বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর তিন দেশ সফরের অনেক অর্জন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক স্পর্শকাতর বিষয়াদির স্বল্প এবং দীর্ঘকালীন সম্ভাবনার বাতায়ন উন্মোচন করবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক অংশীদার জাপান সফর শেষ হয়েছে। পরস্পরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আঞ্চলিক এবং ভূরাজনৈতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দুটি দেশ শান্তি সমৃদ্ধি বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফরে এখন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকার প্রধানের নিকট থেকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক হওয়া বিষয়ে সুস্পষ্ট হতে চাইবে।
এর বাইরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বিশেষত জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে বহুজাতিক তেল কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কথা রয়েছে। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নির্বাচন নিয়ে সংশয় কিছুটা প্রশমণ করবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে যুক্তরাজ্যে নতুন ব্রিটিশ রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। সেখানে কমনওয়েলথ নেতৃত্বের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচির তিনটি দেশ পশ্চিমা অক্ষশক্তির। দেশগুলো ইদানীং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বমহল সফরের অর্জন বিষয়ে জানতে বিশেষভাবে আগ্রহী।
জাপান সফরের অর্জন
সবাই জানে জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সাগর বন্দও, তথা জ্বালানি বিদ্যুৎ হাব। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ হলে মাতারবাড়ি বন্দর দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াসহ বিশেষত বাংলাদেশ, ভারতের ভূমি শৃঙ্খলিত পূর্বাচল, নেপাল, ভুটানের পারস্পরিক, তথা বহির্বিশ্বের বাণিজ্যের দুয়ার উন্মুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রীর চলতি সফরকালীন শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম আরো গতিময় হবে।
জাপান বাংলাদেশের আধুনিক প্রযুক্তি অংশীদার। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ জাপান সম্পর্ক এখন কৌশলগত অংশীদারিত্ব পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। জাপান বাংলাদেশকে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের গর্বিত অংশীদার হয়েছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও সহযোগিতা প্রদান করেছে। চলতি সফরে জাপান বাংলাদেশের মেট্রোরেল সম্প্রসারণে কারিগরি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেছে। এর বাইরে কৃষি আধুনিকরণ, ইনফরমেশন টেকনোলজি, সাইবার সিকিউরিটি বিষয়েও কিছু সহযোগিতার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে। ঢাকার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের একটি বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে। সফরকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুবিধাদি জাপানিজ উদ্যোক্তাদের কাছে নতুনভাবে করেন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং জাপানিজ উদ্যোক্তাদের সব ধরনের ব্যবসাবান্ধব সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। সফরকালে জাইকা, জেট্রো প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সসম্মানে মায়ানমার প্রত্যাবর্তন বিষয়ে অব্যাহতভাবে জাপান সরকার সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করে।
বিশ্ব রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে উভয় দেশ নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতার সম্মতি এবং অঙ্গীকার করে। বাংলাদেশ দক্ষিণ চীন সাগরে আন্তর্জাতিক নিয়মের অধীনে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান বিষয়ে বাংলাদেশ অবস্থান সুস্পষ্ট করে। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে বিবাদমান দেশগুলোকে আনক্লস বিধিবিধান মেনে চলা উচিত বলে মত প্রকাশ করে।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপান সম্রাটের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠকে সব সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধকালে কয়েকজন বিশিষ্ট জাপানিজ নাগরিকের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ পদক দেওয়া হয়। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু দেশ জাপান সফর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে।