২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:১৫:১৬ অপরাহ্ন


খোঁচা দিয়ে দেখে উত্তাপ কতটুকু, শক্তির মাত্রা কতখানি
কামরুজ্জামান ভূঁইয়া
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৪-২০২২
খোঁচা দিয়ে দেখে উত্তাপ কতটুকু, শক্তির মাত্রা কতখানি


ইদানীং আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রায়শ একটি নেতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বলা নেই-কওয়া নেই, হঠাত করেই কোনো মহল থেকে অকারণ-অহেতুক কোনো একটি বিষয়ে চমকদার ঘটনার অবতারণা করে তা নিয়ে মেতে ওঠা। পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া মিলে চারদিকে হৈ চৈ হুলুস্থূল ফেলে গোটা দেশকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা। হাঁক-ডাক, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, ক্ষোভ-বিােভ, মিছিল-স্লোগান, বাদ-প্রতিবাদে কয়েক দিবস বা কয়েক সপ্তাহ সরগরম থেকে আবার পূর্বাবস্থায় থিতিয়ে যাওয়া। কর্ম-অপকর্ম যা-ই বলি, কার কি উদ্দেশ্যে এর ভিতরে লুকিয়ে আছে, তাও নির্দিষ্ট করতে পারি না। কারা এর পিছনে কলকাঠি নাড়ছে, কেনইবা  সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অপারগতায় নীরব-নির্বিকার হয়ে থাকছে, বুঝে উঠতে পারছি না। সরব যদিওবা হয়, হলেও তারা আমাদের মতো অনুমান নির্ভর খোঁজাখুঁজি করে বিফলতা বা অস্পষ্টতায় একসময় রণে ভঙ্গ দিয়ে থেমে যায়, নিশ্চুপ হয়ে যায়। তা আমাদের মতো মোটা মাথার জনগণ হয়তো বুঝে উঠতে পারি না। তবে আমাদের মনে সন্দেহটি থেকে যায়, এসব যে হঠাত করেই দৈবক্রমে অকারণ সংঘটিত কোনো অপরিকল্পিত ঘটনা, অবস্থাদৃষ্টে তা কিন্তু মনে হয় না। তবে বর্তমান সময়ে জনজীবনে এমন ঘটনাগুলোর ধারাবাহিক আধিক্য ও প্রতিকারহীনতা সমাজে একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে। যার নিরসন হওয়া জরুরি বা যারা এহেন অপকর্মের পিছনে মদদ জুগিয়ে সমাজ-মানসে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, তাদের কোনো নির্ধারিত উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছে, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার এবং তাদের দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য ও পরিচয় জনসমে প্রকাশ হওয়া আবশ্যক। তা না হলে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা এই প্রবণতা দেশের জন্য, সমাজের জন্য, একসময় বড় বিপদ বয়ে নিয়ে আসতে পারে। 

জনসাধারণ যে কিছুই বোঝে না, কিছুই ধরতে পারে না, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী যা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় বা খুঁজে পায় না, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরাও যখন রহস্যের কুলকিনারা করতে পারে না। সাধারণ জনগণের আন্দাজ-অনুমান তখন সেই রহস্যের কাছে চলে যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের অনুমানই যে সত্য প্রমাণিত হয়, তার ঢের স্যাপ্রমাণ আমাদের সমাজে রয়েছে। জনসাধারণের জন্য এটি কোনো অলৌকিক মতা নয়, জাদুমন্ত্রের বিষয়ও নয়। কী শাসক, কী প্রশাসক, কী আইনশৃঙ্খলা রাবাহিনী, কী সংবাদমাধ্যম- সকলের কাছ থেকে ধোঁকা খেতে খেতে, হাইকোর্ট দেখতে দেখতে এখন জনগণ আর কারো ওপর ভরসা করে না, কারো দিকে চেয়ে থাকে না। নিজেরাই ঘটনার প্রেতি ও প্রোপটের যোগ-বিয়োগ মিলিয়ে সঠিক সমাধানে পৌঁছে যায়। আমার ধারণা পোড় খাওয়া অসহায় জনগণের বিচার-বুদ্ধির এই নিজস্ব মতা অদূর ভবিষতে না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে একটি গণবান্ধব জনমতই শুধু গঠন করবে না, রাষ্ট্রপরিচালনায় গণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখবে এবং রাষ্ট্রকে সঠিক পথে চলতে বাধ্য করবে, যা দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল বই অমঙ্গল বয়ে আনবে না এবং রাষ্ট্রশাসকদের যখন যা ইচ্ছে, তা করার স্বৈরনীতি বা জনগণকে এড়িয়ে চলার রীতিকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়ে একটি গণবান্ধব রাষ্ট্রপরিচালনায় সহায়ক করতে পারে। বলা বাহুল্য, এইতো সেদিন রাজধানীর  জনবহুল রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে একজন ভিন্নধর্মাবলম্বী (তাঁর ধর্মে যা অনুমোদিত-সামাজিকভাবে যা অনুসারিত) সম্মানীত কলেজ শিকিাকে তাঁর কর্মস্থলের সামনে একজন পুলিশ সদস্য কপালে টিপ পরার কারণে তিরস্কার এবং তাঁর সাথে অভদ্রোচিত আচরণ করেছেন বলে সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ, পরে যা পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে।  তার দুইদিন পরে অপরাধী সেই পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করার মাধ্যমে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। এখন যথারীতি আইন মোতাবেক তদন্ত চলছে। বিচারে শাস্তি কি হবে? আদৌ কিছুই হবে কিনা? সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ইতিপূর্বে এমন সব ঘটনায় কী আইনি প্রক্রিয়া, কী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, কী সামাজিক প্রতিরোধ- কোনোদিক থেকেই এমন সব অমার্জনীয় অপরাধের তেমন কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির পরিলতি হয়নি। দাবি-দাওয়া, পত্র-পত্রিকায় দু’চারদিনের গরমাগরম কিছু বক্তব্য-বিবৃতির মধ্য দিয়ে একসময় মিলিয়ে যায়, ঝিমিয়ে যায়, হারিয়ে যায়। ইদানীং ঘটনা পরম্পরায় ঘটন-অঘটনের একটি নতুন সংস্কৃতিও লণীয় হয়ে উঠেছে, একটি ঘটনার ওপর তার চেয়েও চমকপ্রদ, তার চেয়ে উত্তেজনাকর আরেকটি ঘটনা ঘটিয়ে দেয়া। দেখে অনেক সময় দৃষ্টিভ্রম হয়, মনে হয় যেন বা দ হাতে আদিষ্ট কোনো পুতুলবাজ পেছন থেকে সুতোর টানে একের পর এক পরিকল্পনার দৃশ্যপট প্রদর্শন করে পুতুল খেলা খেলছে, বাস্তবায়ন করছে। এটির ক্ষেত্রে কি হবে, এর ভিতরে কি আছে, তা কেবল ভবিষ্যতই বলতে পারে। তবে ল-কোটি মানুষের অন্তরের অতি সাধারণ একটি  প্রশ্নের সাথে আমারও মনে-মগজে প্রশ্নটি তাড়িয়ে বেড়ায়। তাহলো, যিনি বা যারা এহেন জঘন্য অপকর্মটি সংঘটন করেন, তারা এতো আইন-আদালত, এতো থানা-পুলিশের মাঝখানে এমন সব অপকর্ম ঘটানোর শক্তি, সাহস কোথায় পায়? কীসে তাদের এতো অন্তর্নিহিত শক্তি? এবার দেখা গেল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সর্বনিম্ন স্তরের কনস্টেবল পদের একজন সদস্য একাই জাতীয় পর্যায়ে হৈ চৈ ফেলে দিতে পারে, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনায় আঘাত হানতে পারে, নারীর সম্মান-মর্যাদা ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় চরম অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, তেমন একটি ঘটনা নির্দ্বিধায়, নিসঙ্কোচে ঘটিয়ে দিলেন। ইতিপূর্বেও হঠাত করে দেশে ভাস্কর্যশিল্পের বিরুদ্ধে নানাপ্রকার ধর্মীয় অপপ্রচার এবং তা ভেঙে ফেলার মতো দুঃসাহসের অপচেষ্টা আমরা প্রত্য করেছি। এখনো আমরা আমজনতা সেই ঘটনার হিসাব-নিকাশ মিলাতে পারিনি। এমন অনেক অযাচিত ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটেই চলেছে। ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়, আজ দীর্ঘদিন যাবত রাষ্ট্রমতায় যে দলটি মতাসীন, তাঁর প্রবল শক্তি এবং তাঁদের দুর্দান্ত পরাক্রম উপস্থিতির মধ্যে কেমন করে রাষ্ট্রনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার সাহস দেখাতে পারে। যাঁর নামের সামান্য বানান ভুলের কারণে একজন সরকারি আমলাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। বিদ্যালয়ে শিশুতোষ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অঙ্কনে যাঁর প্রতিকৃতির এতোটুকু ব্যত্যয়জনিত কারণে সারাদেশ আলোড়িত হয়ে ওঠে, পদ-পদবির বড় বড় চেয়ারগুলো পর্যন্ত কেঁপে ওঠে সেই নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হাতুড়ির আঘাতে তিগ্রস্ত করা লোকটির দেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাড়-মাংস সচল স্বাভাবিক থাকে কেমন করে? অবাক দৃষ্টি নিয়ে মতাসীন দল ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর অমন অবশ, অচল অপারগতা দেখে আমরা হতভাগা জনগণ বিস্মিত হই। বুঝে উঠতে বেগ পেতে হয়, ক্রীড়নককে আর দর্শক কারা। 

সেদিন যাত্রাপথে এমন সব নিয়ে কথা হচ্ছিল ভ্রমণ পথে লঞ্চযাত্রীদের আড্ডায়। নানাজনের নানাকথার মধ্য থেকে যে কথাটি সারকথা হিসেবে বেরিয়ে এসেছে, তার সাথে আমরা উপস্থিত যাত্রীদের কেউই দ্বিমত পোষণ করতে পারিনি। মনে হয়েছে বক্তা যা বলেছেন, তা দেশের বর্তমান চলমান ঘটনার প্রেেিত যথার্থ এবং বিবেচনার দাবি রাখে। তার চেয়ে বেশি অবাক লেগেছে, যিনি এ আলোচনায় জটিল বিশ্লেষণটি করলেন, তাকে কথার শুরুতে তেমন ব্যক্তি বা বক্তা বলে মনেই হয়নি। পোশাক-পরিচ্ছদে যেমন সাধারণ, কথাবার্তায়ও তেমনি সলাজ ও নিষ্প্রভ। কিন্তু তার কথার মধ্যে আড়াল-আবরণ বেশি নেই, যা বলেন তা খোলাখুলি বলেন, দৃঢ়তার সাথে বলেন। সাধারণের মধ্যেও আজকাল যেমন অসাধারণ চিন্তা বা অনুমান বেরিয়ে আসতে পারে, তা তিনি তার কথায় যুক্তি খণ্ডনে প্রমাণ করে দিলেন। তিনি তার সহজ কথায় এসব ঘটনার জন্য দুটি শক্তিকেই সন্দেহের তালিকায় নিয়ে এলেন। এক. দেশের উগ্রবাদী ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী দল বা তার আশীর্বাদপুষ্ট সংগঠনগুলোকে। যে সংগঠনগুলো তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক  বা ধর্মীয় দর্শন ও নীতিগত অবস্থান থেকেই দেশের, সমাজের যা কিছু অসাম্প্রদায়িক চেতনা, যা কিছু সেক্যুলার মূল্যবোধ, তার সাথে বিরোধিতা করে আসছে এবং সে লক্ষ্যে আবহমান কাল ধরে চলে আসা সামাজিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে, এমন সব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্র ও সমাজকে অস্থির-অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা প্রত্য-পরোভাবে চালিয়ে আসছে। তাদের কর্মকাণ্ড তাদের রাজনৈতিক চরিত্র আমরা জনগণ থেকে সরকারি সংস্থা ও সংগঠন, সকলেই চিনি-জানি। সুতরাং তারা এমন সব সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড করতেই পারে। তবে আমাদের রাষ্ট্র তথা, মতাসীনরা যখন তাঁদের নানাজাতের সাফল্য ও অজর্নের বয়ান দিয়ে জনসমে অহোরাত্রি প্রচার-প্রচারণায় বলে বেড়ান যে, দেশের সাম্প্রদায়িক ও উগ্র মৌলবাদী শক্তিকে তারা দমন করতে সম হয়েছেন এবং দেশকে সাম্প্রদায়িক ভরাডুবির বিপর্যয় থেকে রা করে সেক্যুলার চেতনা উদ্ধার-পুনরুদ্ধার করে জাতিকে কৃতজ্ঞতা ঋণে আবদ্ধ করেছেন। যদি এই কথা এবং এই সাফল্যের দাবিটি সত্য হয়, তবে বর্তমানে চলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপকর্মগুলো নির্বিঘ্নে করছে কারা। তাদের প্রকৃত পরিচয়টি কি?  তারা এতোটা শক্তি-সাহসইবা পায় কোথায়? তাহলে কি ওইসব মৌলবাদী শক্তিগুলো মতাসীনদের প্রচ্ছন্ন আনুক‚ল্যে ও ছত্রছায়ায় ভিতরে থেকেই বহুরূপী ছদ্মাবরণে নীরবে, নিরাপদে কাজগুলো করে চলেছে? তা না হলে সব ঘটনাই কেন শেষতক রহস্যাবৃত থেকে যায়। কুলকিনারা পায় না। তিনি জোর দিয়ে বললেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই মূল প্রশ্নের উত্তরটি বেরিয়ে আসবে। দুই. একটু গভীরভাবে ঘটনার পরম্পরা ল করলে এবং সংঘটিত ঘটনাগুলোর স্থান-কাল-সময় বিবেচনায় নিলে প্রায়শ দেখতে পাওয়া যায় যে, ঘটনার ল্য-উদ্দেশ্য একখানে আর ফল-পরিণাম অন্যখানে। অর্থাত গৃহস্থের দৃষ্টি একদিকে আটকে রেখে, অন্যদিক দিক দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয়া। সামনে চোখে ধাঁধা লাগিয়ে পিছনে জিনিস নিয়ে সটকে পড়া। আমাদেরসহ প্রতিবেশী কিছু দেশে এটি এখন রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় একটি অভিনব পন্থাই শুধু নয়, এটি ত্বরিত ফলদায়ক একটি  মহৌষধ। ঝুট-ঝামেলা কম এবং উদ্দেশ্য হাসিলে নিরাপদ পদ্ধতি। মানুষ কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই কাক্সিক্ষত কর্মটি সাবাড় করে নেয়া যায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নাভিশ্বাসে বিপর্যস্ত জনজীবনে বিদুত-গ্যাস-পানির দফায় দফায় অযৌক্তিক মূল্য বাড়াতে হবে, সীমিত আয়ের কান্ত-পরিশ্রান্ত যাত্রী সাধারণের  লঞ্চ-বাস-ট্রেন-গণপরিবহনে ব্যবসায়ী স্বার্থরায় ভাড়া বাড়াতে হবে, কিম্বা যে কোনো গণবিরোধী সরকারি কার্যক্রম সফলে সাধারণের চোখে ধুলো দিয়ে পার করে নিতে হবে। এমন সব নানাবিধ অপকর্মে হঠাত করেই অপ্রাসঙ্গিক, অথচ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা স্পর্শকাতর বিষয় টেনে এনে বা জড়িয়ে একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে জনদৃষ্টি অন্যদিকে নিবন্ধ রেখে কাক্সিক্ষত কাজটি গুছিয়ে নেয়ার কৌশলটি এখন ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং এর থেকে যে যার চাহিদা মতো ফায়দা তুলেও নিচ্ছে। কথার পে যুক্তি রাখতে গিয়ে কোর্ট-কাচারিতে কর্মরত মুহুরী ভদ্রলোক আরো বললেন, সরকারি ইন্ধনেই হোক, কী মৌলবাদী সংগঠনের তত্পরতায়ই হোক ঘটনাগুলোর তদন্ত অনুসন্ধান, আইনি প্রক্রিয়ার দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিছুই তো স্বচ্ছতার সঙ্গে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না। সবেেত্রই গাফিলতি, সব কিছুতেই মনগড়া ব্যাখ্যা-বিবৃতি, লুকোচুরি এবং রহস্যময়তা; বরং প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তির নানারঙের ছায়াচিত্র ভেসে ওঠে। মূল-আসলটি আড়ালেই থেকে যায়। না হয় সন্ধান, না হয় সমাধান। বরং সার্বিক বিষয় চরিত্র ল করলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখলে, তলিয়ে দেখলে দুটো সত্যই বেরিয়ে আসবে। এক. জনদৃষ্টিকে বিভ্রান্তির আড়ালে রেখে কারো গোষ্ঠীস্বার্থ হাতিয়ে নেয়া এবং সাথে উপরি লাভ হিসাবে, খোঁচা দিয়ে দেখা উত্তাপ কতটুকু, কার গায়ে লাগে, তার শক্তিইবা কতখানি। দুই. তাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সংগঠন ও শক্তিগুলোকে চিহ্নিত করে রাখা, যাতে করে সময়কালে নিশ্চিতভাবে সেগুলোকে দমিয়ে দেয়া যায়। সেই মতে আরো আরো নতুন উপায় নতুন ধান্ধার উদ্ভাবনী পথ উন্মুক্ত করা যায় ও জনমত-জনশক্তিকে নিখুঁতভাবে হীন করা, বিভ্রান্ত করা যায়। 

লেখক : কবি এবং সাহিত্যিক 

শেয়ার করুন