২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫২:৪১ পূর্বাহ্ন


দেশকে মাহমুদুর রহমান মান্না
এই আন্দোলনে আমি মনে করি জয়ী হবো
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
এই আন্দোলনে আমি মনে করি জয়ী হবো মাহমুদুর রহমান মান্না


নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দেশ ও বিশ্ববাসীকে নিয়ে আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করবো। এই আন্দোলনে আমি মনে করি জয়ী হবো। দেশি এবং বৈশ্বিক-সার্বিক পরিস্থিতি সেই ইঙ্গিত করে যে এরা (সরকার) থাকতে পারবে না। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না একথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ : সম্প্রতি গাজীপুরে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়ে গেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার বলছে সেখানে মূলত গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। আসলে বর্তমান সরকার বোঝাতে চাইছে যে, তাদের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবেই হচ্ছে। আপনি ব্যক্তিগতভাবে বা আপনার দল এ নিয়ে কি মন্তব্য করবেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না : সরকার কি বলছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। এটা খুব স্পষ্ট যে, সরকার হেরে গেছে। বিরোধী পক্ষের জয় হয়েছে। বিরোধী পক্ষ বলতে যারা রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দল তারা এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু যিনি এতে অংশ নিয়েছেন তিনি কিন্তু পুরোপুরি বিরোধী সেন্টিমেন্টকে ধারণ করে নির্বাচন করেছেন। তার নির্বাচনী প্রচারণায় তা কিন্তু ছিল। ওই প্রার্থী একসময়ে আওয়ামী লীগ করেছেন। পরে তাকে চিরস্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার মা সেখানে নির্বাচন করেছেন। আর এখন আওয়ামী লীগ এটাকে দেখাবার জন্য বলছে যে, গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। বলছে আমাদের সময় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, গণতন্ত্র আছে। কিন্তু এসব খেলাতো আমরা অতীতে দেখেছি। এগুলো আমাদের আর দেখাবার প্রয়োজন নেই। সরকার যে কী গণতন্ত্র দেয়, তাতো আমরা দেখেছি। তাই এখন নতুন করে প্রমাণের কোনো লাভ নেই। আসলে একটা জিনিস পরিষ্কার যে কোনো ভোটে সুযোগ পেলেই জনগণ আওয়ামী লীগকে একহাত দেখিয়ে দিতে চায়। আওয়ামী লীগের দ্বারা সারা দেশে অত্যাচার-নির্যাতনের কারণেই ভোটের ফলাফল কী হতে পাওে, তাতো দেখা গেল এই গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।   

দেশ : দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুরে এভাবে একটি নির্বাচন হয়ে গেল। এটা কি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না? এটা কি আপনাদের ধারণা হচ্ছে না যে, এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন নিরপেক্ষ করা সম্ভব?

মাহমুদুর রহমান মান্না : কী, কী বললেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে সরকার? (অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন) কিছুক্ষণ চুপ থাকেন।

দেশ : না, মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারে গিয়ে বলেছেন তিনি বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান। সম্প্রতি ত্রিদেশীয় সফরে গিয়েও তিনি এ ব্যাপারে বলেছেন। আশ্বস্ত করেছেন বিভিন্ন বিশ্বনেতাদের যে, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান।  

মাহমুদুর রহমান মান্না : বেহেশতে কিংবা দোজখে গিয়ে বললেও তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কথা কেউ বিশ্বাসই করবে না। মানুষ তাকে এতোই অবিশ্বাস করে বিগত এতো বছরে তার বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড, গণতন্ত্র বিধ্বংসী কাজ, অবিশ্বাসী কর্মতৎপরতা-সবকিছু মিলিয়ে মানুষের মধ্যে তার ব্যাপারে কোনো বিশ্বাসেরই জায়গা নেই। 

দেশ : আচ্ছা, আপনারা এতো কথা বলেন বা বলে যাচ্ছেন এই সরকারের বিরুদ্ধে, যা অতীতেও দেখা গেছে। কিন্তু তাতে কি কিছু করে ফেলতে পেরেছেন? এই সরকার আবারও যদি গতবারের মতো আপনাদের ছাড়াই আরেকটি নির্বাচন করে ফেলে? আপনারা এধরনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তেমন কি শক্তি সঞ্চয় করেছেন? এজন্য বলছি যে, আপনারা কি পারবেন তা ঠেকাতে? এতো সোজা সবকিছু?

মাহমুদুর রহমান মান্না : না এবার সবকিছু সম্ভব না, আচ্ছা বলেন তো আপনি যেভাবে আমাকে প্রশ্ন করেছেন সরকার যদি নির্বাচন করেই ফেলে-এটাও কি সোজা? আপনি যে প্রশ্ন করছেন, সেই প্রশ্নটাই কি সোজা? এখন ভোটের নাটক তো তারা করতেই পারে। কোনো ভোট হলো না। পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রেখে দিয়েছে, সেটা তো অন্য কথা। কিন্তু ভোট তারা করতেই পারবে না। যাকে কার্যত ভোট বলা হয়, সেটা তারা করতে পারবে না। কার্যত এধরনের ভোট তারা করতেই পারবে না। এতে তো কোনো বিরোধীদলই অংশ নেবে না। 

দেশ : ধরেন, এভাবেই যদি নির্বাচন করে ফেলে?

মাহমুদুর রহমান মান্না : সেরকম করার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবে না। সেটা করার মতো জনসমর্থনই নেই তাদের। অর্থাৎ সুষ্ঠু ভোট হতে হবে-এ ধরনের ভোট না হলে তো জনগণই অংশ নেবে না। বিরোধী দলই অংশ নেবে না তাতে। এখন ভোটের নাটকতো তারা করতেই পারে- যেহেতু তারা ক্ষমতায় আছে।

দেশ : ধরেন আপনারা যেভাবে বলেন যে, দিনের ভোট রাতেই হয়েছে আগের বারের নির্বাচনে সেক্ষেত্রে সেভাবেই করে ফেললো নির্বাচন, কি বলেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না : সেরকম করবার চেষ্টা করতে পারবে। ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবে না। আগে তো যেভাবে ভোট হয়েছে, তাতে মানুষের এ সরকারকে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়েছে। আর এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা  ফেয়ার (স্বচ্ছ) নির্বাচনের আয়োজনের ব্যাপারে চাপ আছে। ফেয়ার ইলেকশন করতে হবে মানে কি? তুমি ফেয়ার ইলেকশন করো, তাই তো? আর এই ফেয়ার ইলেকশনের গ্যারান্টি দিতে না পারলে সে কিছুই করতে পারবে না।

দেশ : অনেকে বলছেন এবং এর পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে আমেরিকা ভিসা-নীতি বা বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মাঠের রাজনৈতিক দলকে আকৃষ্ট করছে যে আমরা (আমেরিকা) আছি বিরোধীদলের সঙ্গে বা সুষ্ঠু নির্বাচনে গ্যারান্টিা দেওয়ার ব্যাপারে। আর আপনারা এগুলো দেখে বা সেই আমেরিকার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে কি নির্বাচনে অংশ নেবেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না : কী বললেন? কী বলতে চান? আমেরিকাও আওয়ামী লীগ করতে শুরু করেছে এরকম ব্যাপার তো (কিছুটা বিস্ময়ে..)।

দেশ : আমি বোঝাতে চাচ্ছি ভিসা-নীতি বা নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হয়েছে। এখন এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে-এমন সুপারিশ কি করা হচ্ছে আপনাদের? তারা কি কোনো ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছে?

