২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৪৯:১৭ অপরাহ্ন


খালেদা ও পিটারের সাথে ফখরুলের সাক্ষাত
নতুন রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচন!
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৪-২০২৩
নতুন রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচন! পিটার হাসের সাথে বিএনপি নেতৃবৃন্দ


বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নতুন কিছু নয়। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বহু আগ থেকেই দেশটি তৎপর। তবে নতুন করে সে ভূমিকা জোরালো হয়ে উঠছে। দৃশ্যপট এক : ১৩ এপ্রিল, আমেরিকায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেনের সঙ্গে। দৃশ্যপট দুই: ১৬ এপ্রিল ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নিজ বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ তিন নেতার সঙ্গে। এর পরপরই বিএনপি মহাসচিবের দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত।   

বাংলাদেশে শুধু রাজনীতির মাঠের লোকজনই নয়, শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যারা একটু আধটু হলেও খবর রাখেন তারাও আলোচনা করছেন বর্তমান প্রেক্ষাপটের রাজনীতি নিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডেকে নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কী পরামর্শ দিলেন সেটাতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তপ্ত অবস্থা, বরফ গলবে কী সেটাই আলোচ্য বিষয়। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকিনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সরাসরি ক’বার বৈঠক হয়েছে এ সফরে সেটা আলোচনার বিষয়। তবে যে ভিডিও ক্লিপ ও স্টেটম্যান্ট দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি সেই পুরানো ইচ্ছা যে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার জন্য বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের দিকে। সেটার প্রত্যাশা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনটা আশাবাদ রেখেছেন ব্লিংকন। কিন্তু দেশে এসে ড. মোমেন বলছেন মার্কিন প্রশাসন একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন। আমরাও সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। আমরাও সেটাই চাই। ব্যাস এ পর্যন্তই। 

কিন্তু এটা মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যখন বিএনপি’র প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন তার নিজ বাসায় তখন থেকে। কারণ মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ওই প্রতিনিধি মিডিয়াকে কিছুই বলেননি। বরং ওই ঘটনার পরপরই দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে কথা বলেছেন। 

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারাণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। এবং আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে যাওয়া সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেন। সেখানেও তার বক্তব্য অনেকেই নানভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। 

কেননা সংবিধানমতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশনের। সেখানে নির্বাচন কমিশনকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। কারণ নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু দায়িত্ব নিতে যাওয়া নতুন রাষ্ট্রপতি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কিছুটা অগ্রিমভাবেই অনেক কিছু বলে সতর্ক করেছেন। কিছুদিন আগে হলেও তার সে সময়ের বক্তব্য এখন বিশ্লেষণ হচ্ছে। 

আলোচনায় নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’র সে বক্তব্য  

নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু (গত ১৩ ফেব্রুয়ারি) মাস দুইয়েক আগে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘মাত্র ৮-১০ মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। আমার এই মুহূর্তের দায়িত্ব হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে মনোযোগ দেওয়া। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত হয়। এটা আমাদের এখন দরকার। আমরা বলি যে অরাজনৈতিক দাবি তুলে, সংবিধানের বাইরে দাবি তুলে- সেটা করা সম্ভব নয়। আমরা সংবিধানের বাধ্যগত। এই সংবিধানের ৫৮/সি- এটা ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। এটি এখন সংবিধানের অংশ নয়। সংবিধানের অংশের মধ্যে থেকে আমাদের সকল দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তার পুরো দায়িত্ব পালন করবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমি মনে করি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংঘাত ভুলে গিয়ে, ২০১৪-২০১৮ সালের মতো সংঘাতে না গিয়ে, মানুষের ক্ষতি না করে, জান-মালের ক্ষতি না করে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তাহলেই এ দেশের মঙ্গল, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগোবে এবং দেশে একটি সত্যিকারের সরকার, শক্তিশালী সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক, এটা তো শুধু সরকারের কামনা নয়, সারা বিশ্বের কামনা। সারাদেশের সকল জনগণের কামনা। যে সব দলের অংশগ্রহণে সে যতেই ছোট দল হোক, যতই বড় হোক, জোট হোক- সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে তাদের নিজেদের স্বার্থেই আসতে হবে।’

