২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:১৭:৪১ পূর্বাহ্ন


উন্নয়নের নামে প্রথম কোপটা পড়ে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
উন্নয়নের নামে প্রথম কোপটা পড়ে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নতুন প্রজন্মের পরিবেশনা


যে কোন উন্নয়নের নামে প্রথম কোপটা পড়ে গাছ, নদী, বনভূমি, কৃষিজমি, জলাভূমি, পাহাড় কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। যার ফলে, নির্বিচার দখল ও দূষণে আক্রান্ত দেশের নদ-নদী, সবুজবলয়, উন্মুক্ত প্রান্তর এবং জলাভূমিগুলো আজ নিশ্চিহ্ন। 

গত ১৮ জুন রবিবার, বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-এ “প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ সুরক্ষায় জাগো বাংলাদেশ” শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘পরিবেশ সমাবেশে এসব বক্তব্য উঠে আসে। পরিবেশ ও মানবাধিকার সুরক্ষায় কর্মরত ১৪টি সংগঠনের (এএলআরডি, বেলা, বারসিক, বাপা, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, সিসিডিবি, কাপেং ফাউন্ডেশন, আদিবাসী ফোরাম আইপিডিএস, ইনসিডিন- বাংলাদেশ, কারিতাস, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, এবং রিভারাইন পিপল) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ কর্মসূচি। এতে বিশিষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পরিবেশবিদ, শিক্ষক, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আন্দোলনরত ব্যক্তি ও সংগঠন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গান, আবৃত্তি এবং নাটক পরিবেশনা করেছেন।

এতে পরিবেশবাদিরা আরো বলেন, বেড়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। আমরা হারিয়েছি ঋতুর বৈচিত্র্য। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেড়েছে লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়, উত্তরাঞ্চলে তাপদাহ ও খরা, উত্তর-পূর্বে পাহাড়ি ঢল, মধ্যাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় ধ্বস, দেশজুড়ে নদীভাঙন, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড, রাসায়নিক বিস্ফোরণ, জলাবদ্ধতা এবং প্লাস্টিক দূষণ। উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংস বন্ধ করতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। উন্নয়ন অবশ্যই চাই তবে পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রাণ বৈচিত্র্য বিনাশের বিনিময় নয়। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিবেশ সমাবেশে আয়োজক সংস্থাসমূহের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান পাভেল পার্থ, পরিচালক বারসিক। আলোচনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি; আমিরুল রাজিব, সমন্বয়কারি, সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন;  শিরিন হক, মানবাধিকারকর্মী এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, নারীপক্ষ; ড. সোমা দে, সহযোগী অধ্যাপক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রমুখ।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, মানুষ একা বাঁচতে পারে না। মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে সকল অনুষঙ্গই আমরা প্রকৃতি থেকে পাই। আদিবাসীদের মতো সবাইকেই প্রকৃতি নিয়ে বাঁচতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সঞ্জিব দ্রং বলেন, উন্নয়ন মানে বড় বড় অট্ট্রালকা নয়, নদী দখল, বন উজার করে মুনাফা অর্জন নয়, এ উপলব্ধি থাকতে হবে আমাদের নীতি নির্ধারকদের। পাহাড় কেটে, বন বিনাশ করে, পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের চিন্তা করা পাপ।

মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক বলেন, আমরা যদি নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি পাই তবেই একটি জনবান্ধব পরিবেশবান্ধব নীতি ও আইন পাওয়া সম্ভব।

পরিবেশবিদ ও বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে যতদিন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো  ততদিন পর্যন্ত পৃথিবী উত্তপ্ত থাকবে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী রেখে যেতে চাইলে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতিকে মাঝখানে রেখে উন্নয়ন করতে হবে।

এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আজকে পরিবেশ রক্ষার যুদ্ধে আমরা হেরে যেতে পারি না।  পাহাড় কেটে, নদী ভরাট করে, প্রকৃতি ধ্বংস করে যারা উন্নয়ন করছেন তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। সচেতন হয়ে জবাবদিহিতা চাইতে হবে। আজ অথবা কাল আমাদের জিততেই হবে।

শেয়ার করুন