২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৫৬:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


এমএসএফ’র মনিটরিং রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ৪১ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
সেপ্টেম্বর ৪১ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার


বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর মাসের অত্যন্ত উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা। সেপ্টেম্বরে সারা দেশে থেকে ৪১ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। গত অগাস্ট মাসে গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ২৪ জন। এসব অজ্ঞাতনামা লাশ বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, ব্রীজের নিচে ও পরিত্যক্ত এলাকায়, হাত-পা বাঁধা, বস্তাবন্দী, গলায় ওড়না পেচানো, আঘাতের চিহ্ন সম্বলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন সেপ্টেম্বর ২০২৩ এসব তথ্য উঠে আসে। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। 

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এই রিপোর্টে আরো বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২ জন কিশোর, ১ জন কিশোরী ও ৩ জন তরুণী ছাড়াও ৫ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ, মোট ৪১ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এমএসএফের মতে, এট অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। 

(এমএসএফ)’র  পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, দুই-চারটি ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে।  এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এসব হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী কারা এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয় এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সদিচ্ছা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ জাগে কেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে দৃশ্যত সম্পূর্ণ নির্বিকার। মৃতদের মধ্যে ১৫ বছরের কিশোর দুইজন, কিশোরী ১ জন, তরুণী ৩ জন, যুবতী নারী ২ জন, যুবক ২৩ জন, ৪০-৫০ বয়সের ৫ জন ও ৫০ উর্দ্ধ ৫ জন রয়েছে।

এমএসএফ মনে করে, শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি কিন্তু পুলিশের সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

এদিকে (এমএসএফ)’র  পক্ষ থেকে আরো জানানো হয় যে, সেপ্টেম্বর ২০২৩ সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল আগের মতই উদ্বেগজনক। দেশে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বন্দুকযুদ্ধ, তাদের পরিচয়ে অপহরণ, গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃত্যু, নির্যাতন এবং, অপতৎপরতার মতো  ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা ও পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা নিদারুণভাবে অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছেই। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে যা উদ্বেগজনক। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা বেড়েছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্কিয়তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। একই সাথে প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

বন্দুকযুদ্ধ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এ বন্দুকযুদ্ধের ২টি ঘটনা ঘটেছে। কথিত গোলাগুলির দুটো ঘটনার মধ্যে একটিতে সেনাবাহিনী ও অপরটিতে পুলিশের সম্পৃক্ততা ছিল। দুটো ঘটনাতেই কোন হতাহতের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলেও ১ জনকে সেনাবাহিনী ও ১ জনকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ আহতাবস্থায় প্রেফতার করেছে। 

অপহরণের চেষ্টা

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৩ মাসে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ১ জন প্রকৌশলীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সমাবেশে যোগদানে বাধা

এমএসএফ’র পক্ষ থেকে বলা হয় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর তৎপরতা অব্যহত রয়েছে। প্রায় সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা থাকছে। ফলে এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে হামলা-মামলা ও সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সহিংসতা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা ও গায়েবি মামলায়  অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিরোধীদলীয় ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে, যার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সংগঠকদের ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা, যাতে তারা সভা-সমাবেশ করতে না পারে। কোনো সহিংসতা ঘটলে বা না ঘটলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং অজ্ঞাতনামা অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। এতে করে সুষ্ঠু রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে। গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে, বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, তাদের দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিয়েছে। এইসব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের রাজনীতি করার যে সাংবিধানিক অধিকার তা বাধাগ্রস্থকরা হচ্ছে, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে যা রাজনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে ক্রমাগত বিপন্ন করছে।

শেয়ার করুন