মাহমুদুর রহমান মান্না: কোন জায়গা থেকে এগুলো শুনেছেন? কই পান এসব কথা? আমরা খবরের কাগছে পড়েছি আমেরিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে যেন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তার জন্য এই ভিসা-নীতি করেছি। এটাই তো আমেরিকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখানে কাকে নির্বাচন নেবে বাদ দেবে এধরনের কথাবার্তা তো নেই। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল যে, বিএনপিসহ বিরোধীদলসহ তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে না, কেয়ারটেকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায় বিএনপিসহ বিরোধীদল। সে ব্যাপারে আপনাদের (আমেরিকার) কি মতামত? সে ব্যাপারে তারা বলেছে তোমাদের ব্যাপারে (বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে) আমরা কাজ করছি না। 

দেশ : তাহলে কি আপনি এবং আপনাদের নেতৃত্বে জোট কি বসে আছে, বাইরের কোনো শক্তি আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে? আর এ কারণে বলা হচ্ছে মাঠের আন্দোলন খুব জোরালো না।

মাহমুদুর রহমান মান্না : আপনি এমন একটা বিকালে প্রশ্নটা করছেন যখন পল্টন ময়দান (বিএনপির অফিসের সামনে সেসময় দলটির সমাবেশ চলছিল) লাখ লাখ মানুষ বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়েছে। আন্দোলন করছি না তো কি? এগুলো তো আওয়ামী লীগের কথাবার্তা সব...বলছেন। ওরা আন্দোলন করতে পারে। এমন কোনো আন্দোলন করবে, যা আমাকে মানতে বাধ্য করে..তারা এমন কিছু করবে যা মানতে বাধ্য হবে। এই নাটকের কোনো মানে হয় না। এগুলো ছ্যাবলামি, ইতরামি। খুবই বাজে ধরনের আচরণ, আন্দোলন কতখানি সফল হয়েছে, তাতো গাজীপুরেরর জনগণ দেখালো। আওয়ামী লীগের মতো পার্টিটি নির্লজ্জভাবে হেরে গেল, একজন মহিলার কাছে? যে কোনোদিন পার্টি করে না। আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছিলেন তাকে তো বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ করা প্রার্থীকে বহিষ্কার করে তার মাকে প্রার্থী করা হয়েছে। তারপরও বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ আন্দোলন করছে না। বিরোধীদল তো চুপ করে বসে আছে-এগুলো কি আন্দোলন ছাড়া হয়েছে নাকি?

দেশ : আচ্ছা, ধরেন আপনারাসহ বিরোধীদল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চাইলেন না। সরকারও একটি নির্বাচনের আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলতে উদ্যোগী হলো এবং সেটা করেও ফেললো। তাহলে তো দেশে একটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এতে আসলে কি হবে দেশের, এধরনের পরিস্থিতিতে যেন দেশ না পড়ে সে ব্যাপারে আপনার সুপারিশ কি?

মাহমুদুর রহমান মান্না : আচ্ছা, আপনার ধারণাটা কীভাবে হলো যে সরকার নির্বাচনটা করে ফেলতে পারলো? আমি আবারও বলছি সরকার নির্বাচনের নামে একটা নাটক করে ফেলতে পারে। মিডিয়া ক্যু দেখাতে পারে। কিন্তু এরা নির্বাচন করতে পারবে না (জোর দিয়ে)।  

দেশ : আবারও বলছেন যে তারা নির্বাচন করতে পারবে না, ২০১৮-এর মতো যদি আবারও একটি নির্বাচন করে ফেলে।

মাহমুদুর রহমান মান্না: ২০১৮ সালের নির্বাচন তো কোনো নির্বাচনই ছিল না, ওটা নির্বাচনের নামে ডাকাতি হয়েছিল। আপনি হয়তো সেক্ষেত্রে যদি বলে বসেন আবারও ডাকাতি কি করতে পারবে না তারা? হ্যাঁ, পুলিশ যদি আসে, গোলাগুলি করে? আমি কি তখন পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা গোলাগুলি করবো? আমি তো এসবের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারবো। দেশ ও বিশ্ববাসীকে নিয়ে আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করবো। এই আন্দোলনে আমি মনে করি জয়ী হবো। দেশি এবং বৈশ্বিক-সার্বিক পরিস্থিতি সেই ইঙ্গিত করে যে এরা (সরকার) থাকতে পারবে না।

শেয়ার করুন