২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৫৯:৫৭ অপরাহ্ন


বিদেশের ব্যাংকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার : সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চায় আইএমএফ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
বিদেশের ব্যাংকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার : সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চায় আইএমএফ


বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে পড়ে থাকা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ কেন ফেরত আনছে না-জানতে চেয়েছে আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল)। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকা সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল এই প্রশ্ন উত্থাপন করে। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ তাদের বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের ওই অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ করে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করেছিল রপ্তানিকারক ওইসব প্রতিষ্ঠান। বিদেশের নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে (বিদেশে থাকায় দেশীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট) রপ্তানিকারকদের বিপুল অর্থ আর কত দিন আটকে থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলেছে প্রতিনিধিদল।

জানা যায়, বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে ওই বৈঠকে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে ডলারের বিনিময় মূল্য ‘এক রেট’ এবং বৈশ্বিক সংকটের মুখে রপ্তানি আয় বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তিনটি বিষয় নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য এক রেট নির্ধারণ এবং বিদেশে রপ্তানিকারকদের পড়ে থাকা টাকা ফেরত নিয়ে আসা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ ছিল। রপ্তানিতে ভর্তুকি তুলে দেওয়া এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না-প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব ইস্যুতে কোনো কিছু জানতে চায়নি সংস্থাটি।

বৈঠকে আইএমএফ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা তাদের রপ্তানির বিল দেশে না এনে বিদেশের নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে রাখার বিষয়টির ওপর জোর দেয় প্রতিনিধিদল। বাণিজ্য সচিব জবাবে আরও বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, রপ্তানি বিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ বিলিয়ন ডলার আছে। ডলারের এই ঘাটতি পাওয়া গেছে।

অবশ্য এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও ভালো বলতে পারবে। তবে হঠাৎ এক বছরের একটি ডলারের ঘাটতি হিসাব দিয়ে প্রকৃত মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে বিগত কয়েক বছরের এ ধরনের ডলার ঘাটতি হয়েছে কি না, সেটি দেখতে হবে। কারণ, সব সময় এ ধরনের একটি ঘাটতি থেকেই যায়। বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর আগের এবং পরবর্তী বছরগুলোয় কী পরিমাণ রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের ঘাটতি দেখা গেছে, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে।

বাণিজ্য সচিব আরো বলেন, বৈঠকে আলোচনা পর্যায়ে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে রপ্তানির বিপরীতে ডলার কম বা ঘাটতি দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। অন্যান্য বছরের হিসাবগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেষ করে কোভিডের আগের বছরগুলোয় এ খাতে কী ধরনের ডলার ঘাটতি ছিল, তা বিবেচনায় নিতে হবে। তাহলে একটি সঠিক তথ্য বের করা যাবে। বৈঠকে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশের যারা রপ্তানিকারক, তারাই আমদানিকারক। কিন্তু আমদানিকারকদের এমনিতে ডলার পেতে সমস্যা হচ্ছে। তারা ডলার বিদেশে রাখবে, এটি সঠিক নয়।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে বিদেশে আটকে থাকা সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় নয় বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট রিকনসলেশন হিসাবে আটকে আছে। বাকি দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। এই অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানায়, বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য পার্থক্য আছে, সেটি ‘এক রেট’ হওয়া উচিত মনে করেন কি না জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এর জবাবে বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন, তিনিও মনে করেন, এক রেট হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও বলেছেন, এটি একরেট হওয়া উচিত।

আগামী জুলাইয়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এক রেটে আনা হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। ওই বৈঠকে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি জানতে চাওয়া হয়। বৈঠকে প্রতিনিধিদলকে আরো জানানো হয়, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে কিছুটা প্রমোশনাল কাজ চলছে। নানাভাবে রপ্তানিকারকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন নীতিগত সহায়তা দিয়ে ব্যবসার খরচ কমানো হচ্ছে। এভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের বাইরে অন্যান্য বাজারের অবস্থা ভালো।

২৫ এপ্রিল থেকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, বিপিসি, পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। আইএমএফ-এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ইস্যু করার আগে তাদের দেওয়া শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট কোন পর্যায়ে আছে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স পরিস্থিতি এবং আমদানি ব্যয় মিলে কোনো ধরনের চাপে পড়বে কি না-এসব বিষয় জানতেই সর্বশেষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকটি হয়।

শেয়ার করুন