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘আমরা যদি নিশ্চিত করি যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে তবে তারা (বিরোধীরা) সংবিধানের সংশোধনীর কথা বলে, নানা যুক্তি দেখায়, যারা দেখায় তাদের যুক্তি তাদের কাছে আছে। আমি এটা নিয়ে বিতর্কে যাব না। তবে সংবিধানের ভেতরে থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমি সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে চাই। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো কোনো সময় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। জাতীয় দুর্যোগ দেখা যায় বা নির্বাচন নিয়ে কোনো অরাজকতা অবস্থা দেখা যায়, বা দেখা যায় যে- ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী পরিবেশটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে সময় রাষ্ট্রপতির কিছু কিছু কাজ করার থাকে। আমি এ ব্যাপারে পিছপা হব না, কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি দেশ স্বাধীন করেছি, এতটুকু রক্ত তো দিয়েছি দেশের জন্য।’

নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যে অবস্থার, নৈরাজ্য সৃষ্টির যদি চেষ্টা করা হয় সেক্ষেত্রে আমার যে ভূমিকা সে ভূমিকা আমি রাখব। কিন্তু আমি চাইব একটি ন্যায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে আমি যেন আমার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করি। যাতে সেখানে পক্ষপাতিত্বের চিহ্নও যাতে না থাকে। মানুষ উপলদ্ধি করতে পারে যে প্রেসিডেন্ট যে কাজটি করেছে তা দেশের জন্য করেছে। যদি প্রয়োজন হয়, আর যদি প্রয়োজন না হয়। যদি মানুষের প্রত্যাশা হয় আমি নিরপেক্ষভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি মানুষের মধ্যে যেন এই চিন্তাধারাটা যদি আসে আসুক, এটাই আমি চাই যে আমি আমার ক্ষমতাটাকে প্রয়োগ করেছি শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে। কাউকে অবদমিত করার স্বার্থে নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব সেখানে যদি ভুক্তভোগী হয় শাসকদল, হলে হতে পারে। যদি বিরোধীদল হয়, হলে হতে পারে। কিন্তু আমি চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি সেখানে আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ ফলে নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের আগে এতগুলো কথা কেন বলেছেন সেটা নিয়েও অনেক ব্যখ্যা বিশ্লেষণ চলছে। কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে তাহলে কী প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন? মার্কিন প্রশাসন যে ফর্মুলা নিয়ে এগুচ্ছেন বলে জানা যায় সেটা কী তাহলে এমনটাই ইঙ্গিত করছে। কারণ বাংলাদেশে একটি সম্ভাব্য সংঘাত এড়িয়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে তো সেখানে বিরোধী পক্ষ যেমনটা বিএনপির দাবিও মানতে হবে। আবার সংবিধানের বাইরেও যাওয়া যাবে না। যেটা আওয়ামী লীগের দাবি। সব মিলিয়ে একটা নতুন ফর্মুলা ও সেটা কী হতে পারে সেটাই এখন আলোচ্য বিষয় সর্বত্র।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎপর 

বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় ধরনের অলিখিত যোগসাজোগ তৈরি হয়ে গেছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও একে সমুন্নত রাখার যে প্রতিশ্রুতি ও সে অনুযায়ী দুটি সম্মেলনের সফল সমাপ্তি ঘটেছে।  যে সম্মেলনে ১২০ টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশ উপেক্ষিত দ্বিতীয়বারের মত। বাইডেন বিশ্বে যেসব দেশে গণতন্ত্রে পিছিয়ে সে সব দেশকে গণতন্ত্র উন্নয়ন সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পে ৬৯০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের অঙ্গীকার করেছেন। ফলে এটা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র উন্নয়নের জন্য একটা রোড ম্যাপও চেয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। ফলে এই এক ইস্যুতে হলেও বাংলাদেশকে ডেকে তারা বিভিন্ন বিষয়ের উন্নতির পরামর্শ দিচ্ছেন। 

বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। বিশেষ করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট আহ্বান জানিয়েছে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের। বিশেষ করে বাংলাদেশে গত দুই টার্ম নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনে ভোটরারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারার যে অভিযোগ সে প্রেক্ষিতে। বেশ ক’মাস ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা জোটবদ্ধভাবে আসন্ন নির্বাচনে ওই আহ্বান জানিয়ে আসছেন। 

সাধারণ মানুষ তার ভোট প্রয়োগ করে তার পছন্দসই নেতৃত্ব বেছে নেয়ার যে অধিকার সেটা প্রতিষ্ঠা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ। সে লক্ষ্যে তারা বিভিণœভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কখনো সে দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ডেকে ওই আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বারবার। এবার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে। তবে সমস্যাও রয়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্তমান যে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু তার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেনা বলে যে দাবি তুলে আসছে সেটাই এখন বড় সমস্যা। বিএনপিকে অবশ্যই অংশ নিতে হবে নতুবা এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হবে না। বিএনপি বিগত দুই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে যে দাবি সে অশংকা থেকে আগামী নির্বাচনও একই ভাবে অনুষ্ঠানের মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। ফলে বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ জন্য তারা দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় সরকার থেকে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করে আসছে। এমনকি আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও। 

এমন প্রেক্ষাপটে  গত ১০ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন ও ড. একে আব্দুল মোমেনের মধ্যে বৈঠক হয়। যদিও এ বৈঠক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছিল বলে জানানো হয়। গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই আমন্ত্রণ পাঠায় ওয়াশিংটন ডিসি সফরের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে। বৈঠকটি ছিল ৩০ মিনিটেরও কম সময়ের। কিন্তু এমন একটা আমন্ত্রণমূলক বৈঠক এত কম সময়ে শেষ হবে এটা নিয়েও কথা উঠেছে। যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে ক্ষেত্রে এত দূর থেকে ডেকে নেয়া অতিথির সঙ্গে সময় নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্ত বৈঠকের ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত কম সময়ে সোজা সাপ্টা কিছু কথা বলেই বৈঠকের সমাপ্তি টানেন। সেখানে ব্লিংকন বলেছেন, ‘’বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সেজন্য আমরা তো অবশ্যই, সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে।"

আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে এ অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের জন্য একটি জোরালো উদাহরণ তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের আগে জাতীয় সংসদের এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্টের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে। তারা গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটি সরকার আনতে চাচ্ছে, যাতে গণতান্ত্রিক কোন অস্তিত্ব থাকবে না।’ 

অবশ্য বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি বলেছি, অবশ্যই, এটা আমাদেরও উদ্দেশ্য। আমরাও একটা মডেল নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আপনারাও সাহায্য করেন, যাতে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি।’ 

পিটার হাসের বাসায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ 

এমন এক প্রেক্ষাপটে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে এক ঘন্টার এই বৈঠক হয়েছে গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে। বৈঠকে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শ্যামা ওবায়েদ। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে তার বাসায় বৈঠক হয়েছে। 

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিশেষ করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ তিনিও দিয়ে আসছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি নিজে, কখনও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্তের দেশসমূহের বাংলাদেশে অবস্থান করা রাষ্ট্রদূতদের নিয়েও ওই দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা সম্মিলিতভাবে নির্বাচন কমিশনে যেয়েও আলোচনা করেছেন। এ ব্যপারে তার অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট। যদিও রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতি মুহূর্তে রং বদলাচ্ছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তেমনি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও দেখা করে বৈঠক করছেন। 

এছাড়াও এ রমজানে বিএনপির ইফতার মাহফিলেও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন পিটার হাস। এমন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক দুইয়ের মধ্যে হলেও এমনি মুহূর্তে এমন রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। কেননা দেশের শীর্ষ দুই দল যখন দুই মেরুতে আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে সেখানে দেশের সম্ভব্য একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়িয়ে যদি শান্তিপূর্ণ উপায়ে কিছু একটা হয়।

শেয়ার করুন