ একজনে বাংলাদেশ অর্জন করেছেন। আর কারো কোনো অবদান নাই। তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিলো কেনো, ২ লক্ষ লক্ষ মা-বোন সম্ভ্ম হারালো কেনো। আজকে দেশের সমস্ত ইতিহাসটাকে এক ব্যক্তি, এক দলের, এক পরিবারের, এক গোষ্ঠির আওতাভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের সালে ২ মার্চ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অনিবায্র্ হয়ে পড়েছিলো। আর কোনো বিকল্প ছিলো না-ডু অর ডাই। ওই লক্ষে যেতে হবে।”


দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ভোট ডাকাতি করে একটি সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে রাষ্ট্র একটা ‘বিপদজনক অবস্থায়’ পড়েছে বলে মন্তব্য করেন জেএসডি প্রধান। আপনারা দেখতে পারছেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এখানে আছেন, তার কোনো অবদান নেই, আসম আবদুর রবের কোনো অবদান নেই, সিরাজুল আলম খানের কোনো অবদান নেই, মাওলানা ভাসানীর কোনো অবদান নেই, অলি আহাদের অবদান নেই, মোহাম্মদ তোহার অবদান নেই, এক ব্যক্তি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলো যুদ্ধ করে।”


জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন