২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:১৮:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে যত প্রতিবন্ধকতা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে যত প্রতিবন্ধকতা


বৈষয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্ব মানবতার অস্তিত্ব বিপন্ন করার প্রেক্ষাপটে ২১০০ নাগাদ উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমিত করার অঙ্গীকারে প্যারিস ক্লাইমেট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশসহ দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ। প্রতিটি দেশ এই কারণে নিজ নিজ দেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) আকারে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অঙ্গীকার আছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় নিঃসরণ কমিয়ে আনার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি। তিনি অঙ্গীকার করেছেন ২০৪১ নাগাদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।

 ২০০৮ পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০২০ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান থাকার কথা ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ এসে এটি দাঁড়িয়েছে সবে মাত্র ৩ শতাংশ। দেশে নীতির অভাব নেই। কিন্তু নীতি বাস্তবায়নের কৌশলের অভাব রয়েছে। পলিসি মেকারসদের মানসিকতা উপযোগী কি না প্রশ্ন রয়েছে। ফসিল ফুয়েল লবির দুষ্টু প্রভাবে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সৌরবিদ্যুৎ আর বায়ুবিদ্যুতের প্রসার ঘটছে না। এমনিতেই জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বাংলাদেশের জ্বালানি খাত সরকারি ভুল কৌশলের কারণে নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণ এবং উন্নয়ন অবহেলা করে আমদানিনির্ভর হয়ে তীব্র সংকটে। করোনা অতিমারির এবং এরপর ইউক্রেন যুদ্ধের অশুভ প্রভাবে বিশ্ব জ্বালানি বাজার বিক্ষুব্ধ। নড়বড়ে অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশে জ্বালানি আমদানি নিয়ে ডলার সংকটে হাঁসফাঁস করছে। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের সুযোগ আছে সব নীতি-কৌশল সমন্বিত করে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বৃদ্ধি। 

ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন-ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস যথেচ্ছ  নিঃসরণের কারণে বৈষয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুনিয়াজুড়ে নিয়মিত ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ তুলামূলকভাবে কম হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। প্রতি বছর ঝড়, বন্যা এবং মাঝেমধ্যে ঘূর্ডুঝড় হয়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। 

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি হালনাগাদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এখন সমন্বিত জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান করা হচ্ছে। সরকারের এনডিসি অঙ্গীকার আছে, ডেল্টা প্ল্যান এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রসপেরিটি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের কথা বলা আছে। এগুলো সমন্বয় করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করে অচিরে উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি রোডম্যাপ প্রণয়ন।

অনেকে মনে করেন, দেশে বড় ধরনের সোলার বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জমির প্রাপ্যতার অভাব। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এটি স্টাডি রিপোর্টে মাতারবাড়ি, মহেশখালী এবং পটুয়াখালীর ইতিপূর্বে কয়লাবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য অধিকৃত স্থানসহ জামালপুরে একটি স্থানে বড় আকারে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের সুপারিশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এগুলো স্থানে পর্যায়ক্রমে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে ২০২৬ নাগাদ ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা যেতে পারে। মুজিব ক্লাইমেট প্রসপেরিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ নাগাদ বিশাল ভূমি রিক্লেম করবে বাংলাদেশ। 

সেখান থেকে ৫ শতাংশ জমি সোলার বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যায়। বাংলাদেশের সব শিল্পকারখানার ছাদ সোলার বিদ্যুতের জন্য আদর্শ স্থান। নেট মিটারিং সুবিধা রুফ টপ সোলার স্থাপনের দুয়ার খুলে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি সব ভবন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিকের ছাদে পরিকল্পনা করে সোলার বিদ্যুৎ প্যানেল বসানোর আন্দোলন সৃষ্টি করা যেতে পারে। পাশাপাশি বায়ুবিদ্যুৎ থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। কেন বাংলাদেশের অধিকাংশ সেচপাম্প সৌরবিদ্যুৎ-নির্ভর করে বিলম্ব? কেন ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না? বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের বিস্তর্ঢু জলসীমায় বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।  

বাধাগুলো হলো সরকারের নীতিনির্ধারকদের মানসিকতা, সরকারের শুল্ক বাধা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ট্যারিফ বাস্তব সম্মত করা। সঙ্গে সঙ্গে স্রেডার সংস্কার করে এটিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত। যেহেতু এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সম্পৃক্ততা আছে তাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করাও জরুরি।

আমি মনে করি, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশকেও পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরে আসতেই হবে। কেন এটির দ্রুত প্রসার ঘটছে না, বাধাগুলো কোথায় মোটামুটি সেগুলো সুস্পষ্ট। জাতীয় স্বার্থে সেগুলো অপসারণ করে এই বিষয়ে একটি জাতীয় আন্দোলন সৃষ্টি করা হলে ২০৪১ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে ৪০ শতাংশ জোগান না পাওয়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই।

শেয়ার করুন