০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০২:০২:৩২ অপরাহ্ন


একুশে ও স্বাধীনতার সম্মাননা পাওয়া উচিত ছিল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৪-২০২২
একুশে ও স্বাধীনতার সম্মাননা পাওয়া উচিত ছিল


দিলারা হাশেমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ


দিলারা হাশেম একজন কথা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংগীতশিল্পী, নিউজকাস্টার ও অঙ্কনশিল্পী ছিলেন সেই  ষাট দশক থেকে। সত্যজিৎ রায়ের মতো কিংবদন্তি তাঁর সিনেমায় অভিনয় করার অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ের সাথে অপারগতা জানিয়েছিলেন। গত ১৯ মার্চ এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনাবসানে দেশে এবং প্রবাসে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মতো এই বিশাল মানুষটি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি পাওয়ার পর এ পর্যন্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক লাভ করেননি বলে অনেকেই অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কেউ শোক জানাতে জাননি বলেও অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে অখ্যাত এবং বিতর্কিত মানুষকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় কিন্তু দিলারা হাশেমের মতো সাহিত্যিক এবং সাংবাদিককে সেই পুরস্কার দেয়া হয় না। দিলারা হাশেম আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন তা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তা ছাড়াও তিনি আমাদের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।

গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে আয়োজিত ‘স্মৃতিতে অমর দিলারা হাশেম’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তারা এই সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান রাইটার্স অ্যান্ড জার্নালিস্টস ফোরামের ব্যানারে সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ। অনুষ্ঠানে শুরুতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দু’জন কিংবদন্তি বেতার ও টিভি ব্যক্তিত্ব ইকবাল বাহার চৌধুরী ও রোকেয়া হায়দার। ইচ্ছে থাকলেও শারীরিক কারণে শেষ মুহূর্তে বক্তব্য রাখতে পারেননি আরেক দু’জন কিংবদন্তি মাসুমা খাতুন ও সরকার কবীরুদ্দিন।

নিউইয়র্কের অনেক বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, লেখক ও মূলধারার রাজনীতিবিদ দিলারা হাশেমের বিশেষ প্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে এই অনুষ্ঠানে আসেন। শিল্পী রূপা চৌধুরী ‘আগুনের পরশমডু ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি গেয়ে তার  প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন এবং শহিদদের সম্মানে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। চার দশকের বেশি সময় ধরে দিলারা হাশেমের অত্যন্ত স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক লেখক আকবর হায়দার কিরন এই বিশেষ অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ও উপস্থাপক। দিলারা হাশেমের কথা বলতে গিয়ে বারবার অশ্রুভারাক্রান্ত হয়েছেন তিনি। গেলো অগাস্টে তাঁর জন্মদিনে টেলিফোনে শেষ কথা হয় ও সাক্ষাৎকার নেন আকবর হায়দার কিরন। এর আগে তিনি ভিওএ’র ৭৫ বর্ষপুর্তি অনুষ্ঠানে এবং চার বছর আগে ভার্জিনিয়ার ফোবানায় সাক্ষাৎকারও  নিয়েছিলেন তাঁর।

দিলারা হাশেমের স্মৃতিতে এই বিশেষ আয়োজনে তাঁর জীবনের দিক নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। প্রবাসের প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ তাঁর সাথে স্মৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর জীবদ্দশায় তিনি একুশে ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেলে আমরাও খুশি হতাম। কিন্তু বাংলাদেশে একুশে ও স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় বিতর্কিত এবং দলবাজদের। নিউ ইয়র্কের বই মেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে তাঁর বহুবার যোগদান এবং সম্মাননা পাওয়াটা আমার কাছে স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে দিলারা হাশেম ও রোকেয়া হায়দার বইমেলায় একসাথে আসা সবার কাছে যেন বিশেষ আকর্ষণ। দিলারা হাশেমের জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন সাংবাদিক ও লেখক মিনহাজ আহমেদ। অনেকেই সরকারের প্রতি দাবি জানান দিলারা হাসেমের মতো একজন বিশাল মানুষটির নামে যেন ঢাকায় একটি সড়কের নামকরন করা হয়। সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন মূলধারার ডেমোক্রেট নেতা মোর্শেদ আলম, লেখক সাইদ তারেক, সিনিয়র সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা এম ই চৌধুরী শামীম, সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি, সংস্কৃতিজন গোপাল সান্যাল ও সাংবাদিক রিমন ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ডিআরইউয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, লেখক শেলী জামান খান, লেখক সাংবাদিক মনিজা রহমান, শিল্পী জাহেদ শরীফ, সম্পাদক এমডি হামিদ, টিভি উপস্থাপক আইরিন রহমান, সাংবাদিক তফাজ্জল লিটন, বিশিষ্ট ব্যাংকার রেশাদ খান, বাংলা টিভির মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন প্রমুখ।


শেয়ার করুন