২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:১৯:০৬ পূর্বাহ্ন


খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিতে সরকারকে আবারও বার্তা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৮-২০২৩
খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিতে সরকারকে আবারও বার্তা


খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিতে সরকারকে আবারও বার্তা দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে বিশাল পথযাত্রাপূর্ব সমাবেশ থেকে দলটি মহাসচিব এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অবিলম্বে দিতে হবে। আমরা এই মিছিল(পদযাত্রা) থেকে আবারও এই বার্তা দিতে চাই, এখনো সময় আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, যেসমস্ত মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে সাজা দিয়েছে তাদের সকলকে মুক্তি দিতে হবে।


‘‘ আজকে আমাদের শেষ কথা এই মিছিলের মধ্য দিয়ে আজকে আমাদের প্রধান দাবি দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, একদফা দাবি আমরা করেছি সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আসুন এই মিছিলে আমাদের সেই দাবি আরও সোচ্চার করে তুলি।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে অসংখ্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সবসময় মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। তিনি প্রথম আমাদেরকে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন, তিনি মেয়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন তাদের বিনাবেতনে শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন। কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করেছিলেন, শ্রমিক ভাইদের জন্য কাজ করেছেন। সেই জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে এভাবে আটক করে রাখা সম্পূর্ণ ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।”


‘‘ ডাক্তাররা বার বার বলেছে, তার চিকিতসা উন্নত সেন্টারে চিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক। এই সরকার তাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করছে না। এজন্য করছে না তারা জানে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেরুলে তাদের মসনদ তাদের সিংহাসন ঠিক থাকবে না।”


গতকাল খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য লিফলেট বিতরণকালে ছাত্র দলের কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘ তুলে নেয়ার পর এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা হচ্ছেন. মফিজুল ইসলাম জিসান, হাসানুর রহমান, শাহাদাত হোসেন জমার্দার, আবদুল্লাহ আল রিয়াদ, জহির উদ্দিন বাবর ও আরিফ বিল্লাহ। পরিস্কার করে বলতে চাই আগামী ৬/৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের যদি জনসমক্ষে উপস্থাপন না করা হয়, মুক্তি না দেয়া হয় তাহলে তাদের সব দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে।”


বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজকে শুধু এই কয়েকজন নয়, প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা দিচ্ছে, মিথ্যা-গায়েবী মামলা দিচ্ছে। আমাদের ছেলেরা বাড়িতে থাকতে পারে না। আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই, এভাবে মিথ্যা মামলায় বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না। আমি আবার বলছি এই গ্রেফতার বন্ধ করেন, বাড়িতে হানা দেয়া বন্ধ করেন।”


‘গণজাগরণ হলে বিদেশীরা কেউ এগিয়ে আসবে না’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে জনগন জেগে উঠেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি, দেশের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করবেন না। আমরা জানি, এই দেশের সরকার বিদেশের ওপরে টিকে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে টিকে আছে। কোনো বিদেশী এগিয়ে আসবে না যখন জনগনের সেই উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে।”


‘সরকার পতনই একমাত্র লক্ষ্য’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসন ধবংস করেছে, পার্লামেন্টকে গিলে ফেলেছে আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে এদেশের মানুষের রুটি-রুচি ব্যবস্থা করা বন্ধ করে দিয়েছে, চতুর্দিকে তারা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই এই সরকারের পতন। কারণ এই সরকার পতনের মধ্য দিয়ে একটা নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। নির্বাচন একটা ভালোভাবে হবে যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগন তাদের ভোট দিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।”


নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিতসায় পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ ও পথযাত্রা হয়।


গত ৮ আগস্ট থেকে অসুস্থ হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন।


খালেদা জিয়ার প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের এই পদযাত্রাটি নয়া পল্টন থেকে শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মগবাজারে মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।


স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আনন্দ বাজার পত্রিকায় এসেছে.. কোন জায়গার পত্রিকা এটা? ভারতের। তারা বলছেন, আজকে মোদি সরকার বলছেন যে, হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া না হয় তাহলে এই উপমহাদেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে।”


‘‘ আমরা বলতে চাই, এই সমস্ত বিদেশী প্রভুদের চড়াও কথা-বার্তায় আপনাদের কোনো কা্জ হবে না। এদেশের মানুষ জেগেছে, এদেশের মানুষ রাজপথে নেমেছে। ইনশাল্লাহ এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।”


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্‌র চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ সরকারকে বলব, আমরা শান্তিপূর্ণ শান্তিপূর্ণ করতে করতে এই পর্যন্ত আসছি। আমরা দেশে অশান্তি চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ পথে হাসিনার পদত্যাগ চাই, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে গণতন্ত্র ফেরত চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষে সরকার চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সংসদ বিলুপ্ত চাই।”


‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি আপোষহীন হয় নিশ্চয় তার আপোষহীন কর্মী আমরা প্রতিটি মানুষ। আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির শেষে যদি কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তা মোকাবিলার করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।”


ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বক্তব্য রাথেন।


পদযাত্রায় বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আতাউর রহমান ঢালী, আব্দুল কুদ্দুস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, নাজিম উদ্দিন আলম, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আশরাফ উদ্দিন বকুল, রাকিবুল ইসলাম বকুল প্রমূখ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।


শেয়ার করুন